করোনাভাইরাসের ১৩টি উপসর্গ চিহ্নিত করলো জাপান
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সতর্কসংকেত হিসেবে উল্লেখ করে ১৩টি উপসর্গ চিহ্নিত করেছে। সে রকম অবস্থা দেখা দিলে বিলম্ব না করে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
হালকা উপসর্গ দেখা দেওয়া যেসব রোগীকে বাড়িতে অবস্থান করতে কিংবা বিশেষ কোনো জায়গায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে, তাদের জন্য মূলত এই তালিকা তৈরি করা হলেও অন্যরাও এর থেকে নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন। সেদিক থেকে এটা হচ্ছে সময়োপযোগী এক পদক্ষেপ, যা কিনা অযথা ভয় পাওয়া থেকে অনেককে রক্ষা করবে এবং অন্যদিকে আবার সংক্রমণ নিয়ে দোদুল্যমানতায় যাঁরা ভুগছেন, বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে তাঁদের উৎসাহিত করবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আগে থেকে নিশ্চিত হতে পারলে চিকিৎসাপ্রক্রিয়া যেহেতু সহজ হয়ে যায়, ফলে সেদিক থেকেও এটা হচ্ছে উপকারী এক তালিকা। তালিকাটি এ রকম : ১. ঠোঁট বেগুনি রঙের হয়ে যাওয়া, ২. দ্রুত শ্বাস নেওয়া, ৩. হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসার অনুভূতি, ৪. অল্প একটু হাঁটাচলা করাতেই শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ৫. বুকে ব্যথা, ৬. শুয়ে থাকতে না পারা, উঠে না বসলে শ্বাস নিতে না পারা, ৭. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ৮. হঠাৎ শব্দ করে শ্বাস নিতে শুরু করা, ৯. অনিয়মিত নাড়ির স্পন্দন। মনো-নির্ভর ৪টি উপসর্গ হচ্ছে: ১. মলিন চেহারা, ২. অদ্ভুত আচরণ করা, ৩. অন্যমনস্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ৪. বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া, উত্তর দেওয়ায় অপারগতা।
জাপানে বর্তমানে হালকা উপসর্গ দেখা দেওয়া অনেক রোগীকে বাড়িতে থাকতে কিংবা বিশেষভাবে ব্যবস্থা করে নেওয়া হোটেলে রাখা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি হওয়া কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে এই ব্যবস্থা। রোগীদের মধ্যে ১৩টি উপসর্গের যেকোনো একটি দেখা গেলে দ্রুত এদের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে।
জাপান সরকার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসায় সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এপ্রিল মাসের ৭ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া জরুরি অবস্থা মে মাসের ৬ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে নাগরিক জীবনের সব রকম কর্মকা- অচল করে দেওয়া না হলেও যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকার অনুরোধ নাগরিকদের প্রতি জানানো হয়েছে এবং দেশের স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে।
দৈনন্দিন প্রয়োজনের কেনাকাটার বাইরে অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে এবং রেস্তোরাঁ ও পানশালার কাজ করছে সীমিত সময়ের জন্য। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থেকে ক্লাসে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা তাদের জন্য করা হয়েছে। সে রকম অবস্থায় সংক্রমণ বিস্তৃত হওয়ার গতি কিছুটা কমে এলেও একেবারে থামিয়ে দেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। টোকিওতে যেমন মঙ্গলবার ৭২টি সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার পর গত দুদিনে সেই সংখ্যা আবারও ৫০-র নিচে নেমে গিয়ে যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৬টিতে দাঁড়ায়। অন্যদিকে সারা জাপানে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা গতকাল ছিল ১৫৫টি। এদিকে জাপানে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৪৭ টি।
সে রকম অবস্থায় আগামী সপ্তাহে উত্তীর্ণ হতে যাওয়া জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না, বিরোধীদলীয় একজন সদস্যের সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গতকাল সংসদের উচ্চ কক্ষের বাজেট কমিটির বৈঠকে বলেছেন, ৬ মে জরুরি অবস্থার বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন। সূত্র : প্রথম আলো।