• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

১০ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০১৮ ফাইনাল

জেলায় চ্যাম্পিয়ন চাঁদপুর সরকারি কলেজ, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উবি ও উত্তর শ্রীরামদী সপ্রাবি

রানার্সআপ চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, হাসান আলী সরকারি উবি ও রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন

প্রকাশ:  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০৪
মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ॥
প্রিন্ট

১০ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চাঁদপুর জেলায় এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চাঁদপুর সরকারি কলেজ (কলেজ পর্যায়), মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়) ও উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (প্রাথমিক স্কুল পর্যায়)। এ তিনটি দল প্রতিযোগিতার উল্লাস তথা ফাইনাল পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করে। আর রানার্সআপ হয়েছে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন।
এ তিন শ্রেণির ফাইনালের প্রতিটি পর্বই অত্যন্ত জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। টানটান উত্তেজনা নিয়ে ফাইনালের বিতর্ক শুরু হয়ে উত্তেজনা অব্যাহত রেখেই বিতর্ক প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। তিনটি বিতর্কের মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জিতেছে চাঁদপুর সরকারি কলেজ। কলেজ পর্বের বিতর্কে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মাত্র ১০.৫ নাম্বারের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়। অপরদিকে  মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় জিতেছে ২৩ নাম্বারের ব্যবধানে। প্রাথমিক স্কুল পর্বের বিতর্কটি বিচারকসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খুদে বিতার্কিকদের এ লড়াইয়ে বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে ব্যবধান ছিলো ১৭ নাম্বার।
তবে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে স্কুল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবারসহ মোট ৪বার এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। অন্যদিকে কলেজ পর্যায়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজ এ নিয়ে ৩বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জিতে মধুর প্রতিশোধ নিলো চাঁদপুর সরকারি কলেজ বিতর্ক দল। কেননা ২০১৭ সালের ফাইনালে চাঁদপুর সরকারি কলেজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ। তবে চ্যাম্পিয়ন না হলেও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অর্জন কম নয়। এ পর্যন্ত ১ বার চ্যাম্পিয়নসহ ২ বার এ কলেজটি রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ প্রতিযোগিতার উল্লাস তথা ফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজনে ও চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ)’র ব্যবস্থাপনায় ১০ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উল্লাস তথা ফাইনাল পর্বটি ছিলো অত্যন্ত উৎসবমুখর ও আড়ম্বরপূর্ণ।
এ উপলক্ষে পুরো শিল্পকলা একাডেমিকে সাজানো হয়েছে ব্যতিক্রমী সাজে। প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনি এমপি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ পর্বের বিতর্কটি দেখে মুগ্ধ হন। পরে তিনি তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে বিতার্কিকদের অভিনন্দন জানান এবং আগামীতে এ প্রতিযোগিতায় তাঁর পক্ষ থেকে ১০ জন কৃতী বিতার্কিককে বৃত্তি প্রদান করার আশ^াস প্রদান করেন। তিনি বিতর্কে বৃত্তিপ্রাপ্ত সাতজন কৃতী বিতার্কিককে বৃত্তি প্রদান ও প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে ডাঃ দীপু মনিকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
    সকাল ৮টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালীর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ১০ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উল্লাস তথা ফাইনাল পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। র‌্যালী শেষে বিতর্ক মঞ্চে সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধন করেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ¦ অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মির্জা জাকির। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওঃ আবদুর রহমান গাজী ও গীতা পাঠ করেন বিতার্কিক আনন্দ লোধ। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। উদ্বোধনী পর্বের পর প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্বের বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বের বিতর্কের বিষয় ছিলো ‘কেবল মেধাই সাফল্যের জন্যে যথেষ্ট নয়’। বিষয়ের পক্ষে ছিলো চাঁদপুর রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন। আর বিপক্ষে ছিলো উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পক্ষ দলের বিতার্কিকরা হচ্ছে নূরে সামিয়া, ছাদিয়া আক্তার ও ওয়ারিয়া বিনতে কামরুল (দলপ্রধান)। বিপক্ষ দলের বিতার্কিকরা হচ্ছে আফসানা আক্তার সূচনা, আমেনা আক্তার ও তাসফিয়া সুলতানা (দলপ্রধান)। উভয় দল তত্ত্ব ও তথ্যপূর্ণ বক্তব্য, যুক্তি, পাল্টা যুক্তি ও যুক্তি খ-নের মধ্য দিয়ে পুরো বিতর্ক পর্বটি মাতিয়ে তোলে। এ পর্বের চ্যাম্পিয়ন দল উত্তর শ্রীরামদী সপ্রাবি ২৩৭.৫ নম্বর পেয়ে বিজয়ী হয়। আর রানার্সআপ দল চাঁদপুর রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন পেয়েছে ২২০.৫ নম্বর।  শ্রেষ্ঠ বক্তা যৌথভাবে নির্বাচিত হয় রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনের দলপ্রধান ওয়ারিয়া বিনতে কামরুল ও উত্তর শ্রীরামদী সপ্রাবির দলপ্রধান তাসফিয়া সুলতানা। এ পর্বের বিচারক ছিলেন ........
সভাপ্রধান ছিলেন হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমত আরা সাফি বন্যা।   
মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের বিতর্কের বিষয় হলো ‘চাঁদপুরের উন্নয়ন শিল্পে নয়, পর্যটন নির্ভর’। পক্ষ দল ছিলো মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বিপক্ষ দল ছিলো হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। পক্ষ দলের বক্তারা হলো ইফফাত আরা জাহান অহনা, তাসনিয়া ইসলাম ও সালমা আক্তার নিপা (দলপ্রধান)। বিপক্ষ দলের বক্তারা হলো মাশরুর রহমান, আনন্দ লোধ ও মোঃ তাওহিদুর রহমান (দলপ্রধান)। এ পর্বে চ্যাম্পিয়ন দল মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উবি পেয়েছে ২৬৩.৫ নম্বর। রানার্সআপ দল হাসান আলী সরকারি উবি পেয়েছে ২৪০.৫ নম্বর। শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উবির দলপ্রধান সালমা আক্তার নিপা। এ পর্বের বিচারক ছিলেন এএইচএম আহসান উল্লাহ, অধ্যাপক আবুল কালাম ও হাবিবুর রহমান পাটওয়ারী। সভাপ্রধান ছিলেন সিকেডিএফ-এর সহ-সভাপতি সামীম আহমেদ খান।

