যেসব প্রস্তাবনা নিয়ে ইসিতে যাচ্ছে বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র কর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রজনৈতিক দলের সংলাপ চললেও সবার নজর থাকছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে ঘিরেই। বিশেষ দল দুটির পক্ষ থেকে কি ধরণের প্রস্তাব তুলে ধরা হবে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। আগামী ১৫ অক্টোবর বিকেলে বিএনপির সাথে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ক্রমেই জোরদার করছে বিএনপি। তবে এ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয় সে জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব তৈরি করছে দলটি। ১৫ অক্টবর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপকালে লিখিতভাবে এসব প্রস্তাব তুলে ধরবে বিএনপি।
সূত্র মতে, সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দিতে ইতোমধ্যেই বিএনপি যেসব প্রস্তাব তৈরি করেছে তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করা, নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ অর্থাৎ অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে সেভাবে সীমানা নির্ধারণ করা, সবার জন্য সমান সুযোগ অর্থাৎ লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখা, নির্বাচনের অন্তত এক মাস আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের সকল স্তরে রদবদল করা, আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন, প্রিসাইডিং অফিসারসহ ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনরত সকল কর্মকর্তাকে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা প্রদান, ভোট কেন্দ্রে সকল প্রার্থীর এজেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্য ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের অবাধ সুযোগ রাখা, রাজনৈতিক দলের নেতাদের মামলার নামে হয়রানি না করা।
নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনায় কি প্রস্তাবনা নিয়ে যাচ্ছে বিএনপি, এব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু পূর্বপশ্চিমকে বলেন, প্রস্তাবনা হলো একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন । সকলে যাতে স্বাচ্ছন্দে নির্বাচন করতে পারে। যদিও এই নির্বাচন কমিশন আলোচনা করছেন ,কিন্তু তিনি আলোচনার আগেই বলে দিয়েছেন তিন মাস আগে তারা উদ্যোগ নিবে । সহায়ক সরকার বলতে আমারা যেটা বলেছি সেটা ম্যাডাম আসলে ঘোষণা করা হবে । আর তিনি (সিইসি) কিভাবে নির্বাচন করবেন ,সেটা ৫ জানুয়ারির,২০১৪ এর মত প্রধানমন্ত্রীর অধিনে সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে আমারা একটা প্রস্তাবনা দিবো ,তার (সিইসি) সঙ্গে আমারা আলোচনায় বসবো। তারপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশে আসার পর আমরা সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনা জাতির সামনে তুলে ধরবো।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন । ১৫ অক্টোবরের আগে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই সুতরাং তিনি দেশের বাইরে থাকায় তার অনুপস্থিতেই নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে বসবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলে জানান বিএনপির এই নেতা । তবে ঠিক কত সদস্যের বা কারা কারা যাবেন এব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত বিএনপির ক’জন সিনিয়র নেতা ও এ দল সমর্থক ক’জন বুদ্ধিজীবী মিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রস্তাব তৈরির কাজ করছেন। আর তাদের সহযোগিতা করছেন অতীতে নির্বাচন কমিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ক’জন সাবেক আমলা। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে একাধিকবার পরামর্শ করেছেন। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি সোচ্চার থাকলেও এ দাবি আদায় না হলেও যাতে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় সে লক্ষেই দলীয় প্রস্তাবগুলো তৈরি করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যাওয়ার আগেই এসব প্রস্তাব তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। এসব প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে দেয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে মিডিয়ার সামনেও তুলে ধরা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া সুত্র মাধ্যম জানা যায়, যেসব দেশে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় সেসব দেশের নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিভাবে কাজ করেন সেসব তথ্যই বিএনপি সংগ্রহ করছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেগুলো প্রযোজ্য সেগুলো পয়েন্ট আকারে লিপিবদ্ধ করতে দলীয় কিছু নেতা কাজ করছেন। নির্বাচন কশিনের কাছে দেয়ার জন্য যেসব প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে সেখানে এগুলোও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ইতোপূর্বে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছে বিএনপি। শীঘ্রই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবে দলটি। ইতোমধ্যেই দলের কিছু সিনিয়র নেতা ও জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের সহায়তায় সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রকাশের আগেই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। আর সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশের পর সারাদেশে গণসংযোগ করে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে জনমত তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন,আমরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবির পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জমা দিতে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। নির্বাচন কশিনের সঙ্গে সংলাপকালে এসব প্রস্তাব প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরা হবে।