• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কুর্দিস্তান স্বাধীন হলে সবচেয়ে লাভ ইসরায়েলের

প্রকাশ:  ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১০:০৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শিরনাক প্রদেশের হার্বার ক্রসিং পয়েন্টের কাছে দেশটির সামরিক মহড়া অব্যাহত রয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ওই মহড়ায় ইরাকের কয়েকটি সেনা ইউনিটও অংশ নিয়েছে।

কুর্দিস্তানকে ইরাক থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য অনুষ্ঠিত গণভোটের একই সময়ে তুরস্কের ওই সামরিক মহড়া শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কুর্দিস্তান সীমান্তে তুরস্কের এ সামরিক মহড়ার পেছনে প্রধানত দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে।

প্রথমত, বিদেশি যে কোনো হুমকি মোকাবেলার জন্য তুর্কি সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা এবং দ্বিতীয়ত, তুরস্কের কুর্দি বিচ্ছিন্নতাকামীদের যে কোনো অপতৎপরতা রোধে তৈরি থাকা।

ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যান্য দেশের প্রচণ্ড বিরোধিতা সত্বেও কুর্দিস্তানের স্বশাসন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা গত ২৫ সেপ্টেম্বর ওই এলাকাকে ইরাক থেকে আলাদার জন্য সেখানে গণভোটের আয়োজন করে। গণভোটের পর এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নজিরবিহীন ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। বলা যায়, ইরাক সরকার সেদেশের উত্তরে তুর্কি সেনা উপস্থিতির প্রচণ্ড বিরোধিতা করলেও এবং তুরস্ক এতদিন কুর্দিদের আমন্ত্রণ জানানোর অজুহাতে ওই এলাকার একটি অংশের ওপর নিজেদের দখলদারিত্ব বজায় রাখলেও কুর্দিস্তানের বিচ্ছিন্নতা প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও সুসম্পর্ক ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

মোট কথা, ইরাক থেকে কুর্দিস্তানকে আলাদা করার জন্য গণভোটের পর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে। ইরাক ও তুরস্কের চলমান সামরিক মহড়া থেকে ওই পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ওই দুই দেশই ইরাক থেকে বিচ্ছিন্নতা প্রশ্নে কুর্দিস্তানে গণভোটের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এর আগে আঙ্কারা ও বাগদাদের নেতৃবৃন্দ গণভোটকে বেআইনি অভিহিত করে এর চরম পরিণতি ভোগ করার জন্য ওই এলাকার স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কারণ কুর্দিস্তানের গণভোটের নেতিবাচক পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।

তুরস্ক ও ইরাক বিষয়ক ইরানের বিশ্লেষক রাহমন কাহরেমন বলেছেন, কুর্দিস্তানকে ইরাক থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত গণভোটে দখলদার ইসরায়েলের ব্যাপক স্বার্থ রয়েছে।

তিনি বলেন, ইরান, তুরস্ক ও ইরাকের প্রতিবেশী কুর্দিস্তানে স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা হলে এ অঞ্চলের সব দেশের ওপর নজরদারি এবং প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়ে যাবে ইসরায়েল।

কুর্দিস্তানের গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, নিজস্ব একটা রাষ্ট্রের দাবিতে কুর্দি জনগণের বৈধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে ইসরায়েল।

গত মাসে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী এক সম্মেলনে ইসরায়েলের বিচারমন্ত্রী আয়েলেত শ্যাকড তার সমর্থন যোগ করে বলেন, 'ইরাকে অন্তত একটি স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের আগ্রহ আছে। এই প্রক্রিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন করার এখনই সময়।'

১৯৪০ ও ৫০-এর দশকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই ইরাকের কুর্দিদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। ইসরায়েলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর অনেক কুর্দি ইহুদি ইসরায়েলে চলে আসে। তবে তারা ইরাকে থাকা তাদের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে। ১৯৬০ সালের শুরুর দিক থেকেই ইরাকে কুর্দিস্তানের প্রতি ইসরায়েল তাদের সমর্থন প্রকাশ করতে থাকে।

সার্বিক পরিস্থিতিতে এটা বলা যায়, ইরাককে খণ্ড-বিখণ্ড করার উদ্দেশ্য নিয়ে কুর্দিস্তানে গণভোট অনুষ্ঠিত হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি বরং বিষয়টি এখন প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া, ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত গণভোট এ অঞ্চলে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও প্রভাবের সুযোগ তো দেয়নি বরং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আগের চেয়ে আরো বেশি সংহতি জোরদারের সুযোগ এনে দিয়েছে।

সূত্র: পার্স টুডে