• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ক্ষমতায় আর ১৩ দিন

অভিশংসনের মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই সরানো জরুরি * ইমপিচের ইচ্ছা নেই বাইডেনের * শঙ্কায় ট্রাম্প, হামলা নিয়ে সুর পালটালেন

প্রকাশ:  ১০ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:০১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ ২ সপ্তাহেরও কম অবশিষ্ট রয়েছে। কিন্তু মেয়াদ শেষের আগেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিতে চাইছেন ডেমোক্র্যাটরা। এমনকি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে মত দিচ্ছেন। এছাড়া ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যও ডেমোক্র্যাটদের এমন উদ্যোগে সমর্থন দিতে পারেন। রাজনীতিবিদদের এমন প্রক্রিয়ার বাইরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ ট্রাম্পের ওপর ক্ষুব্ধ। শিগগির তার অপসারণ চাইছেন। তবে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইচ্ছা নেই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। এদিকে, ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের হামলা নিয়ে সুর পাল্টেছেন ট্রাম্প। হামলাকারীদের ‘জঘন্য আক্রমণকারী’ হিসাবে তিনি মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে তিনি নতুন প্রশাসনের হাতে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বুধবারের হামলার পর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। খবর এএফপি, সিএনএন, নিউজ ডটকম ও বিবিসির।

মার্কিন রাজনীতিবিদরা বলছেন, বুধবার কংগ্রেস ভবনে সমর্থকদের হামলার দায় ট্রাম্প এড়াতে পারেন না। এ কারণে মেয়াদের শেষ মুহূর্তে তাকে পদচ্যুত করা মার্কিন গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই জরুরি। ট্রাম্পকে সরাতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে চিঠি দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটররা। চিঠিতে তারা লিখেছেন, হামলা চালিয়ে ‘গণতন্ত্রের অবমাননা’ করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি ট্রাম্পকে এখনই অপসারণ করে ভাইস-প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা নিতে হবে।

ট্রাম্পকে অতি সত্বর অপসারণের ডাক দিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। এজন্য তিনি মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর জরুরি ব্যবহারের তাগিদ দেন। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে সাংবাদিকদের পেলোসি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যতক্ষণ হোয়াইট হাউজে বসে আছেন ততক্ষণ আমরা খুব কঠিন অবস্থায় আছি। তিনি ট্রাম্পকে এখনও দেশটির জন্য বিপজ্জনক মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, বুধবার তিনি যেভাবে বিদ্রোহ করেছেন তাকে অবশ্যই অফিস থেকে সরিয়ে দিতে হবে। ট্রাম্পকে অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে।

হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য ক্যাথলিন রাইস টুইট করেন- মন্ত্রিসভাকে অবশ্যই সংবিধানের ২৫ নম্বর অধ্যাদেশ আহ্বান করতে হবে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ক্যাপিটলের ওপর দেশীয় সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প)। গণতন্ত্রের পক্ষে উনি বিপজ্জনক। অবিলম্বে তাকে পদ থেকে সরানো দরকার। মন্ত্রিসভার উচিত ২৫ নম্বর সংশোধনী কার্যকর করা। নিক ক্রিস্টেনসেন টুইট করে বলেছেন- হয় ২৫ নম্বর অধ্যাদেশ আহ্বান করতে হবে, অন্যথায় ইমপিচমেন্ট জরুরি।

বুধবার ক্যাপিটল হিলে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালান ট্রাম্প সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাম্পের উসকানিতেই এ হামলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্যরা আলোচনায় বসেন। এতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল পেন্সও ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন সংসদের ২৫তম সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সংশোধনী অনুযায়ী কোনো প্রেসিডেন্ট ‘দায়িত্ব পালনে অক্ষম’ হলে মেয়াদ শেষের আগেই তাকে সরিয়ে দেওয়া যায়। তবে তার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়।

ট্রাম্পকে ইমপিচ করার ইচ্ছা নেই বাইডেনের : ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি উঠলেও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা ভাবছেন না নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি জানান, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে দেশে ঐক্য ফেরানো যাবে না। তিনি এ বিষয় নিয়ে ভাবছেন না। ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের বিষয় নিয়ে তিনি ভাবছেন। বাইডেনের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু করাটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করবে না। সুতরাং ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনো ইচ্ছাই বাইডেনের নেই। মূলত ১৩ দিন পর দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাবছেন। এদিকেই তিনি মনোযোগ রাখতে চান। ২৫তম সংশোধনীর বিষয়ে কথা বলায় তার কোনো আগ্রহ নেই।

