চাপের মুখে ট্রাম্প: সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার অনিশ্চিত
সিরিয়ায় প্রায় আট বছর ধরে ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর শক্তির ভারসাম্য বর্তমানে সিরিয়া ও তার মিত্রদের অনুকূলে চলে এসেছে। আমেরিকা এবং তার আরব ও ইউরোপীয় মিত্ররা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে লেলিয়ে দিয়ে সিরিয়ার বৈধ সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিল।
বর্তমানে সিরিয়ায় আমেরিকার প্রভাব নেই বললেই চলে। এমনকি শক্তির ভারসাম্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে আনার মতো অবস্থাও আমেরিকার নেই। মার্কিন সেনা মোতায়েনসহ যুদ্ধ পরিচালনার জন্য আমেরিকা সিরিয়ায় এ পর্যন্ত কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এ ছাড়া, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান নীতি হচ্ছে, পশ্চিম এশিয়ায় সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনা। এ কারণে তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর অপ্রত্যাশিতভাবে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, দায়েশ সন্ত্রাসীরা পরাজিত হয়েছে আর সে কারণেই সিরিয়া থেকে সেনা সরিয়ে আনা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আমেরিকার ভেতরে এবং ইউরোপীয় মিত্রদের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার সময়সীমা ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০দিন করেছেন এবং দামেস্কের ব্যাপারে সাম্প্রতিক ঘোষিত নীতি অবস্থান থেকে তিনি হয়তো ফের সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল (বুধবার) হোয়াইট হাউজে দাবি করেছেন, সিরিয়া থেকে তিনি মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়া সত্বেও দেশটির কুর্দিদেরকে সমর্থন দিয়ে যাবেন। অথচ এর আগে তিনি বলেছিলেন, দায়েশ সন্ত্রাসীরা পরাজিত হওয়ায় সিরিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতির কোনো কারণ থাকতে পারে না। ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন অব্যাহত রাখার জন্য ট্রাম্প এখন সিরিয়ান কুর্দীদের রক্ষার কথা বলছেন।
কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটন সিরিয়ার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি মিলিশিয়াদের সহযোগিতার কথা বলে সেখানে সেনা মোতায়েন করে এবং দাবি করে তারা দায়েশের বিরুদ্ধে লড়ছে।
কিন্তু আমেরিকা সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ায় কুর্দিদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। এ কারণে তারা তুর্কি সেনাদের হামলার আশঙ্কায় ফোরাতের পূর্ব এলাকা থেকে সিরিয়ার সেনানিয়ন্ত্রীত এলাকায় চলে যেতে চায়। মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে লিখেছে "সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের অর্থ হবে আমেরিকার জন্য বিরাট পরাজয় এবং কুর্দিরা একা হয়ে পড়বে।"
যাইহোক, ইউরোপীয়রা কুর্দিদের প্রতি সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন গতকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনালাপে সিরিয়ায় যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখা বিশেষ করে কুর্দিদের রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সেনা প্রত্যাহারের বিরোধী ট্রাম্পের সমালোচকরা মনে করেন, এ সিদ্ধান্তের অর্থ হচ্ছে সিরিয়া ইস্যুতে আমেরিকার পুরোপুরি পিছ টান এবং কোনো রকম সম্ভাব্য ঝুঁকি ও যাচাই না করেই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলে এ অঞ্চলে ওয়াশিংটন ও তার মিত্রদের পরিণতি ভালো হবে না। এ কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিলেও প্রয়োজনে হামলা চালানোর মতো বিকল্প ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন। এ অবস্থায় নানামুখী চাপের কারণে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার করতে পারবেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।