• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মিয়ানমার আসলে কী চায়?

প্রকাশ:  ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৩৫
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলেও রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ হয়নি৷ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে প্রকাশ , এখনো ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়৷ স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, প্রতিরাতেই বাংলাদেশে তারা ঢুকছে৷ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা কমে এলেও বন্ধ হয়নি৷ প্রতিদিন এখনো গড়ে এক-দেড় হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে৷ গত এক সপ্তাহে সাত হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে৷ যারা আসছেন, তারা বলছেন, এখনো নির্যাতন চলছে৷ বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের চলে যাওয়ার জন্য রাখাইনে মাইকিং করা হচ্ছে৷

কক্সবাজারের সাংবাদিক আব্দুল আজিজ জানান, গত তিন দিন আমরা সীমান্তের এপার থেকে ওপারের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আগুন জ্বলতে দেখেছি৷ এমনকি মেঙ্গলবারও আগুন জ্বলতে দেখা যায়৷ তিনি বলেন, এখন রোহিঙ্গারা শাহপরী দ্বীপসহ আরো কিছু সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছেন৷ কৌশল হিসেবে তারা রাতের বেলায় প্রবেশ করেন৷ মঙ্গলবারও কমপক্ষে এক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছেন৷ যারা আসছেন তারা বলছেন, রাখাইনে নির্যাতন এখনো চলছে৷ বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং অব্যাহত আছে৷

২৫ অগস্ট থেকে নির্যাতনের মুখে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ মিয়ানমারের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইটকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বাংলাদেশে ঢোকার জন্য রাখাইনের পশ্চিমাঞ্চলের দুই গ্রামের মধ্যবর্তী সীমান্তের কাছে ১০ হাজারেও বেশি মানুষ জড়ো হয়েছেন৷ তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷

তবে মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের মুখপাত্র গ্লোবাল নিউ লাইট তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যেতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের বারবার আশ্বস্ত করতে চাইছে, রাখাইনে তারা এখন নিরাপদ৷ তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা নিজেদের ইচ্ছায় বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গ্রামবাসী ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগছে। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা ক্রমাগত তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

নিজেদের গ্রাম থেকে রাখাইন বৌদ্ধঅধ্যুষিত গ্রামগুলো পার হয়ে যেতেও ভয় পাচ্ছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আরাকান প্রজেক্টের প্রতিনিধি ক্রিস হ্যারিস এএফপিকে বলেছেন, গ্রামপ্রধান যদি গ্রাম ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন, সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র গ্রামবাসী সেই সিদ্ধান্ত মেনে গ্রাম শূন্য করে পালিয়ে যায়।

সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রস্তাব দেয় মিয়ানমার। তবে মিয়ানমার বলছে, তারা ২৫ অগাষ্ট থেকে বাংলাদেশে যারা এসেছে তাদের যাচাই-বাছাই করে ফেরত নেবে৷ কিন্তু এর আগে আরো যে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের ব্যাপারে মিয়ানমার নীরব। সূত্র বলছে, এই যাচাই-বাছাইও মিয়ানার এককভাবে করতে চায়।

কিন্তু বাংলাদেশ চায় তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতে মিয়ারমার- বাংলাদেশ যৌথভাবে তা করুক৷ আর মিয়ানমার যদি তাদের দেয়া নাগরিকত্বের কার্ড শুধু বিবেচনা করে, তাহলে সে রকম রোহিঙ্গার সংখ্যা সাত হাজারের বেশি হবে না। একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু তার রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত নয়৷ বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হোক , রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ হোক এবং কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়িত হোক৷ সহিংসতা অব্যাহত রাখা ছাড়াও মিয়ানমার এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তাদের আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমি-বড়ি-ঘর রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিগ্রহণ করবে৷ এমনকি রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের ফেরত নেবে, তাদের ‘উন্মূক্ত কারাগারে' রাখা হবে৷ তাই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও সতর্ক পর্যবেক্ষণে রেখেছে ঢাকা।

নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) বলেন, মিয়ানমারের মন্ত্রী ( টিন্ট সোয়ে) রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ এটাকে সরলভাবে দেখার কোনো সুযোগ নাই৷ তারা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে একটি কৌশল নিয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার যে প্রস্তাব তারা দিয়েছে৷ এটাকে আমি দেখছি চাপ কমানোর একটি কৌশল হিসেবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের কথায় আস্থা স্থাপনের এখনো কোনো যুক্তি নাই৷ কারণ, দেশি এবং বিদেশি সংবাদ মাধ্যম যে খবর দিচ্ছে, তাতে রাখাইনে নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধ হয়নি৷ সেটা অব্যাহত আছে। এমনকি সোমবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের সময়ও সেখানে সহিংসতা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। তাই মিয়ানমার যে মুখের প্রস্তাব দিয়েছে, মনের প্রস্তাব নয়, তা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু চাপ অব্যাহত রাখা গেলে শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে।

সাবেক সামরিক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ আরো বলেন, মিয়ানমারে সহিংসতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। কথা বলছে সিভিল প্রশাসন, যারা সেনাবাহিনীর ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম নয়। কিন্তু যদি দ্বিপক্ষীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত এবং আরো জোরদার করা যায়, তাহলে সেনাবাহিনীরও অবস্থানের পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি৷ কারণ, এই পর্যায়ে চাপের মুখেই মিয়ানমার তার অবস্থান পরিবর্তন করছে। এটাকে কার্যকর পরিবর্তনে রূপ দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে চাপে ফেলতে হবে।

সর্বাধিক পঠিত