• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ভারতীয় রাজনীতিতে প্রিয়াংকার অভিষেক

প্রকাশ:  ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

লোকসভা নির্বাচনের ঠিক তিন মাস আগে কংগ্রেস প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরাকে রাজনীতিতে এনে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে। অনেকদিন ধরেই কংগ্রেসের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও কর্মীরা প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতিতে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা নিজে রাজি হননি। তবে প্রকাশ্যে না থাকলেও প্রিয়াঙ্কা অনেকদিন ধরেই সংগঠনের কাজ দেখভাল করছেন। বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দাদা রাহুলের পাশে থেকেছেন। নেপথ্যে থেকে কংগ্রেসের বৃহত্তর কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক উতরে দেয়ায় তার ভূমিকা অনেকেরই অজানা। পদে না থাকলেও তার প্রতিটি নির্দেশ বেদবাক্য মনে করেন দলের প্রায় সব নেতাই। সেইসঙ্গে উত্তর প্রদেশে মা সোনিয়া গান্ধী ও দাদা রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী প্রচারণার কাজে যুক্ত থেকেছেন।

কংগ্রেসের অনেক নেতাই বলেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধীর চেহারা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিল থাকায়  প্রিয়াঙ্কাকে দিয়ে ফের ইন্দিরা গান্ধীর ভাবমূর্তি তুলে ধরা সম্ভব হবে। শেষ পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কাকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির ময়দানে নামানো সম্ভব হয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রিয়াঙ্কাকে এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযোগ দিয়েছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদকের। জানা গেছে, বিদেশ থেকে ফিরে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসীন হয়ে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা। গতকাল এই খবর জানাজানি হবার পর শুভেচ্ছার ঢল বয়ে গিয়েছে। উচ্ছ্বসিত কংগ্রেসের সর্বস্তরের কর্মী ও সমর্থকরা। দল থেকে পরিবার, সকলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট বঢরাও প্রিয়াঙ্কার সাংগঠনিক পদে নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন।  দিল্লির দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত বলেছেন, শুধু নেতারাই নন, দলের নিচু তলার কর্মীরাও নতুন করে উজ্জীবিত হবেন। সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য রেণুকা চৌধুরীর মতে, এটা রাহুলের মাস্টারস্ট্রোক। আমরা সবাই এই সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। বিজেপি সমালোচনা করলেও কংগ্রেসের এই পদক্ষেপকে সদর্থক হিসেবেই দেখেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণকারী জনতা দলের নেতা প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, প্রিয়াঙ্কার সক্রিয় রাজনীতিতে নামা ভারতীয় রাজনীতির সবচেয়ে প্রতীক্ষিত অধ্যায়। ঠিক সময়ে এলেন কিনা, সঠিক দায়িত্ব দেয়া হলো কিনা, সেসব সাধারণ মানুষ বিচার করবেন। তবে আমার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় খবর যে তিনি শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে স্বাগত। স্বাগত জানিয়েছেন অন্যান্য দলের নেতারাও। ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার চেহারার সাদৃশ্য এবং ব্যক্তিত্বের মিল থাকায় অনেকেই প্রিয়াঙ্কার মাধ্যমে কংগ্রেস নতুন করে মাথা তুলতে পারবে বলে মনে করছেন। সম্প্রতি তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস যেভাবে সাফল্য পেয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এবং আম জনতার কাছে প্রিয়াঙ্কার যে পজিটিভ ভাবমূর্তি রয়েছে তাতে প্রিয়াঙ্কার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অভিষেকে কংগ্রেস নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সাংগঠনিক কাজে প্রিয়াঙ্কার দক্ষতা পরীক্ষিত। ভাষণ দেয়ার ক্ষমতাও চোখে পড়েছে। সভায় বক্তব্য পেশ করার ক্ষেত্রে তিনি এখন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।
তবে প্রিয়াঙ্কার কংগ্রেসের সাংগঠনিক পদে নিয়োগকে নিয়ে বিজেপি সমালোচনা করতে ছাড়েনি। পরিবারতন্ত্রের সঙ্গেই প্রিয়াঙ্কাকে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেয়া নিয়ে খোঁচাও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তথা বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বলেছেন, প্রিয়াঙ্কাজি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আমার শুভেচ্ছা। পরিবারভিত্তিক দলের থেকে এরকম সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত নয়। তবে তাকে শুধু উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব কেন দেয়া হল? তার ক্যারিশমা ও ব্যক্তিত্ব রাজনীতির ময়দানে আরো বড় পরিসর দাবি করে। প্রিয়াঙ্কার নিয়োগ নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, পরিবারতন্ত্র আরো শক্তপোক্ত করতে প্রিয়াঙ্কার নিয়োগ প্রত্যাশিতই ছিল। একই সঙ্গে কংগ্রেস মেনে নিলো যে, রাহুল গান্ধী ব্যর্থ হয়েছেন।