• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

পুলিশ সুপারের ত্বরিৎ পদক্ষেপ

স্মার্টকার্ড বিতরণের সুযোগে গ্রামীণফোন কোম্পানীর বড় ধরনের প্রতারণা

প্রকাশ:  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্টকার্ড বিতরণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের প্রতারণা করছে গ্রামীণফোন কোম্পানীর চাঁদপুরের ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃপক্ষ। তারা স্মার্টকার্ড বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে বসে যারা কার্ডের জন্যে আসছে তাদের আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছে। তারা বিশেষ করে নারী এবং সাধারণ অসচেতন মানুষদের আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছে। কী কারণে নিচ্ছে, কেনো নিচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। তারা কোনো সিমও তখন বিক্রি করছে না। তাদের এ কাজে নির্বাচন অফিসের দায়িত্বরত লোকজন বাধা দিতে গেলে তাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকিসহ নাজেহাল করে। গতকাল মঙ্গলবার এমন একটি ঘটনা পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হলে তিনি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আটক করে। পরে ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ‘তারা আর এ কাজ করবে না’ মর্মে কথা দিলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
    ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চাঁদপুর শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক নির্দিষ্ট কেন্দ্রে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার ক’দিন পর থেকে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে গ্রামীণফোন কোম্পানীর কিছু কর্মী চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে থাকেন এবং যারা স্মার্টকার্ডের জন্যে আসেন তাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশের আগেই ডেকে ডেকে আঙ্গুলের ছাপ রাখছেন। বিশেষ করে নারী এবং অসচেতন সাধারণ মানুষদের থেকে এভাবে আঙ্গুলের ছাপ রাখা হয়। তারা মনে করতেন এটি স্মার্টকার্ডের জন্যই নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া গ্রামীণফোনের ওই কর্মীরাও তখন কাউকে স্মার্টকার্ডের জন্যে আবার কাউকে সিম কার্ড বিক্রির জন্যে আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হচ্ছে বলে থাকেন। কিন্তু পরে কেউ কেউ সিম কার্ড চাইলে তখন কোম্পানীর ওই কর্মীরা বলে যে, ‘আপনার আঙ্গুলের ছাপ ঠিকমতো হয়নি, তাই সিমকার্ড দেয়া যাবে না।’
    এমন কিছু ঘটনা ঘটার পর কেন্দ্রে যারা স্মার্টকার্ড বিতরণ কাজের সাথে নিয়োজিত রয়েছেন, বিষয়টি তাদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা কেন্দ্রের বাইরে এসে গ্রামীণফোন কর্মীদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান এবং এটি করা যাবে না বলে তাদেরকে জানিয়ে দেন। আর তখনই তারা নির্বাচন অফিসের লোকজনের উপর চড়াও হয় এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেন। স্মার্টকার্ড বিতরণ কাজের সাথে সম্পৃক্ত একজন জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর পৌরসভর ৮নং ওয়ার্ডের স্মার্টকার্ড বিতরণ কাজ  চলছিলো হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন কার্ড নেয়ার জন্যে আসা এক নারীকে আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার জন্যে বললে তিনি তখন বললেন, আঙ্গুলের ছাপ তো একবার দিলাম বাইরে, তখন তারা বললো স্মার্টকার্ডের জন্যে এই আঙ্গুলের ছাপ। এভাবে আরো কয়েকজন বললে তখন আমরা কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে দেখি গ্রামীণফোন কোম্পানীর কিছু লোক স্মার্ট কার্ডের জন্যে আসা লোকজনের আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছে। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তখন তারা জানায় সিম বিক্রির জন্যে তারা ছাপ নিচ্ছে। কিন্তু কারো কাছে সিম বিক্রির করতে দেখা গেলো না। তখন তাদেরকে এ কাজটি করতে নিষেধ করা হয়। এরপর তারা আমার উপর চড়াও হয় এবং দেখে নিতে বলে হুমকি দেয়। আমি বিষয়টি আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানাই।