কলেজ পর্যায়ের বিতর্কের বিষয় ছিলো ‘আজকের কবিদের চেয়ে আগেকার কবিরাই অধিকতর পাঠকনন্দিত’। পক্ষ দল ছিলো চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ ও বিপক্ষে ছিলো চাঁদপুর সরকারি কলেজ ‘গ’ দল। পক্ষ দলের বিতার্কিকরা হচ্ছে লুৎফুন নাহার লিজা, মারিয়া জাহান ও হুমায়রা আহমেদ নিসা (দলপ্রধান)। বিপক্ষ দলের বিতার্কিকরা হচ্ছে রাবেয়া আক্তার, ফাতেমা আহমেদ তন্বী ও ভিভিয়ান ঘোষ (দলপ্রধান)। এ পর্বটি উভয় দলের যুক্তি ও তথ্যপূর্ণ বক্তব্যে অত্যন্ত জমজমাট হয়। ডাঃ দীপু মনি এমপি এ বিতর্কটি খুবই আগ্রহ ভরে উপভোগ করেন। এ পর্বে চ্যাম্পিয়ন দল চাঁদপুর সরকারি কলেজ পেয়েছে ২৬৯ নম্বর। আর রানার্সআপ দল চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ পেয়েছে ২৫৮.৫ নম্বর।  শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছেন বিজয়ী হলের দলপ্রধান ভিভিয়ান ঘোষ। এ পর্বে সভাপ্রধান ছিলেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির অধ্যক্ষ ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া। এ পর্বের বিচারক ছিলেন টিআইবি-চাঁদপুরের এরিয়া ম্যানেজার মাসুদ রানা, অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম....।
ফাইনালে মডারেটর ছিলেন সিকেডিএফ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আরিফ হোসেন, নির্বাহী সদস্য আবু সালেহ ও শামীম হাসান। সময় নিয়ন্ত্রক ছিলেন জায়েদুর রহমান নিরব.... ও কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন। পুরো বিতর্ক পর্বটি পরিচালনা করেন চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমির উপাধ্যক্ষ কৃতী বিতার্কিক রাসেল হাসান।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্বের বিতর্ক শেষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন এক সময়ে দেশের সেরা বিতার্কিক, বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি। এ পর্বে সভাপ্রধান ছিলেন পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার টাইটেল স্পন্সর, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়ক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শওকত ওসমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মোঃ মিজানুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ¦ অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার। পুরো উল্লাস পর্বের আলোচনা পর্ব উপস্থাপন করেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ও সিকেডিএফ’র সভাপতি কাজী শাহাদাত। ফলাফল ঘোষণা করেন সিকেডিএফ-এর সাধারণ সম্পাদক রাজন চন্দ্র দে।
অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান, বিচারক, প্রতিশ্রুতিশীল বিতার্কিক, দায়িত্বপ্রাপ্ত নিষ্ঠাবান শিক্ষক ও বিতর্ক আয়োজন সহযোগীদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এরপর অতিথিদের কাছ থেকে চ্যাম্পিয়ন দল, রানার্সআপ দল এবং শ্রেষ্ঠ বিতার্কিকরা পুরস্কার গ্রহণ করেন। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলের বিতার্কিকদের ব্যাজ পরিয়ে দেন ইনার হুইল ক্লাবের নারী নেত্রীরা।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলগুলোকে নগদ ১৮ হাজার টাকা, প্রায় ৩০ হাজার টাকা মূল্যের বই ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। আর রানার্সআপ দলকে নগদ ৯ হাজার টাকা, ২৪ হাজার টাকা মূল্যের বই ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজনে ২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছর পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা জেলাব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ)। এবারের প্রতিযোগিতায় জেলার মোট দেড়শ’টি দল (মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ থেকে) অংশ নেয়।