• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সিলেটের খাদিজা এখন কেমন আছেন?

প্রকাশ:  ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:১৮ | আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ২০:০৯
সিলেট সংবাদদাতা
প্রিন্ট

সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর বর্বরোচিত হামলার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৬ সালের এই দিনে সিলেটের এমসি কলেজে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। ওই হামলার এক বছরেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি খাদিজা।

মঙ্গলবার সকালে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার হাউসা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন খাদিজা। বাঁ হাতের আঙ্গুলগুলো সোজা করতে পারেন না। বাম হাত দিয়ে কোনো কাজও করতে পারেন না। মাথায় ব্যথা লেগেই থাকে। প্রায়ই স্মৃতিবিভ্রাট ঘটে। পুরনো কথা মনে করতে পারেন না। তবু তার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন। আবার কলেজে ভর্তি হতে চান। ব্যাংকার হতে চান। নারীদের জন্য কাজ করতে চান।

গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজে ক্যম্পাসে কুপিয়ে আহত করা হয় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী খাদিজাকে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন তিনি। তাকে কুপানোর ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আদালতের রায়ে শাস্তিও হয় হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের। তবে খাদিজা এখনো ফিরে পাননি স্বাভাবিক জীবন।

নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খাদিজা বলেন, মাথায় সবসময় ব্যথা করে। এক এক সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বাঁ পা ও হাতে শক্তি পাই না। ফলে স্বাভাবিক হাঁটা চলাও করতে পারি না। ব্যথা সারানোর জন্য একটি ট্যাবলেট খেতে হয় সব সময়। তবে আগে থেকে এখন অনেক সুস্থ আছি। আশা করছি ধীরে ধীরে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠব।

খাদিজার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করেছিলেন খাদিজা বেগমের চাচা আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন খাদিজা বাঁ হাতে একটা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এজন্য ৫ লাখ টাকার মতো লাগবে। টাকা জোগাড় করতে না পারায় এখনো অস্ত্রোপচার করাতে পারছি না। আগামী মাসে অস্ত্রোপচার করানো হবে।

খাদিজার চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করে কুদ্দুস বলেন, খাদিজা যে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে, তা-ই তো ভাবিনি। তাকে যে ফিরে পেয়েছি এতেই আমরা সন্তুষ্ট। তবে এখনও তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি কাজ করে না। অনেক কিছু ভুলে যায়। তালগোল পাকিয়ে ফেলে। আজকের কথা কালকে মনে রাখতে পারে না। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, পুরো সুস্থ হতে বছর তিনেক লাগবে।

হামলাকারী বদরুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আব্দুল কুদুস বলেন, আশা করছি উচ্চ আদালতেও বদরুলের দণ্ড বহাল থাকবে।

খাদিজার চাচা কুদ্দুসের অভিযোগ, বদরুলের ভাই এখনো আমাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। বদরুলও জেলের ভেতরে খাদিজার নামে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে শুনেছি।

পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)-এর সিলেট কার্যালয়ে নিয়মিত থেরাপি নিচ্ছেন খাদিজা। ওইই সেন্টারের ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. কামরুল হাসান বলেন, খাদিজার শারীরিক উন্নতিতে আমরা খুবই আশাবাদী। দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছে খাদিজা। আশা করছি আরও মাস ছয়েকের মধ্যে সে পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে। আর হাতের আঙ্গুলগুলোর জন্য তাকে আরেকটা অস্ত্রোপচার করাতে হবে।

গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন খাদিজা বেগম নার্গিস। তিনি সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরীক্ষা শেষে বেরোনোর সময় কলেজ ক্যাম্পাসেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক (বরখাস্তকৃত) বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন খাদিজা। হামলায় তার মাথার খুলি ভেদে করে মস্তিষ্কও জখম হয়।

খাদিজাকে কোপানোর একটি ভিডিওক্লিপ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হামলার বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন সংগঠন।

হামলার পর খাদিজাকে উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ওই রাতেই নিয়ে যায় হয় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানে গত বছরের ৪ অক্টোবর বিকালে অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়।

তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন খাদিজা। তবে শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেয়ায় তাকে সাভারের সিআরপিতেও তিন মাস চিকিৎসা নিতে হয়। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন এই কলেজছাত্রী। খাদিজার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চলতি বছরের ৮ মার্চ খাদিজা বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা। রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশপাশি ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।