    একই ঘটনা গতকাল মঙ্গলবার পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ডের স্মার্টকার্ড বিতরণ করাকালে ঘটে। চাঁদপুর গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল স্কুলে এ বিতরণ কার্যক্রম চলে। এখানেও গ্রামীণফোনের কিছু কর্মী পূর্বের ন্যায় কেন্দ্রের বাইরে বসে কার্ড নিতে আসা লোকজনের আঙ্গুলের ছাপ নিতে থাকে। বিষয়টি আবারো স্মার্টকার্ড বিতরণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নজরে আসলে তারা এদিনও পূর্বের ন্যায় নিষেধ করে। কিন্তু গ্রামীণফোনের কর্মীরা কোনো নিষেধ না শোনায় সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি পুলিশ সুপার মোঃ জিহাদুল কবির পিপিএমকে জানান। তিনি তাৎক্ষণিক ডিবি পুলিশের একটি টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ডিবি পুলিশ এসে গ্রামীণফোনের দু’জনকে এসপি অফিসে নিয়ে যান। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়।
    এ বিষয়ে গতকাল রাতে এ প্রতিবেদক পুলিশ সুপারের কাছে জানাতে চাইলে তিনি জানান, আমার কাছে এ ধরনের একটি অভিযোগ আসলে আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ডিবি পুলিশ পাঠাই। ডিবি পুলিশ দু’জনকে আমার অফিসে নিয়ে আসে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানায়, তারা সেখানে সিম বিক্রির জন্যে আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছেলো। তারপর তাদের ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তিনিও জানান, এটা তাদের ব্যবসায়িক কাজের একটি অংশ। কিন্তু তারপরও বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় আর এ কাজটি না করার জন্যে বলা হয়। তারা আর করবে না কথা দিলে ওই দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
    এ বিষয় সম্পর্কে আরো বিশদভাবে জানার জন্যে গতকাল রাতে চাঁদপুর গ্রামীণফোনের ম্যানেজারের মোবাইল ফোনে (০১৭৮৭৬২৬৩৬৪) এ প্রতিবেদক ফোন করেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে ফোনে কোনো কথা বলবেন না, অফিসে গিয়ে সরাসরি কথা বলতে বলেন। এরপরও তাকে এ প্রতিবেদক কয়েকবার অনুরোধ করেন বিষয়টি জানার ব্যাপারে। কিন্তু তিনি তার কথায় অনড়। তখন এ প্রতিবেদক তাকে বললেন, আমার তো এখনই বিষয়টি জানা প্রয়োজন, আর এখন তো আমার অফিসের কাজ ফেলে রেখে আপনার অফিসে যেতে পারবো না, ফোনে বলতে সমস্যা কী? তখন তিনি বলেন, এখন না আসতে পারলে কালকে দিনে আসেন।
    এখন প্রশ্ন হচ্ছে-এ বিষয়ে যদি তাদের স্বচ্ছতাই থাকতো এবং শুধুমাত্র সিম বিক্রির উদ্দেশ্যই থাকতো তাহলে একজন সংবাদকর্মীকে ফোনে এ কথা বলতে সমস্যা কী ছিলো। এদিকে গ্রামীণফোন চাঁদপুর ডিস্ট্রিবিউটর কর্তৃপক্ষের এমন রহস্যজনক কাজের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, অসাধু উদ্দেশ্যেই এ কাজটি করা হয়। অর্থাৎ আঙ্গুলের ছাপ রেখে সিমগুলো একটিভ করা হয়। পরে এগুলো অবৈধ পন্থায় বিক্রি করা হয়। যে সিম দ্বারা অপরাধীরা অপরাধ কর্মকা- করে নিজেরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। কারণ, সিম তো রেজিস্ট্রেশন হয়ে আছে অন্যের নামে। উল্লেখ্য, চাঁদপুরে গ্রামীণফোনের ডিস্ট্রিবিউটর হচ্ছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাটওয়ারী।

সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ

 

সর্বাধিক পঠিত