ক্যাপিটলে সমর্থকদের হামলা নিয়ে সুর পাল্টালেন ট্রাম্প : যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে অবশেষে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে নিজের সমর্থকদের হামলার সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের ‘জঘন্য আক্রমণকারী’ হিসাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সহিংসতা, আইনহীনতা ও মারামারির ঘটনায় সব আমেরিকানের মতো আমিও ক্ষুব্ধ’। বুধবারের হামলাটি যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অথচ ঘটনার পরপরই হামলাকারীদের ‘দেশপ্রেমিক’ উল্লেখ করে এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তোমাদের ভালোবাসি।’ এরপর তার ফেসবুক ও টুইটার তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুরু হয় নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়।

দেশটির স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ওই হামলা তার পছন্দ হয়নি। বরং একে জঘন্য আক্রমণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ভোটের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা। ওই ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, এখন কংগ্রেস ফল অনুমোদন দিয়েছে। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণ করবে। ক্ষমতা সুষ্ঠুভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে এবং নির্বিঘ্নে হস্তান্তর করার দিকে আমার নজর থাকবে। ট্রাম্প আরও বলেন, আমাদের দেশের জনগণের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় সম্মানের। তার কথায়, এ মুহূর্তের করণীয় হলো নিরাময় ও পুনর্মিলন। আমরা মাত্রই একটি উত্তেজনাকর নির্বাচন শেষ করেছি এবং মেজাজ উত্তপ্ত। এখন মেজাজ ঠান্ডা করার সময়। যারা আইন ভেঙেছেন তাদের মূল্য দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে তিনি থাকছেন না। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিনন্দন না জানালেও ট্রাম্প বলেছেন, নতুন প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ভিডিওতে ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যকে ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার পরাজয়ের প্রথম প্রকাশ্যে স্বীকার হিসাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের প্রায় ২ মাস পর ট্রাম্প তার পরাজয় মানতে বাধ্য হলেন। তবে ভিডিওবার্তায় নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কোনো ইঙ্গিত দেননি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নিজেকে ক্ষমা করা নিয়ে আলোচনা করছেন ট্রাম্প : নিজেকে ক্ষমা করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে এ ধরনের ক্ষমা হবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অস্বাভাবিক ব্যবহার। বুধবার কংগ্রেস ভবনে সমর্থকদের তাণ্ডবের পর ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা তাকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের এক উপদেষ্টা বলেছেন, ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের বিরোধিতা করেছেন পেন্স।

নিজের রাজনৈতিক মিত্র এবং বন্ধুদের ধারাবাহিকভাবে ক্ষমা করার পর ২০১৮ সালে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘নিজেকে ক্ষমা করার চূড়ান্ত ক্ষমতা আমার রয়েছে।’ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের মামলা রয়েছে। সেগুলো কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার আওতায় পড়ে না। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে- ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি সাইরাস ভেন্সের ক্রিমিনাল তদন্ত এবং নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের নাগরিক তদন্ত। ঋণ নিতে সম্পদের মূল্য বেশি দেখানো এবং বাণিজ্যিক বিনিময়ের সময় ট্যাক্স সুবিধা নেওয়ার ঘটনায় এসব মামলা চলছে। সাংবিধানিক আইনজীবীরা বলছেন, একজন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন কিনা এর সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। কোনো প্রেসিডেন্টই আগে এ চেষ্টা করেননি। সে কারণে আদালত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

কেমনে কাটবে ১৩টি দিন : ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ১৩ দিন বাকি। তবে বুধবার দেশটির কংগ্রেস ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর অনেক মার্কিনির কাছে ১৩ দিন অনেক বেশি দীর্ঘ মনে হতে পারে। কারণ, ক্ষুব্ধ ট্রাম্প যে কোনো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারেন। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ২২০ বছরের ইতিহাসে এ প্রথম শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে, ট্রাম্পের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনে অনেকেই আস্থা রাখতে পারছেন না। কেউ কেউ ভাবছেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের যে ঘোষণা ট্রাম্প দিয়েছেন, তা যতটা না দায়িত্ববোধ থেকে, তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিস্বার্থ থেকে। সম্ভবত হোয়াইট হাউজে কর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক এবং অভিশংসন অথবা মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করা ঠেকাতেই তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী : মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘প্রেসিডেন্ট যদি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সিংহভাগ একমত হয়ে প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে পারেন।’

ওয়াশিংটনজুড়ে পুলিশ : যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ চলছে। ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কড়া নজরে রাখা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির আশপাশের ছয়টি রাজ্য থেকে ন্যাশনাল গার্ড তলব করা হয়েছে। প্রতি সাত ফুট পরপর ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা ক্যাপিটল হিলের স্থাপনা ঘিরে রেখেছেন। বুধবারের রাতের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮০ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে ক্যাপিটল পুলিশ।

সর্বাধিক পঠিত