• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

যেভাবে অ্যামাজনের ৫০ লাখ রুপি ঠকালো দিল্লির যুবক

প্রকাশ:  ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১০:২৮
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

দিল্লির বাসিন্দা ২১ বছরের শিবম চোপড়া ভারতে অ্যামাজন থেকে অনলাইনে ১৬৬টি দামী মোবাইল ফোন অর্ডার করেছিল। কিন্তু সেই ডেলিভারি হওয়া বাক্সগুলো খালি ছিল— এমন দাবি করে অ্যামাজনের কাছ থেকে সে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় আধা কোটি রুপি।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, জালিয়াতির এই পুরো ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে; এই দুই মাসের ভেতর। এক পর্যায়ে অ্যামাজন বুঝতে পারে যে, তাদের ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। তখন তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে।

দিল্লির উত্তর প্রান্তে রোহিনী থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাস করা শিবম চোপড়া কিছুদিন ছোটখাটো কিছু চাকরির চেষ্টা করলেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। তারপর এ বছরের মার্চে তার মাথায় অ্যামাজনকে ঠকানোর বুদ্ধিটা আসে। কিন্তু কী ছিল শিবম চোপড়ার অপরাধের ধরন বা 'মোডাস অপারেন্ডি'?

সে প্রথমে 'টেস্ট কেস' হিসেবে অ্যামাজন থেকে দুটো দামি ফোন অর্ডার করে। তারপর তাদের জানায় ডেলিভারি হওয়া বাক্সগুলোতে ফোন ছিল না, কাজেই তার রুপি ফেরত দেওয়া হোক। সেই রুপিও খুব সহজেই মিলে যায়।

এরপরই রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধে সে পরের দুই মাসে অ্যামাজন থেকে একের পর এক অ্যাপল, স্যামসাং বা ওয়ানপ্লাসের মতো ব্র্যান্ডের দামি মোবাইল ফোন অর্ডার দিতে শুরু করে। কিন্তু এই অর্ডারগুলোর জন্য সে ব্যবহার করেছিল আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট। আর প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খুলতে স্থানীয় একজন মোবাইল দোকানদারের সাহায্য নিয়েছিল।

ওই দোকানদারই তাকে প্রায় দেড়শ-এর মতো আগে থেকে অ্যাক্টিভেট করা মোবাইল সিমকার্ড সরবরাহ করে। সেগুলো দিয়ে সে খোলে অজস্র অ্যামাজন অ্যাকাউন্ট। ওই প্রতিটা সিমকার্ডের জন্য শিবম চোপড়া ওই দোকানিকে দেড়শ রুপি করে দিতো। তবে কোনও অর্ডারেই ওই যুবক নিজের সঠিক ঠিকানা ব্যবহার করেনি। সিমকার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে সে তার এলাকার কাছাকাছি কোনও ভুয়া ঠিকানা দিতো। ডেলিভারি বয় এসে যখন ঠিকানা খুঁজে পেত না, তখন সেই নম্বরে ফোন করতো। শিবম চোপড়া তখন যেখানে আছে, ডেলিভারি বয়কে ফোনে ডিরেকশন দিয়ে তার কাছাকাছি কোথাও আসতে বলে সেখানে ডেলিভারি নিত। পরে অ্যামাজনকে অভিযোগ করতো যে, বাক্সে কোনও ফোন ছিল না। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রুপিও ফেরত পেয়ে যেত।

অ্যামাজন থেকে পাওয়া এই দামি ফোনগুলো সে বিক্রি করতো হয় ওএলএক্স-এর মতো পুরনো জিনিস কেনাবেচার সাইটে কিংবা পশ্চিম দিল্লিতে পাইরেটেড জিনিসপত্রের জন্য কুখ্যাত গফফুর মার্কেটে।

 

দিল্লি পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা মিলিন্দ মহাদেও ডাম্বেরে জানিয়েছেন, ১৬৬টি ফোনের সবকটির জন্যই শিবম চোপড়া ঠিক একই কৌশল ব্যবহার করেছিল। আর এভাবেই সে হাতিয়ে নেয় ৫০ লাখ রুপিরও বেশি অর্থ।

গত তিন-চার মাস ধরে তদন্ত চালিয়ে, অভিযুক্ত ব্যক্তি কোথাও থাকতে পারে তার কাছাকাছি এলাকায় কার্যত চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে দিল্লি পুলিশ অবশেষে শিবম চোপড়াকে এ সপ্তাহে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তাকে যে মোবাইল সিমকার্ড জোগান দিত, সেই দোকানদারকেও পুলিশ আটক করেছে।

ধরা পড়ার সময় শিবম চোপড়ার কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ১২ লাখ রুপি নগদ এবং ৪০টি ব্যাংক পাসবুক ও চেকবুকও মিলেছে। এক বন্ধুর কাছে সে আরও ১০ লাখ রুপি জমা রেখেছিল, সন্ধান মিলেছে সেই রুপিরও।

এর আগে হায়দ্রাবাদেও পুলিশ দুজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে, যারা ভারতের বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটকে অভিনব কায়দায় প্রতারিত করতো। হায়দ্রাবাদের ঘটনায় ডেলিভারি বয় যখন পেমেন্টের জন্য দরজায় অপেক্ষা করতো তখন তারা বাক্সটি নিয়ে খুব কায়দা করে তার সিল খুলে ভেতরের জিনিসটি বের করে নিয়ে তাতে বালি ভরে দিতো। তারপর আবার বালিভর্তি বাক্সটি সিল করে ফেরত দিয়ে বলতো, তারা জিনিসটি নিতে চায় না!

সূত্র: বিবিসি বাংলা।