• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

খাসোগি হত্যাকাণ্ড : উভয় সংকটে ট্রাম্প

প্রকাশ:  ২০ নভেম্বর ২০১৮, ২০:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সাংবাদিক খাসোগি হত্যার সঙ্গে সৌদি আরবের জড়িত থাকার বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

 

ট্রাম্প এ ঘটনাকে নিয়ে দোটানায় পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরব এ ঘটনা সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা মেনে নেবেন নাকি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো নেতা যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানকে খুনি হিসেবে ঘোষণা করবেন।

 

 

জামাল খাসোগির হত্যার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুবরাজ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা একবারের জন্যও বলেননি।

 

প্রবীণ সৌদি ওই সাংবাদিক ওয়াশিংটন পোস্টে রিয়াদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে কলাম লিখতেন।

 

গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কন্স্যুলেটে তাকে হত্যা করে তার দেহ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক চাপে সৌদি আরব ২১ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারের ঘোষণা দেয় এবং ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।

 

এ ঘটনায় ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হবে বলে জানায় রিয়াদ। 

 

একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের ১৭ জনের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে। এরা ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের। অভিযুক্তদের মধ্যে সৌদি যুবরাজ সালমানের দুজন ঘনিষ্ঠ সহকারী রয়েছেন।

 

কোন পক্ষই এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান পারিকল্পনাকারীর নাম প্রকাশ করেনি।

 

তবে পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সিআইএ মতে সৌদি যুবরাজ সালমানই এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী।

 

আর এটাই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দোটানায় ফেলে দিয়েছে। তিনি সিআইএর কথা মেনে নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি করার ঝুঁকি নিবেন কিনা। কারণ বিশ্বের তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে এবং ইরানের বিরোধীতার ক্ষেত্রে তিনি সৌদি সরকারের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন।

 

ট্রাম্পের জামাতা জেয়ার্ড কুশনারের সঙ্গে ‘এমবিএ’ নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

 

এ কারণেই এখন পর্যন্ত ট্রাম্প খাসোগি হত্যাকাণ্ডে প্রিন্স মোহাম্মাদের দিকে আঙ্গুল না তুলে বলেছেন, তিনি কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাননি।

 

রবিবার তিনি বলেন, মঙ্গলবার নাগাদ সিআইএ এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তাকে ব্রিফ করবে।

 

কার্নেগি এন্ডোউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মিশেল ডানি বলেন, ‘ট্রাম্পের সামনে দুটি রাস্তা আছে। তিনি গোয়েন্দা সংস্থার ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে কংগ্রেসের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিতে পারেন। এর অর্থ দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র আর এমবিএস এর সঙ্গে কাজ করবে না।’

 

ডানি বলেন, অথবা তিনি সবকিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে যুবরাজের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করতে পারেন।

 

তিনি আরও বলেন, বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটানো একটি চরম সিদ্ধান্ত হবে। তবে এর মানে এ নয় যে এর ফলে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে।

 

তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব এমবিএস নয়, আর এমবিএসও সৌদি আরব নন।’

অপরদিকে, ট্রাম্প যদি যুবরাজ সালমানের সমালোচনা না করেন তবে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস যুবরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, যা উভয়ের সম্পর্ক অবনতি ঘটাবে।

কংগ্রেস সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।

রবিবার ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম খাসোগির মৃত্যুর সম্পর্কে এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘১৫ থেকে ১৮ জন হত্যাকারী যুবরাজের অনুমতি না নিয়েই দুটি বিমানে করে তুরস্কে গিয়ে সৌদি কনস্যুলেটে ঢুকে যুবরাজের সমালোচককে হত্যার পর কেটে টুকরো টুকরো করেছে, প্রথম দিন থেকেই আমি এটা মানতে পারছি না।’

এ ঘটনা নিয়ে হোয়াইট হাউসও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কুশনার এ ঘটনা ও তার বন্ধু সালমানের ব্যাপারে কিছু বলছেন না।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, শুক্রবার হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ক্রিস্টিন ফন্টেনরোজ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পদত্যাগ করেছেন।
খবর এএফপি