• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

রাম রহিমের ডেরার পুরুষদের পরিণতি!

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:৩৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

দুই অনুসারীকে ধর্ষণের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং তাঁর ডেরায় কাজ করা পুরুষদের খোজা করে রাখতেন। ডেরার সাবেক সদস্য গুরদাস সিং তুরের এই দাবির সত্যতা পেয়েছে হরিয়ানা পুলিশ।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাম রহিমের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ওই স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন এখন সিবিআইয়ের হাতে। সেখানে দেখা গেছে, রাম রহিমের ওই সহযোগীকে জোরপূর্বক খোজা করে রাখা হয়েছে।

রাম রহিমের সাজা ঘোষণার পর তাঁর হরিয়ানায় সিরসার ডেরার সাবেক সদস্য গুরদাস সিং তুর পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, রাম রহিম তার ডেরার পুরুষ সদস্যদের খোজা করে রাখতেন। এই খোজা পুরুষদের দায়িত্ব ছিল সাধ্বীদের থাকার জায়গা পাহারা দেওয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরিয়ানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ডেরার গ্রেপ্তার হওয়া আরেক সদস্যকে খোজা করে রাখারও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে পঞ্চকুলা জেলার পুলিশ কমিশনার এ এস চাওলা বলেন, এটা খুবই স্পর্শকারত একটি বিষয়, তাই এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, রাম রহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে।

রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার দিন তাঁকে নিয়ে পালাতে পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা ছড়িয়েছিলেন পালিত কন্যা হানিপ্রীত। আর হরিয়ানার পঞ্চকুলায় এই সহিংসতার জন্যই তিনি ডেরা থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ রুপি বণ্টন করেছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হানিপ্রীত এবং ডেরার দুই সদস্য চামকর সিং ও দান সিংকে জিজ্ঞাসাবাদে হরিয়ানা পুলিশ এই তথ্য পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ আগস্ট দুই নারীভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে করা দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় রাম রহিমকে। এরপর রোহতক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারে নেওয়া হয়। এতে রাম রহিমের সমর্থকেরা পঞ্চকুলা এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩১ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হন। পরে গত ২৮ আগস্ট রাম রহিমকে দুটি মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন সিবিআই আদালত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হরিয়ানা পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, হানিপ্রীতসহ গ্রেপ্তার অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করার দিন ডেরার সদস্য চামকর ও দান সিংকে সোয়া কোটি রুপি দিয়েছেন হানিপ্রীত। সেই অর্থেই সেদিন পঞ্চকুলায় তাণ্ডব ছড়ানো হয়। হানিপ্রীতের আগে চামকর ও দান সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা এখন বিচারিক হেফাজতে আছেন।

পুলিশ কমিশনার এ এস চাওলা বলেন, হানিপ্রীত তদন্ত সংস্থাকে মোটেও সহায়তা করছেন না। বরং তিনি বিভ্রান্ত করছেন। তাঁর সহযোগী সুখদীপ কৌরও একই কাজ করছেন।

রাম রহিমের ধর্ষণের মামলার সাজা ঘোষণার ৩৮ দিন পর ৪ অক্টোবর হরিয়ানা পুলিশ চণ্ডীগড় থেকে হানিপ্রীতকে গ্রেপ্তার করে।

হানিপ্রীতের বিরুদ্ধে পুলিশ দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছে। অভিযোগ, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর রাম রহিমকে নিয়ে দেশ ছাড়ার চক্রান্তও করেছিলেন তিনি। আরও অভিযোগ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায় যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, এর পেছনেও ছিল হানিপ্রীতের হাত।

৩৬ বছরের হানিপ্রীতের আসল নাম প্রিয়াঙ্কা তানেজা। বিশ্বাস গুপ্ত নামের একজনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। স্বামী ছিলেন রাম রহিমের ভক্ত ও ডেরা সচ সউদার একনিষ্ঠ কর্মী। রাম রহিমের নজরে পড়তে প্রিয়াঙ্কার দেরি হয়নি। এরপর ক্রমে ক্রমে তিনি রাম রহিমের ঘনিষ্ঠতম হয়ে ওঠেন। নতুন নাম হয় হানিপ্রীত। রাম রহিমের তৈরি মোট ছয়টি সিনেমার তিনিই ছিলেন নায়িকা।

বিশ্বাস গুপ্তর অভিযোগ, ডেরায় তিনি নিজে রাম রহিমের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কাকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছেন। রাম রহিমের চাপেই জোর করে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো হয়। এরপর থেকেই হানিপ্রীত স্বঘোষিত ধর্মগুরুর ২৪ ঘণ্টার সঙ্গী।