• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

দেড় মাসে চাঁদপুর জেলায় কোভিড-১৯-এর সার্বিক চিত্র

২৪০ নমুনার রিপোর্টে আক্রান্ত ১৪ মারা গেছে ২, পূর্ণাঙ্গ সুস্থ হয়েছে ২

প্রকাশ:  ২৬ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে চাঁদপুর জেলা এখন লকডাউন অবস্থায় আছে। গত ৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসক চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন। আর সেদিন রাতেই মতলব উত্তর উপজেলার জামাতা সুজন নামে এক যুবক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আসে। অর্থাৎ এই লোকের কোভিড-১৯ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এটাই চাঁদপুর জেলায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী। অবশ্য সুজন সুস্থ হয়ে ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরেছেন।

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া থেকে এ পর্যন্ত (প্রায় দেড় মাস) চাঁদপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মোট ১৪ জন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গতকাল সর্বশেষ পাওয়া এ তথ্য। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আরো জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলো কি না এমন বিষয়টি নিশ্চিত হতে চাঁদপুর জেলা থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত মোট ২৬১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্যে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ২৪০ জনের। রিপোর্ট প্রাপ্তির অপেক্ষায় আছে ২১টি। ২৪০ রিপোর্টের মধ্যে ১৪ জন কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এই ১৪ জনের মধ্যে দুইজন এই ভাইরাসটি বহন করেই মারা গেছেন। মৃত্যুর পর রিপোর্ট আসে তাদের কোভিড-১৯ পজিটিভ। মারা যাওয়া এই দুজন হচ্ছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের উত্তর কামরাঙ্গা গ্রামের জামাতা ফয়সাল আহমেদ (৩২) এবং ফরিদগঞ্জের পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের কিশোরী শারমিন (১৪)। এদের মধ্যে ফয়সাল নারায়ণগঞ্জ থেকেই করোনার উপসর্গ নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসেন এবং এ অবস্থায়ই শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। ১১ দিনের মাথায় ১১ এপ্রিল ফয়সাল শ্বশুর বাড়িতেই মারা যান। রোগ গোপন রাখায় বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায়ই ফয়সাল মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলায়। এদিকে ফয়সাল থেকে সংক্রমিত হয়ে তার শ্বশুর পরিবারের আরো দু'জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরা হচ্ছেন তার শ্বশুর ও শ্যালিকা। শ্বশুর বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর শ্যালিকার চিকিৎসা বাড়িতেই করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে মারা যাওয়া অপরজন শারমিন ২২ এপ্রিল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আসলে তাকে কর্মরত চিকিৎসক এ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করেন। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে শারমিন মারা যায়। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়। গতকাল তার পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এ রোগীর ক্ষেত্রেও বুঝা যাচ্ছে তার পরিবারের লোকজন তার রোগটি লুকিয়ে রেখে অনেক দেরি করে অর্থাৎ শেষ সময়ে হাসপাতালে এনেছে। যার কারণে চিকিৎসারও তেমন সুযোগ পায় নি।

অপরদিকে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে আরএমও ডাঃ মেহেদী হাসান এবং এ জেলার প্রথম করোনা রোগী সুজন ঢাকা কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আরো জানা গেছে, মার্চ মাসের শুরু থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চাঁদপুর জেলায় বিদেশ ফেরতদের তালিকা করা শুরু হয়। আর তখন থেকেই বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়। এরপর যোগ হয় দেশের শীর্ষ আক্রান্ত জেলা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর চলে আসা লোকদের চিহ্নিত করা এবং তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা। সবমিলিয়ে চাঁদপুর জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলো ৩ হাজার ৪শ' ৩৮ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে ৬শ' ৭১ জন। অন্যরা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে মুক্ত হয়ে গেছেন।

এদিকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলার হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি ছিলো মোট ২০ জন। এদের মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৩ জন। অন্যরা (মারা যাওয়া শারমিন ছাড়া) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।