ভারতে কেন তেলের দাম বাড়ছে
ভারতে জ্বালানি তেল ও রান্নার গ্যাসের দাম যখন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে, তখন সেই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধীদের ডাকে আজ ভারত বনধ পালিত হয়েছে।
ডলারের বিপরীতে রুপির দামে রেকর্ড পতন আর জ্বালানির আকাশছোঁয়া দামের পরও প্রধানমন্ত্রী নীরব কেন, আজ দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে সে প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
ভারতে সাধারণ নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস আগে আজকের ভারত বনধকে সরকারের দিকে বিরোধীদের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা হচ্ছে, কিন্তু তৃণমূল বা আম আদমি পার্টির মতো অনেক দল বনধের ডাকে সামিল না-হওয়ায় বিরোধী ঐক্যের চেহারা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে দিল্লিতে মানুষ কখনও লিটারে আশি রুপির বেশি দিয়ে পেট্রল কেনেননি। এদিকে আজ সোমবার মহারাষ্ট্রের একটি শহরে পেট্রলের দাম প্রায় নব্বই রুপি ছুঁয়েছে।
দেশের অনেক শহরেই ডিজেলের দামও দ্রুত সত্তর পেরিয়ে আশির দিকে ছুটছে। জ্বালানি তেলের এই নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাটে।
রাজধানীর এক পেট্রোল পাম্পে গাড়িতে তেল নিতে এসে দিল্লিবাসীরা বলছিলেন, "রোজ যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে তেলের দাম বাড়ছে আর সেই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, তাতে আর পারা যাচ্ছে না।"
কেউ কেউ আবার বলছিলেন, আগে তেলের দাম বাড়ানো হলে এই বিজেপিই পার্লামেন্টে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিত - অথচ এখন তারাই হাত গুটিয়ে বসে আছে।
কারও আবার আক্ষেপ, "তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে মাইনে তো আর সেভাবে বাড়ছে না - ফলে রোজকার যাতায়াতের খরচ সামলাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে!"
জ্বালানি তেলের এই রেকর্ড দামের পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপির দরও পড়ছে হুড় হুড় করে। এ বছরের গোড়ার দিকে ১ ডলারে পাওয়া যেত ৬৪ রুপিরও কম, অথচ সেই ডলারের দামই এখন ৭৩ রুপি ছুঁই ছুঁই।
রুপির দাম পড়ে যাওয়াটা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির একটা বড় কারণ, আর তার ধাক্কা এসে লাগছে রান্নার গ্যাস বা এলপিজি-র সিলিন্ডারেও।
ব্যাঙ্গালোরের গৃহবধূ শ্রীরূপা দত্ত বলছিলেন, "মাত্র বছর-চারেক আগেও একটা সিলিন্ডারের দাম যেখানে ছিল মাত্র ৪১০ রুপি, আজ সেটাই কিনতে হচ্ছে প্রায় আটশো রুপিতে।"
রান্নার জ্বালানির দাম এভাবে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় বেজায় সমস্যায় তারই মতো ভারতের কোটি কোটি মানুষ - আর এই তীব্র ক্ষোভ আর অসন্তোষকে কাজে লাগাতেই ভারত বনধের ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস, যাতে সমর্থন জানায় বামপন্থীরাসহ আরও প্রায় একুশটি ছোটবড় দল।
বনধের সমর্থনে দিল্লির জনসভা থেকে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী বলেন, "রুপির দাম গত সত্তর বছরে কখনও এত দুর্বল হয়নি। কখনও এত দামী ছিল না পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাস। অথচ জ্বালানির দাম বাড়লে যে নরেন্দ্র মোদী সারা দেশ ঘুরে হইচই শুরু করে দিতেন, তার মুখে আজ একটা শব্দ নেই!"
বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য বলার চেষ্টা করেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়া আর ডলারের শক্তিবৃদ্ধির ফলেই এই অবস্থা তৈরি হয়েছে - এখানে সরকারের খুব একটা কিছু করণীয় নেই।
তেলের দাম বেড়ে যাওয়া ও রুপির মূল্য কমে যাওয়ায় বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করছেন।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন কম ছিল, তখন ভারত সরকার জ্বালানির ওপর শুল্ক বা এক্সাইজ ডিউটি যে দশ-বারো দফা বাড়িয়েছিল, সেটা এখন কেন কমানো হচ্ছে না- সরকার এ প্রশ্নের কোনও জবাব দিচ্ছে না।
তবে বিজেপির জন্য সম্ভবত সান্ত্বনা একটাই - কংগ্রেসের ডাকা ভারত বনধকে সমর্থন করেনি তৃণমূল কংগ্রেস বা আম আদমি পার্টির মতো বিরোধী দলগুলো।
তৃণমূলের সিনিয়র এমপি কাকলি ঘোষ দস্তিদার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "মানুষ এটা বুঝবে যে আমরা বনধ ডেকে তাদের রুটিরুজিতে কোপ বসাতে চাই না। কারণ তাতে অর্থনীতিরই ক্ষতি হয়। জ্বালানির দাম বাড়ার প্রতিবাদ আমরাও জানাচ্ছি - তবে সেটা গণতান্ত্রিক পথে, মিটিং-মিছিল করে - কাজের সময় নষ্ট করে নয়!"
কিন্তু আসন্ন নির্বাচনের আগে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুতেও যে সব বিরোধী দল একমত হতে পারল না, আজকের ভারত বনধে বিরোধীদের দিক থেকে সেটাই সম্ভবত সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। সূত্র: বিবিসি।