পুরুষ সঙ্গী ছাড়া ভারতীয় নারীদের হজে যাওয়ার প্রস্তাব

ভারতের মুসলিম নারীরা আগামী বছর থেকে যাতে কোনও পুরুষ সঙ্গী ছাড়া হজে যেতে পারেন, সে জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সেই মর্মে একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। খবর বিবিসির।

তবে সেই হজযাত্রী নারীদের বয়স ৪৫-র বেশি হতে হবে, আর পুরোপুরি একলা নয় - তাদের অন্তত চারজনকে দল বেঁধে যেতে হবে বলেও প্রস্তাব করা হয়েছে।

যদিও ভারতের মুসলিম ধর্মীয় নেতারা অনেকেই বলছেন, এই প্রস্তাব শরিয়া বিরোধী এবং মেয়েদের অত দূরে একা একা যাওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই।

কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য দাবি করছে, এটি একটি 'সংস্কারমূলক পদক্ষেপ' এবং তা রূপায়নে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

বস্তুত ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভারতের মুসলিম মহিলারা এবারে দেশের সরকারের কাছ থেকে আরও একটি পরিবর্তনের ঘোষণা পেলেন- যার আওতায় ২০১৮ থেকেই কোনও পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই তাদের হজে যেতে পারার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। শুধু শর্ত থাকবে তাদের বয়স আর দলের ন্যূনতম আকার নিয়ে।

সাবেক আমলা আফজাল আমনুল্লার নেতৃত্বে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যে হজ পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছিল, তারাই সরকারের কাছে এই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে।

ভারতের সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভিও জানিয়েছেন, এই প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে সরকারের মনোভাব খুবই ইতিবাচক।

নকভি বলেন, ‘হজযাত্রার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও উন্নত করার চেষ্টা হয়েছে এই নীতিতে - সেই সঙ্গে কিছু সংস্কারমুখী পদক্ষেপেরও প্রস্তাবনা করা হয়েছে। যেমন এই মহিলাদের একলা হজে যাওয়ার অনুমতি দেয়া।’

‘আমার বিশ্বাস, এর বাস্তবায়নে কোনও ধরনের সমস্যা হবে না - আর ২০১৮ সালের হজযাত্রা এই নীতি অনুসরণ করেই হবে।’

হজ পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আফজাল আমানুল্লা দাবি করেছেন, এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য তারা ইতিমধ্যেই সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতিও পেয়েছেন- যার অর্থ হল আগামী বছর থেকে ৪৫ ঊর্ধ্ব মহিলাদের কোনও দল যদি হজে যেতে চান, তাদের সৌদি ভিসা পেতে কোনও সমস্যা হবে না।

তবে ভারতে মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের অনেকেই বলছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ ও ভারতের মধ্যে যা-ই সমঝোতা হোক না কেন, মহিলাদের একলা হজে যাওয়াটা ইসলাম বিরোধী।

দিল্লির ফতেহপুরি মসজিদের শাহী ইমাম মুফতি এম মুকররমের কথায়, ‘ইসলামিক আইন ও মুসলিম পার্সোনাল ল-তে পরিষ্কার বলা আছে কোনও মহিলাই তার 'মা‌হ্‌রাম' ছাড়া সফর করতে পারবেন না। মা‌হ্‌রাম মানে তার স্বামীও হতে পারেন, কিংবা অন্য কোনও পুরুষ সঙ্গী যার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। মুসলিম মহিলাদের জন্য এই শর্ত মানাটা বাধ্যতামূলক।’

জমিয়ত-ই-উলেমা হিন্দের মুফতি হুজাইফা কুরেশিও বলছেন, মুসলিম মহিলাদের যদি ভারতে থেকে এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবে যেতে হয় তাহলে মা‌হ্‌রাম সঙ্গে থাকতেই হবে।

যদিও এই ব্যাখ্যার সঙ্গে আদৌ একমত নন ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের কর্ণধার জাকিয়া সোমান।

বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, এ ক্ষেত্রে বরং মেয়েদের বয়সের সীমা বা দল বেঁধে যাওয়ার শর্তটাও তুলে দেয়া উচিত।

সোমানের কথায়, ‘যেহেতু কেন্দ্রের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত কমিটি এ কথা বলেছে, আমরা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই। কিন্তু চারজন মেয়ের দল বেঁধে যাওয়ার বাধ্যবাধকতাই বা কেন রাখা হয়েছে? কেন জুড়ে দেয়া হচ্ছে ৪৫ বছরের শর্ত?’

তিনি আরও বলছেন, ‘এই যে বলা হচ্ছে মা‌হ্‌রাম ছাড়া মেয়েরা হজে যেতে পারবে না, এটা তো কোরানে নারীর প্রতি যে ন্যায় ও সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে তার সম্পূর্ণ বিরোধী।’

জাকিয়া সোমান আরও জানাচ্ছেন, কোন দেশের মহিলারা কী শর্তে হজে যেতে পারবেন, সেটা নির্ভর করে সেই দেশের সঙ্গে সৌদি কর্তৃপক্ষের বোঝাপড়ার ওপর - আর সেই সমঝোতার শর্ত দেশ-ভেদে আলাদাও হয়।

তার সংগঠন চায় ভারত বরং সৌদির সঙ্গে আরও দরকষাকষি করে একলা ও সব বয়সের মেয়েদেরই হজে যাওয়ার অনুমতি আদায় করুক- যদিও ভারতের মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট তারা সেটা কিছুতেই হতে দিতে চাইবেন না।