দুর্ধর্ষ ডাকাত থেকে চা বিক্রেতা
এই তো মাস খানেক আগের কথা! যার নাম শুনলেই ভয়ে কুঁকড়ে যেত, সেই কুক্ষাত ডাকাতের হাতের তৈরি চা কিনা দিব্বি পান করছেন আরামবাগ এলাকাবাসী।
একসময় পুলিশের ঘুম কেড়ে নেয়া আরামবাগ থানার অপরাধীদের তালিকার সবার ওপরে থাকা কুক্ষাত ডাকাত শেখ পিন্টু ওরফে পিন্টু রায় এখন সেই থানার পাশেই চা, ঘুগনি-রুটি আর ডিমের টোস্ট বানাতে ব্যস্ত থাকেন।
কলকাতার হুগলি জেলার আরামবাগের তেঘড়িতে পিন্টুর বাড়ি।
আরামবাগ থানার তথ্যমতে পিন্টুর বিরুদ্ধে সেখানে চুরি, ডাকাতি, বেআইনি অস্ত্র রাখাসহ ২২টি মামলা ঝুলছে। আর পিন্টুর নিজের হিসাবে হুগলি ও পাশের জেলার কয়েকটি থানা মিলিয়ে ৪৫টির বেশি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।'
এমনই একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি কিনা গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরামবাগ থানার পাশে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন!
তবে পিন্টু তার নিজের বদলে যাওয়ার জন্য স্থানীয় পুলিশকেই ধন্যবাদ দিয়েছেন। তার ভাষ্য, 'পুলিশের সাহায্যেই অপরাধ ছেড়ে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করতে পেরেছি। এখন প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার কেনাবেচা হচ্ছে।'
হুগলির (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, 'আমরা চাই সমাজ ভালো থাকুক। যারা ভালো হতে চান তাদের সেই সুযোগ করে দেওয়া উচিত।'
যেভাবে ডাকাত বনে পিন্টু
ছোটবেলাতেই মা-বাবার বিচ্ছেদ ও মায়ের দ্বিতীয় বিয়েতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন পিন্টু। এরই মাঝে স্কুলে যাওয়াটাও বন্ধ হয়ে যায় তার।
১৪ বছর বয়সে প্রথম অপরাধ জগতে পা রাখা তার। এক শিক্ষিকার ঘরে ঢুকে রান্না করে রাখা ভাত ও মাংস খেয়ে হাঁড়ি, প্রেসার কুকার, থালা চুরি করেন তিনি।
সেই যে শুরু আর পিছনে ফিরে তাকাননি। এরপর স্থানীয় ডাকাত দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বছর ছয়েকের মধ্যেই পরিপক্ব ডাকাত হয়ে ওঠেন পিন্টু। হুগলি, বর্ধমানের কালনা, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর এলাকার ডাকাতির সঙ্গে অনেকাংশেই যুক্ত ছিলেন। পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার ধরাও পড়েন। কিন্তু কখনো শুধরাননি নিজেকে।
অবশেষে পরিকল্পনায় নামে স্থানীয় পুলিশ। গত ২৬ জুলাই আরামবাগে একটি পুরনো ডাকাতির মামলা থেকে জামিন পান পিন্টু। কিন্তু তাকে বাইরে রাখা মানেই আবার ডাকাতির সম্ভাবনা।
তাই পুলিশের কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, অন্য কোনো মামলা দিয়ে পিন্টুকে ফের জেলে ঢোকাতে হবে। এই আলোচনার সময়েই আরামবাগ থানার আইসি শান্তনু মিত্রের কাছে এসে হাজির হন পিন্টু। জানান, তিনি থানার সামনে চায়ের দোকান করতে চান। এই কথা শুনে প্রথমে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলেও তাকে সাহায্যের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।
তবে এখানে কিন্তু সন্দেহ রয়েই যায় পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। এটা কি পিন্টুর রূপ বদল, নাকি সত্যিই তিনি ভালো হচ্ছেন?
এর আগে ২০০৬ সালেও পিন্টুকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন ক্যাসেট ও বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম বিক্রি করতেন তিনি। কিন্তু বছর দেড়েক চলার পরেই দোকানে তালা মেরে লাপাত্তা হয়ে যান পিন্টু।
এ ঘটনায় পিন্টুর দাবি, ‘তখন আরামবাগে কোনো উৎসব হলেই আমাকে থানায় ঢুকিয়ে রাখা হতো। কোনো চুরি-ডাকাতির কিনারা না হলে আমাকেই দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো। বিনা দোষে জেলে থাকতে হয়েছে। তাই দোকান বন্ধ করে চলে যেতাম।’
বর্তমানে পিন্টুর বাড়িতে তার মা, স্ত্রী এবং দুই ছেলে (নাড়ু ও গোপাল) রয়েছে। বড় ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। দুই ছেলেকে ভালো মানুষ করতে ভালো পথে ফিরে এসেছেন বলে দাবি পিন্টুর।