মুসলিম নয় বলেই লাস ভেগাসের হত্যাকারীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হচ্ছে না!
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে গুলি করে ৫৯ জনকে হত্যা ও ৫ শতাধিক মানুষকে আহত করার জন্য দায়ী ব্যক্তি স্টিফেন প্যাডককে কেন ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়া হবে না, তা নিয়ে অনলাইনে একটি বিতর্ক শুরু হয়েছে।
তাকে সন্ত্রাসী না বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ‘নিঃসঙ্গ শিকারি’ (লোন উলফ), ‘দাদামশাই’ (গ্র্যান্ডডেড), ‘জুয়াড়ি’ কিংবা ‘সাবেক ‘হিসাবরক্ষক’ হিসেবে। নেভাডার বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সী বন্দুকধারী স্টিফেন প্যাডক ম্যান্ডেলে বে হোটেলের ৩২ তলা থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। লাস ভেগাসে সেই সময় রাউট নাইনটি ওয়ান নামে তিন দিনের কান্ট্রি মিউজিক ফেস্টিভাল চলছিল, যেখানে ২২ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিল।
কেন এ হামলাটি সে চালিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে তার কোনো যোগসাজশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্ক বিকৃতির কোনো লক্ষণও তার ছিল না। এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে অনেকেই লিখছেন- প্যাডক যদি একজন মুসলিম হতো, তা হলে ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই তার নামের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি যুক্ত হয়ে যেত।
এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তার যোগসাজশ আছে কিনা সেটি প্রমাণের জন্যও অপেক্ষা পর্যন্ত করা হতো না। স্টিফেনের বেলায় এমনটি কেন হল না তা নিয়েই আলোচনা করছেন সেলেব্রিটি, টিভি ব্যক্তিত্ব এবং শিক্ষাবিদরা। অনেকেই মনে করছেন শ্বেত গাত্রবর্ণের কারণেই তাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হচ্ছে না।
নেভাডা রাজ্যের আইনে ‘সন্ত্রাসী তৎপরতা’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- ‘যে সহিংস কর্মকাণ্ড জনসাধারণের মৃত্যু অথবা ব্যাপক শারীরিক ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত’। আর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আমেরিকা ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের’ তিনটি বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করে, যারা মানুষের জীবনের জন্য বিপজ্জনক এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনের ব্যত্যয় ঘটায়, যারা সরকার কিংবা জনসাধারণকে ভয় দেখাতে কিংবা কোনো কিছু করার জন্য বাধ্য করতে চায় এবং এসব ঘটনা প্রাথমিকভাবে আমেরিকার অভ্যন্তরে ঘটে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও বলছে, এই ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক অথবা সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরকার, সাধারণ জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখানোর বা বাধ্য করার কিংবা ওই রকম কোনো কিছু করার একটি অভিপ্রায় অবশ্যই আছে। ’
নেভাডার রাজ্য আইনের একটি সংজ্ঞার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন- আইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও লাস ভেগাসের শেরিফ জোসেফ লম্বার্ডো সংবাদ সম্মেলন করে কেন প্যাডককে একজন ‘নিঃসঙ্গ হামলাকারী’ বা ‘লোন উলফ টাইপ অ্যাক্টর’ বলে বর্ণনা করলেন?
সোমবারের হামলার পর থেকে টুইটারে ‘লোন উলফ’ বাগধারাটি দুই লাখ বারেরও বেশি ব্যবহার হয়েছে। আর ‘সন্ত্রাসী হামলা’ ব্যবহার হয়েছে এক লাখ সত্তর হাজার বারের বেশি বার, যেখানে ব্যবহারকারীরা তুলে ধরেছেন মানুষকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তাদের গাত্রবর্ণ কীভাবে ভূমিকা রাখছে।
ফেসবুকেও এ আলোচনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার মুরসাল লিখেছেন- ‘তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না? সম্ভবত তার চেহারাটা আরব নয় বলেই!
যদিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্যাডককে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা না দেয়ার জন্য মূলধারার গণমাধ্যম ও কর্মকর্তাদের ব্যাপক সমালোচনা করা হচ্ছে, কিন্তু প্যাডককে ‘সন্ত্রাসী’ না বলার পক্ষেও যুক্তি আছে অনেকের।
ডন ইনভারসো নামে একজন টুইটারে লিখেছেন- এটি সন্ত্রাসবাদ নয়। সন্ত্রাসবাদ ব্যবহার করা হয় মানুষকে ভয় দেখিয়ে তার রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তনের জন্য। এটি একটি গণহত্যাকাণ্ড। এম জি মিচেল লিখেন- ‘তারা যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কোনো প্রমাণ খুঁজে না পায়, তা হলে স্টিফেন প্যাডক একজন গণহত্যাকারী। সন্ত্রাসীর সংজ্ঞায় সে পড়ে না’। বিবিসি বাংল