• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হোয়াইট হাউজে সিচুয়েশন রুমের নিরাপত্তা কেমন

প্রকাশ:  ১৫ আগস্ট ২০১৮, ০০:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের সরকারি অফিস ও বাসভবন হোয়াইট হাউজের বিশেষ একটি কক্ষ সিচুয়েশন রুমে গোপনে কিছু কথাবার্তা রেকর্ড করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক একজন উপদেষ্টা ওমারোসা ম্যানিগল্ট নিউম্যান।

গত ডিসেম্বর মাসে চিফ অফ স্টাফ জন কেলির সাথে ওই কক্ষে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেসময় মি. কেলি তাকে বলেছিলেন যে তার আর চাকরি নেই। ওমারোসা ম্যানিগল্ট চুপিচুপি সেসব কথাবার্তা রেকর্ড করেছিলেন। পরে সেই অডিও টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছিল।

জন কেলি আলোচনার জন্যে কেন তাকে সিচুয়েশন রুমে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। কারণ এই কক্ষটি সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের জন্যে সংরক্ষিত থাকে।

তাদের সেই আলাপের অডিও প্রকাশ করে দেওয়ার পর সেটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে তার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেছেন ওমারোসা ম্যানিগল্ট। তিনি বলেছেন, তাকে চাকরিচ্যুত করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট কিম্বা তার দূত যে সত্য কথাটা তুলে ধরবেন সে ব্যাপারে তার আস্থা নেই। সেকারণে সেখানে আসলে কী হয়েছিল তার তথ্যপ্রমাণ হিসেবেই তিনি সেই অডিও প্রকাশ করেছেন।

হোয়াহট হাউজের সাবেক কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা, আস্থা এমনকি সিচুয়েশন রুমের ভেতরে নিরাপত্তা কতোটা সুরক্ষিত সেসব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এই সিচুয়েশন রুম তৈরি করা হয়েছিল ১৯৬১ সালে। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই কক্ষটিতে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিয়মিতভাবে বৈঠক করে থাকেন। অনেকে এই কক্ষটিকে 'যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা' হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন।

ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্টের স্টিফেন আফটারগুড, সরকারের গোপনীয়তার বিষয়ে যিনি একজন বিশেষজ্ঞ, বলেছেন, "এই কক্ষটি এমন একটি জায়গা যেখানে পরমাণু শক্তির সাথে সম্পর্কিত কর্মকর্তারাসহ যুক্তরাষ্ট্রের গ্ররুত্বপূর্ণ সব বাহিনীর মধ্যে বৈঠক হয়, যেখান থেকে গোয়েন্দা তৎপরতার উপরেও নজর রাখা হয়।"

এই সিচুয়েশন রুমের এক কোণে বসেই প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের বাড়িতে চালানো অভিযান প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাকে ঘিরে বসেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

সেসময় সিচুয়েশন রুমে তোলা একটি ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায় এবং তাকে উল্লেখ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত হিসেবে।

এই নিরাপদ কক্ষটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঝুঁকিপূর্ণ গোয়েন্দা তৎপরতার ওপর নজর রাখতে পারেন। অত্যন্ত স্পর্শকাতর সব তথ্যও এখানে বিশ্লেষণ করা হয়।

সিআইএর রিপোর্ট অনুসারে এই সিচুয়েশন রুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিম্বা দিনের পর দিন পালাক্রমে কাজ করেন একদল কর্মকর্তা। তাদেরকে বলা হয় 'ওয়াচ টিম।' বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনার ওপর নজর রাখেন তারা।

সন্ত্রাসী হামলা, গৃহযুদ্ধ অথবা অন্যান্য যেকোন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ব্যাপারে তারা সেখানে প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন।

সিআইএর সাবেক একজন বিশ্লেষক ডেভিড প্রিস, যিনি 'দ্যা প্রেসিডেন্টস বুক অফ সিক্রেটস' নামে একটি বই লিখেছেন, বলেছেন, সিচুয়েশন রুমে যেসব কাজ হয় সেসব থেকে অনুমান করা যায় যে ওই কক্ষটির গোপনীয়তা কতোটা জরুরী।

মি. প্রিসসহ এই সিচুয়েশন রুমে যারা বৈঠক করেছেন তারা বলছেন, এটি একটি মাত্র কক্ষ নয়। বেশ কয়েকটি ঘর আছে সেখানে যেগুলোকে বলা হয় সিচুয়েশন রুম।

হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইং-এ মাটির তলায় অবস্থিত এই সিচুয়েশন রুম। খাবারের হল হোয়াইট হাউজ মেসের পাশেই এই সিচুয়েশন রুম। সেখানে সম্মেলন করার মতো একটি জায়গা আছে যেখানে বহু মানুষ বসতে পারেন।

শুধুমাত্র তাদেরকেই এসব সিচুয়েশন রুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় একেবারে উচ্চ পর্যায় থেকে যাদেরকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনী তাদের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই অনুমতি দিয়ে থাকে। সিচুয়েশন রুমসহ হোয়াইট হাউজের ভেতরে আরো যেসব সুরক্ষিত এলাকা আছে সেখানে কীভাবে চলাচল করতে হবে সেবিষয়েও তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সিচুয়েশন রুমের ভেতরে কারো মোবাইল ফোন কিম্বা ব্যক্তিগত কোন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। ওবামা প্রশাসনের সাবেক একজন কর্মকর্তা ব্রেট বুয়েন বলেছেন, "কক্ষটির বাইরে ছোট্ট একটি বক্সে কিম্বা লকারে ফোন রেখে ভেতরে যেতে হয়। মিটিং-এর সময় সাথে করে লকারের ছোট্ট একটি চাবিই শুধু সাথে করে নিয়ে যাওয়া যায়।"

সিচুয়েশন রুমে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কিম্বা অন্যান্য আরো অনেক বিষয়ে বিস্তারিত দিক নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা আছে হোয়াইট হাউজের কিছু পুস্তিকায়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউজের মাটির নিচে বেজমেন্টের হলওয়েতে অ্যালার্মের মতো নিরাপত্তাজনিত কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা আছে। তবে সিচুয়েশন রুমে ঢোকার যে পথ সেটি দেখতে বিমানবন্দরের গেটের চাইতেও সাধারণ।

মি. প্রিস বলেন, "সেখানে সেরকম কোন ফটক নেই। কোন মেটাল ডিটেক্টরের ভেতর দিয়ে কাউকে যেতে হয় না।" মি. ব্রুয়েন বলেছেন, "চেকিং-এর জন্যেও কেউ নেই সেখানে যিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতো হাতে মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না।"

সিচুয়েশন রুমের ভেতরে যারা যাওয়া আসা করেন তাদের উপর নজর রাখা হয়, তবে সেটা অনানুষ্ঠানিকভাবে। সেসব প্রোটোকল সম্পর্কেও তাদের জানা আছে।

কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও মিস ম্যানিগল্ট কীভাবে সিচুয়েশন রুমের ভেতরে জন কেলির সাথে তাদের কথাবার্তা রেকর্ড করলেন সেটা ওয়াশিংটনের অনেকের কাছেই একটা বড় বিস্ময়।

বলা হচ্ছে, গোপনীয় কোন তথ্য তিনি প্রকাশ করেন নি এবং তিনি হয়তো কোন আইনও ভঙ্গ করেন নি। তারপরেও সিচুয়েশন রুমের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু শর্ত তিনি অমান্য করেছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

সর্বাধিক পঠিত