• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

গোধরার ট্রেনে আগুনের ঘটনা আজও রহস্য

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০১৭, ১০:১৬ | আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ১০:১৯
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

সাড়ে পনেরো বছর আগে ভারতের গোধরা শহরের একটি ট্রেনের কামরায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৫৯ জনের মৃত্যুর যে ঘটনা গুজরাটে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনা করেছিল, সেই আগুন কীভাবে লেগেছিল -সে রহস্য আজও পুরোটা পরিষ্কার নয়। খবর বিবিসির।

ট্রেনে আগুন লাগানোর সেই মামলায় সোমবার হাইকোর্ট ১১ জন অভিযুক্তের ফাঁসি লাঘব করে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেছে।

অভিযুক্ত ৯৪ জনের সবাই ছিলেন মুসলিম - তাদের মধ্যে ৬৩ জনকে নিম্ন আদালত আগেই অব্যাহতি দিয়েছিল, গুজরাট হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রেখেছে।

ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটে ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, সেদিন সকালে সবরমতী এক্সপ্রেসে চেপে অযোধ্যায় রামমন্দিরের জন্য করসেবা সেরে ফিরছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একদল সাধু ও ভক্ত।

অভিযোগে বলা হয়েছিল, সবরমতী এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনটি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিয়ে অযোধ্যা থেকে ফেরার সময় একদল মুসলিম তার ওপর আক্রমণে চালায় এবং ট্রেনটি জোর করে থামিয়ে একটি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

কিন্তু পরে রাজ্য সরকারের একটি তদন্ত কমিশন ২০০৮ সালে এক রিপোর্টে বলে যে ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনা ছিল একটি ষড়যন্ত্র।

সরকারি আরেকটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ট্রেনের ভেতরের একটি দুর্ঘটনা থেকেই হয়তো আগুনের সূচনা হয়েছিল।

গুজরাট দাঙ্গার ভিকটিমদের জন্য লড়ছে যে সব সংগঠন তারা অভিযুক্তদের সাজা কমানোর এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।

তবে গোধরার অগ্নিকাণ্ডে যে সংগঠনের করসেবকরা নিহত হয়েছিলেন, সেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিবিসিকে বলেছে, অভিযুক্তদের ফাঁসির কমে কিছুতেই তারা সন্তুষ্ট হবেন না।

এই ঘটনার তদন্তে নিযুক্ত স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট আদালতে দাবি করে, পরিকল্পিতভাবে ট্রেনে আগুন লাগানো হয়েছিল। সেই অভিযুক্তদের বেশির ভাগই অবশ্য এ দিন হাইকোর্টে খালাস পেয়ে গেছেন।

সিটের আইনজীবী জে এম পাঞ্চাল অবশ্য বলছেন, ‘মাননীয় আদালত ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব স্বীকার করেছেন, আগুন লাগানোর জন্য বেআইনিভাবে জনতা যে জড়ো হয়েছিল সে কথাও মেনে নিয়েছেন। তারা শুধু এগারোজনের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেছেন। এই রায় যাদের পছন্দ হবে না, সেই যে কোনও পক্ষই এখন চাইলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারেন।’

সিটের চার্জশিটে 'গোধরা ষড়যন্ত্রের চাঁই' হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, শহরের স্থানীয় মৌলবি মৌলানা ওমরজি-কেও আদালত আজ নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেই নির্দোষ ঘোষণা করেছে, যদিও বছর চারেক আগেই মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে তিনি মারা গেছেন।

তবে গুজরাট দাঙ্গার ভিকটিমদের জন্য যারা বহু বছর ধরে লড়ছে, সেই জনসংঘর্ষ মঞ্চের নির্ঝরী সিনহা বিবিসিকে বলছিলেন - গোধরার অভিযুক্ত পরিবারগুলোর জন্য আজকের রায়ের গুরুত্ব কম নয়।

সিনহার কথায়, ‘মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় কেবল ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ অপরাধের ক্ষেত্রেই। গোধরা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নিযুক্ত নানাবতী কমিশনে সাক্ষ্য দিতে গিয়েও জনসংঘর্ষ মঞ্চ আগাগোড়াই বলে এসেছে এটা একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা।

‘ফাঁসি মওকুফ করে আজ আদালত মানল যে এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ নয়।’

‘আর তাদের দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ, যে রাজ্য সরকার ও রেল কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারেনি- সেটাও কিন্তু গোধরায় তাদের ব্যর্থতার দিকেই আঙুল তুলছে।’

গোধরা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের সাজা লাঘবের ঘটনা গুজরাট নির্বাচনের ঠিক আগে শাসক দল বিজেপির জন্যও অস্বস্তি ডেকে এনেছে।

তাদের সহযোগী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ভিএইচপি এদিনের রায়ের পর বিবিসি বলেছে, অভিযুক্তদের ফাঁসির জন্য তারা রাজ্যের গুজরাট সরকারের ওপর চাপ দিয়ে যাবেন।

ভিএইচপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সুরেন্দ্র জৈন বলছেন, ‘গোধরায় একটা অত্যন্ত ঘৃণিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল - আর আজ যেভাবে তাতে সাজা মওকুফ করা হলো তা কিছুতেই মানা যায় না।’

‘কেন আদালত তাদের ফাঁসি দিল না জানি না... তদন্তে কোথাও ঘাটতি ছিল, না কি এটা বিচারবিভাগের নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলতে পারব না। কিন্তু গুজরাট সরকারকে আমরা বলব এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতেই হবে, কারণ গোধরার দোষীদের ফাঁসি ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই, হতে পারে না।’

 

ভারত সরকারের নিযুক্ত অন্তত দুটি বিচারবিভাগীয় কমিশন, একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম ও পনেরো বছর ধরে মামলা চলার পরও গোধরা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে 'ক্লোজার' এসেছে, তা তাই বোধহয় এখনও বলা যাচ্ছে না।

গুজরাটে গোধরা-পরবর্তী ভয়াবহ দাঙ্গার সময় গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তিনি সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং হিন্দু দাঙ্গাকারীদের পরোক্ষভাবে উসকানি দিয়েছিলেন।তবে কমিশন এসব অভিযোগ খারিজ করে দেয়।