• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ডাকাতিয়ার ওপর নির্মিণাধীন হাজীগঞ্জ বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল সেতু নির্মাণে আরো ১ বছর লাগবে

সেতুটি জুলাইর মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও ১ বছরে উঠেছে মাত্র কয়েকটি পিলার

প্রকাশ:  ০৩ জুলাই ২০১৮, ২১:৫৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

প্রায় সাড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিণাধীন হাজীগঞ্জের বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল সেতুর নির্মাণ কাজ গত ১ বছরে মাত্র কয়েকটি পিলার নির্মাণ ছাড়া আর কোনো কাজই হয়নি। কার্যাদেশ পাওয়ার ১ বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করা থাকলেও মূল পিলার এখনো করা শেষ হয়নি। অথচ কাজের সময় শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ২০ তারিখে। ডাকাতিয়ার ওপর নির্মিত এই সেতুর নির্মাণ শেষে যান চলাচলের জন্যে আরো পুরো ১ বছর সময় লাগবে বলে সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চাঁদপুর কণ্ঠকে জানিয়েছেন।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার ১৪ টাকা ৬৭ পয়সা। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নামে হাজীগঞ্জ-বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল (পূর্ব) ইউপি (কুমিল্লা-চাঁদপুর-আর এন্ড এইচ টোরাগড় সেন্দ্রা পালিশারা) সড়ক সেতুটি তৈরি হচ্ছে। ৮১০ মিটার চেইনেজে ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২৬৬.৩০ মিটার (সংশোধিত ২৫০.২০ মিঃ) দীর্ঘ ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প যার প্যাকেজ পিডি/সিএলবিইউইউআরপি/ডবিস্নউ-১৯৮, যার দৈর্ঘ্য ২৫০.২০ মিটার (৮২০ ফুট ১১ ইঞ্চি)। কাজ শুরুর তারিখ ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আর কাজ সমাপ্তির তারিখ ২০১৮ সালের ২০ জুলাই। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুরমা-আরবিএল (জয়েন্ট ভেঞ্চার)। স্থানীয়ভাবে সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজীগঞ্জ পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজের পূর্ব পাশের সড়ক ধরে টোরাগড় হয়ে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নসহ তৎসংলগ্ন অঞ্চলে যেতে হলে ডাকাতিয়া নদী পার হতে হয়। ডাকাতিয়া নদীর ঠিক এই অংশে একটি সেতু নির্মাণের জন্যে বড়কুল ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শীর্ষকর্তা মরহুম হাসমত উল্যাহ হাসু জীবদ্দশায় দীর্ঘদিন দৌড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত চাঁদপুর-৫ নির্বাচনী এলাকার ৩ বারের নির্বাচিত সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলামী বীর উত্তম নিজ প্রচেষ্টায় ডাকাতিয়ার ওপর নির্মিত ৭ম সেতু বড়কুল এলাকায় (হাজীগঞ্জ-বড়কুল ফেরিঘাট-বড়কুল) নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন গত বছর। এরপর থেকেই এই সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।

 


স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, এই সেতু দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হলে এটি ব্যবহার করে উপজেলার ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন, ৯নং গন্ধর্ব্যপুর উত্তর, ১০নং গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ, শাহরাস্তি এলাকার কিছু অংশ ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার একাংশেরসহ কয়েক লাখ লোক সেতুটি ব্যবহার করে সময় বাঁচিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারসহ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে উঠতে পারবে। তবে সেতুর কাজ চলছে ধীরে ধীরে। উভয় অংশে কয়েকটি পিলার তৈরি করা হয়েছেমাত্র। নদীর উপর প্রধান পিলার এখনো করা হয়নি আর দুই পাশের কাজ এখনো শুরুই হয়নি।

 


সেতুর উত্তর অংশ অর্থাৎ টোরগড় এলাকায় সেতু নির্মাণে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এমন একজন স্থানীয় মেন্দু মিয়া (৫৫) চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, এই সেতু নির্মাণে আমার বাড়ি ও ফসলি জমি নিয়ে প্রায় ১৬ শতক জমি চলে গেছে। মৌজা দরের চেয়ে ৩ গুণ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন এমন বিষয়টি স্বীকার করে মেন্দু মিয়া বলেন, এখনো টাকা হাতে পাইনি, যেদিন পাবো সেদিন বুঝবো। আর আমার যে পৈত্রিক সম্পত্তি খোয়ালাম সেটা কে দেখবে? একই সুরে কথা বললেন, স্থানীয় আরেক বয়োবৃদ্ধ জিন্নাত আলী।

 


গতকাল সোমবার সেতু নির্মাণ এলাকায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আঃ আউয়াল চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, নদী শাসনসহ সেতু নির্মাণ আর কাজের উদ্বোধন করতে আরো ১ বছর লাগবে। তবে ইতিমধ্যে আমাদের কাজ ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। অপর এক প্রশ্নে এ প্রকৌশলী বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার প্রথম ৬ মাস অতিবাহিত করতে হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায়। এর মধ্যে এলজিইডি নির্মিত সেতুর জন্যে জমি অধিগ্রহণ করার নিয়ম নেই। কিন্তু এখানকার জমির মালিকগণের মামলার কারণে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে মৌজা দামের চেয়ে ৩ গুণ বেশি দিয়ে। পল্লী বিদ্যুতের লাইনের কারণে কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি, বর্ষা মৌসুমে কাজ শুরুসহ নানান জটিলতা সমাধান করে কাজ করতে হচ্ছে।

 


এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মোঃ শাহজাহান চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, ঠিকাদারী ওই ফার্ম আরো ৬ মাস বাড়ানোর প্রক্রিয়া করছে। তবে ওই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব না হলে আরো সময় নেয়ার বিধান রয়েছে। ঠিকাদারী সংস্থা সেতু নির্মাণ কাজের আরো ১ বছর লাগবে এমন কথার বাস্তবতা কি ঠিক? এমন প্রশ্নে এই প্রকৌশলী আরো বলেন, এমনটা লাগতে পারে।

সূত্র : চাঁদপুর কণ্ঠ।