• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

রোহিঙ্গারা ‘ক্রিমিনাল’ বলেই মিয়ানমার তাদের তাড়াচ্ছে, দাবি আরএসএসের

প্রকাশ:  ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৪১
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
প্রিন্ট

সারাবিশ্ব যখন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সমবেদনা আর সহমর্মিতা জানাচ্ছে, তখন ভারতের প্রভাবশালী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস ) পরিষ্কার ঘোষণা করলো, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জিহাদি ও সন্ত্রাসবাদীদের যোগসাজশ আছে। আর তাই কিছুতেই তাদের ভারতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এমনকি, রোহিঙ্গারা অপরাধপ্রবণ জাতি বলেই মিয়ানমার থেকে তারা বিতাড়িত হচ্ছে বলে আরএসএস  দাবি করেছে।

আরএসএস -এর প্রধান মোহন ভাগবত স্বয়ং তার বিজয়া দশমীর ভাষণে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে বিজেপি’র আদর্শিক অভিভাবক আরএসএসেরও পূর্ণ সমর্থন আছে।

বিজয়া দশমীর দিনে সঙ্ঘের প্রধান বা সরসঙ্ঘচালক যে ভাষণ দেন, সেটাকে আরএসএসের সংগঠন ও প্রচারকদের জন্য বার্ষিক দিকনির্দেশনা হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। আর এবারে সেই ভাষণে নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে মোহন ভাগবত যে ভাষায় ও ভঙ্গিতে রোহিঙ্গাদের আক্রমণ করেছেন, তা ছিল প্রায় নজিরবিহীন।

প্রায় একই সুরে তিনি কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশি, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’দেরও একহাত নিতে ছাড়েননি। বলেন, আমরা এখনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের সমস্যাই সমাধান করতে পারিনি। তার মধ্যে মিয়ানমার থেকে এই নতুন সমস্যা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে!’

কিন্তু রোহিঙ্গাদের জন্য তার আক্রমণ ছিল অনেক তীব্র ও অনেক ঝাঁজালো। মোহন ভাগবত বলেন, রোহিঙ্গা ও নানান জিহাদি জঙ্গিদের মধ্যে যোগসাজশের কথা ক্রমেই সামনে আসছে।

এই ধরনের লোকজন যদি ভারতে আসতে থাকে, তাহলে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দেখা দেবে। কিন্তু কেন রোহিঙ্গারা ভারতে আসতে চায়? কোন পটভূমি থেকে তারা আসছে সেটা ভালো করে দেখুন- এদেশে এলে তারা শুধু আমাদের চাকরিবাকরি, সম্পদের ওপরই চাপ সৃষ্টি করবে না, দেশের নিরাপত্তাকেও বিপন্ন করবে।

তবে তারপর তিনি মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা অনেককেই স্তম্ভিত করবে।

মোহন ভাগবত বলেন, মিয়ানমার থেকে কেন তাদের বের করে দেওয়া হচ্ছে জানেন? ইতিহাস বলে, রোহিঙ্গারা খুব সহিংস জাতি, নানা অপরাধমূলক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে তারা যুক্ত এবং এখন নানা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গেও তারা জড়িয়ে পড়ছে। ফলে মিয়ানমার যে তাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চাইবে, সেটা খুব স্বাভাবিক।

জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রোহিঙ্গা বিতাড়নের সঙ্গে যে ‘এথনিক ক্লিনসিং’ বা ধর্মীয় ভিত্তিতে গণহত্যা চালানোর তুলনা টানছেন, মোহন ভাগবত পরিষ্কার করে দিয়েছেন তিনি সেই তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না।

বরং জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই যে ভারতকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আরএসএস  প্রধান সে কথাই স্পষ্ট জানিয়েছেন। ভারতে বসবাসকারী চল্লিশ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তার প্রতি ইঙ্গিত করেই তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, রোহিঙ্গারা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আর সরকারও এই ভাবনার সঙ্গে একমত বলেই মনে হচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দাদের মধ্যে যে শত শত নির্যাতিত হিন্দুও আছেন, সেটাও এতদিনে সুবিদিত। সারাবিশ্বে হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষায় যারা নিজেদের নিবেদিত বলে দাবি করে থাকে, সেই আরএসএসের প্রধান অবশ্য মিয়ানমারের এই হিন্দুদের নিয়ে তার ভাষণে একটি শব্দও খরচ করেননি।

নাগপুরে সরসঙ্ঘচালকের বিজয়া দশমীর এই ভাষণে আরএসএসের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা যেমন হাজির ছিলেন, তেমনি সেখানে উপস্থিত থাকতে দিল্লি থেকেও উড়ে গিয়েছিলেন বিজেপির প্রবীণ সিনিয়র নেতা ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানিও।

নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আরএসএসের মতপার্থক্য সম্প্রতি সামনে এলেও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দু’পক্ষই যে একাট্টা, মোহন ভাগবতের বক্তৃতায় সেটাই পরিষ্কার হয়ে গেল।