• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নৈতিক স্খলনে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমিরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করলো জামায়াত

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৪০ | আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ২১:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

নৈতিক স্খলনের অভিযোগে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আতাউর রহমানকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে জামায়াতের মজলিসে শুরা। সারা দেশে অঞ্চলভেদে অনুষ্ঠিত মজলিসে শুরার বৈঠকগুলো থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও ফেনী জেলা আমির একে এম শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি শুনেছি। তিনি অব্যাহতিপত্র দিয়েছিলেন, সেটি অনুমোদন করা হয়েছে।

জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, কেন্দ্র থেকে আতাউর রহমানের বহিষ্কারের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চাইলে সারাদেশের শুরার সদস্যরা তা অনুমোদন করেন।

প্রসঙ্গত, আতাউর রহমানের মেয়ের জামাতা হচ্ছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

মজলিসে শুরার একটি সূত্রের দাবি, আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে একজন নারীকে কেন্দ্র করে। গত ৪ জুলাই সকালে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাশেদা বেগম রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির হয়ে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। 

বাদী রাশেদা বেগম অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল আতাউর রহমানের সঙ্গে দুই লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তার বিয়ে হয়। নগরের রাজপাড়া থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিবাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী আবদুস সাত্তারের কাছে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের কাবিন (নম্বর ০৬/২০১৬) হয়। এরপর তারা গোপনে বসবাসও করেন। পরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে তিনি প্রকাশ্য হন, কিন্তু তাকে স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করেন। তিনি কাবিননামা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে দেনদরবার করলে উল্টো তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, একপর্যায়ে আতাউর রহমান দাবি করেন, তার সঙ্গে ঘর-সংসার করতে হলে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দিতে হবে। সর্বশেষ গত ২ জুন ভাইদের নিয়ে রশিদা বেগম শহরের তেরখাদিয়া এলাকায় আতাউর রহমানের বাড়িতে যান। কিন্তু আতাউর রহমান তাকে ঘরে তুলে নেননি।

ওই মামলা নিয়ে আতাউর রহমান প্রকাশ্যে কথা বলার পর তাকে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে চুপ থাকতে বলা হয়। যদিও তিনি এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের পরামর্শ না শুনে মামলার বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপরই বিষয়টিকে সিরিয়াসভাবে নেন জামায়াতের নীতি-নির্ধারকরা। সাংগঠনিকভাবে নীতি ও নৈতিকতা নিয়ে কঠোর অবস্থান থাকায় তাকে শেষপর্যন্ত দল থেকে বাদই দেওয়া হলো।

মজলিসে শুরার আরেকটি সূত্র জানায়, আতাউর রহমান জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতা ও দলের অর্থের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উচ্চকিত থাকায় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। তবে দলীয় কঠোর নির্দেশনার কারণে দলে দৃশ্যত কোনও আলোচনা নেই।

আতাউর রহমানের বহিষ্কারে জামায়াতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, এমন প্রশ্নে মজলিসে শুরার একাধিক সদস্য জানান, আতাউর রহমান জামায়াতের পুরনো দায়িত্বশীল। পরীক্ষিত নেতা। পুরো রাজশাহীতে তার প্রভাব অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। তবে অনেকটা নীরবে আতাউর রহমান পর্বের ইতি ঘটাতে চাইছে জামায়াত।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমিরের পদ থেকে আতাউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই সময় দলীয় সূত্রের ভাষ্য ছিল, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

দলটির একটি সূত্রের ভাষ্য, আশির দশকে নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রহিমকে মতবিরোধের কারণে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন গোলাম আযম। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাচ্চুকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল বলে একটি সূত্রের দাবি। 

জামায়াতের ঢাকা মহানগরের দায়িত্বশীল ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য  বলেন, আতাউর রহমানকে চুপচাপ শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি শোনেননি। এ কারণেই তাকে বহিষ্কার করতে হলো। তিনি রুকন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য  ও নায়েবে আমির ছিলেন। 

সূত্রমতে, সরাসরি বহিষ্কারপত্র না দিয়ে আতাউর রহমানের কাছ থেকে অব্যাহতিপত্র আদায় করেছে জামায়াত। আর তার অব্যাহতিপত্রটি ব্যাখ্যাসহ শুরা সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আতাউর রহমান প্রথমে পদত্যাগপত্র দিতে চাননি। শেষপর্যন্ত চাপে পড়ে জমা দিয়েছেন বলেও সূত্র দাবি করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মজলিসে শুরার সদস্য ও সিলেট জেলা দক্ষিণের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা দূরে-দূরে থাকি। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য নির্বাহী কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে।

সর্বাধিক পঠিত