সেই ওকাম্পো দুর্নীতিবাজ, আমি নির্দোষ: সৈয়দ আবুল হোসেন
সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান লুইস মোরেনো ওকাম্পোর নেতিবাচক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায়। অথচ ওকাম্পো আজ বিশ্বের বড় দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত। ওকাম্পোর দুর্নীতির চল্লিশ হাজার নথি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি আবুল হোসেন বলেন, ‘ওকাম্পোর নেতিবাচক প্রতিবেদন পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশকে বিতর্কিত ও সমালোচিত করেছে। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই দুর্নীতিবাজ ওকাম্পোর পরামর্শেই বিশ্বব্যাংক গ্লোবাল সার্চ করে আমার সম্পর্কে কোনো অনিয়ম পায়নি। বিশ্বব্যাংক আজ পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করতে না পেরে বিশ্বব্যাপী লজ্জিত। আমার কাছে অনুতপ্ত। সেই উদ্ধতবাদী ওকাম্পো আজ বিশ্বব্যাপী নিন্দিত ও বিতর্কিত। তার সঙ্গে বাংলাদেশের দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বৈঠক করে তার অপচেষ্টার সাথী হয়েছিলেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আজ সত্য প্রকাশিত হয়েছে। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি।’
বিবৃতিতে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘ওকাম্পোর প্রতিবেদনে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশংকায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে যায়। ঠুনকো অজুহাতে বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। পদ্মা সেতুর স্বার্থে আমি পদত্যাগ করার পরও বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে এগিয়ে আসেনি। এটা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতুতে ঋণ দেয়নি। প্রস্তুতিপর্বে দুনীতির ষড়যন্ত্রের আশংকা ছিল অমূলক, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, বায়বীয় এবং উদ্দেশ্যমূলক। পরবর্তীতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের বাংলাদেশের আদালত নির্দোষ বলে রায় দেয়। কানাডার আদালতে একই অভিযোগের মামলায় প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে রায় দেয়, গাল-গল্প বলে রায় দেয়।’
‘আমি কোনো অন্যায় ও অসত্যের সঙ্গে কখনো আপস করিনি। বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল সার্চ ও দুদকের নিবিড় তদন্ত আমার সম্পর্কে কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি যা তার প্রমাণ।’
পদ্মা সেতুর কাজ আমি এগিয়ে নিয়েছিলাম উল্লেখ করে আবুল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর কোনো প্লান ছিল না। চূড়ান্ত ডিজাইন ছিল না। অর্থের সংস্থান ছিল না। কোনো দাতা সংস্থার কটিমেন্ট ছিল না। দুই বছরে প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগও চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলাম। সেই ঠিকাদারই এখন পদ্মা সেতু তৈরী করছে। পদ্মা সেতুর কাজ যেভাবে আমি এগিয়ে নিয়েছিলাম তাতে সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু হতো। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি কাজ করতে যেখানে ১০ বছর লেগেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদ্মা সেতুর সে পর্যায়ের কাজ আমি দুই বছরে শেষ করেছি। বিশ্বব্যাংক ও দেশীয় স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে ২০১৩ সালে পদ্মা সেতুর চালু হওয়া বন্ধ করেছে। বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নে এটি একটি বিরাট বাধা হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।’
শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছেন। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে তিনি এই দৃঢ়চেতা ও স্বাধীনভাবে রাষ্ট্রনায়োকিচিত সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন। আজ বাস্তবায়ন বিলম্বিত হলেও পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অহংকার ও গর্ব।’
আমি মনে করি, ওকাম্পোর মতো বাংলাদেশের ষড়যন্ত্রকারীরাও একদিন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন আবুল হোসেন।