• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ইরানের পাশে রাশিয়া, চিন্তায় আমেরিকা

প্রকাশ:  ০২ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:০৩
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচীর বিষয়ে ২০১৫ সালে হওয়া চুক্তিকে খতিয়ে দেখতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কংগ্রেস থেকে বিতর্ক ওঠা পরমাণু চুক্তিটি ইরান মেনে চলছে কিনা তা জানতেই ট্রাম্পের এমন অবস্থান। কংগ্রেসও মনে করে, জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সংস্থা সঠিকভাবে তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া মনে করে ইরানের উপর এই চাপ প্রয়োগ অর্থহীন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওয়াশিংটন মনে করছে, ইরানকে এই ব্যাপারে সুরক্ষা দিচ্ছে রাশিয়া।

ন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ চুক্তি অনুযায়ী ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখেছে। তাদের মতে চুক্তির বাইরে এখনও যায়নি ইরান।

কিন্তু কংগ্রেস মনে করে, আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাম্পকে চুক্তির বিষয়টিতে একটি সমাধানে আসতে হবে। তাই ইরানের সামরিক কর্মসূচীতে পরমাণু অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে না তা জানতে সে দেশে পর্যবেক্ষক পাঠাতে আগ্রহী ট্রাম্প। কিন্তু রাশিয়া মনে করে চুক্তির বাইরে যেহেতু ইরান পরমাণু কর্মসূচী চালাচ্ছে না, কাজেই ওয়াশিংটনের এই উদ্যোগ তেহরানকে বিব্রত করা ছাড়া আর কিছুই নয়!

এ বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক মিখাইল উলিয়ানভ শুক্রবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সামরিক স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দেয়ার কোনো কারণ নেই। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএর কোনো আহ্বান জানানোরও প্রয়োজন হবে না।

অবশ্য সব দিক ঠিক রেখে চলা আইএইএ’র প্রধান ইউকিয়া আমানো বলছেন, ‘সেকশন টি’ (ইরানের পরমাণু চুক্তি) তেহরান মেনে চলছে কিনা তা জোর দিয়ে বলা মুশকিল। তাদের নজরে সন্দেহজনক কিছু ধরা না পড়লেও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া কঠিন। ইউকিয়ার মতে, আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত এই পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থার কাছে নাকি তেমন কোনো উন্নত প্রযুক্তি নেই।   

সেকশন টি বা জেসিপিওএ (Joint Comprehensive Plan of Action) চুক্তির মাধ্যমে ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের নকশা এবং উৎপাদন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। যদিও ইরান মনে করে, পশ্চিমা দেশগুলোকেও তা মেনে চলা উচিত। যদি পশ্চিমারা পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ বন্ধে পিছিয়ে না যায়, তবে তাদেরকে আটকে রাখাটা নিয়ম বিরুদ্ধ।

যদিও জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বৃহস্পতিবার ইরানের সামরিক স্থাপনা পরিদর্শনের বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। তবে রুশ কর্মকর্তা মিখাইল উলিয়ানভ সে সমালোচনাও নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরানের সামরিক স্থাপনা পরিদর্শনে মার্কিন সরকারের এ দাবি অগভীর চিন্তার দৃষ্টান্ত।

প্রথমদিকে নিকি হ্যালি অবশ্য ইরানকে সুরক্ষা দেয়া দেশটির নাম সরাসরি বলেননি। তবে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দেশটি রাশিয়া। নিকির বক্তব্য ছিল, এটা পরিস্কার যে কিছু দেশ ইরানকে রক্ষা করতে চেষ্টা করছে। পরমাণু কর্মসূচী তেহরান সত্যিই করছে কিনা তা পরিদর্শনের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া না গেলে ‘সেকশন টি’ একটি মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হবে। 

ফলে মস্কো এর জবাব দিতেও বিলম্ব করেনি। রাশিয়ার ওই কর্মকর্তা মিখাইল উলিয়ানভ বলেন, ইরানের বিষয়ে মার্কিন দাবি পরিস্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আর তা হচ্ছে, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা চুক্তির দায় ওয়াশিংটন অন্য পক্ষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, সেকশন টি যখন পাস হয় তখন মার্কিন ক্ষমতায় ছিলেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন্তু রিপাবলিকান দলের টিকিট নিয়ে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প ওবামার অনেক সিদ্ধান্তেই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ইরানের পরমাণু কর্মসূচী সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের মতো ট্রাম্পেরও রয়েছে ভিন্ন ধারণা। যদিও ইরান সারা বিশ্বে আলোচিত তার সামরিক শক্তির জন্যই। বলা হয়, ইরানই এখন মধ্যপ্রাচ্যের একক বৃহৎ শক্তি।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরানই প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে রয়েছে। দেশটির রয়েছে একটি সুশৃঙ্খল প্রতিরক্ষা বাহিনী। প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি সামরিক ড্রোন ভূপাতিত কিংবা ইলেকট্রনিক্স জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে তা ভূমিতে নামিয়ে আনা একমাত্র ইরানের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আগেই দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন, ইরান শুধুমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি শক্তিশালী করবে না, পাশাপাশি বিমান, সমুদ্র ও সেনা বাহিনীকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তিনি এটাও বলেছেন, যখন ইরানের প্রতিরক্ষার বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তার সময় আসবে, তখন কারও অনুমতির তোয়াক্কা করা হবে না।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন রফিকদোস্ত বলেছেন, বেশকিছু ক্ষেত্রে ইরানের সামরিক সক্ষমতা আমেরিকা ও রাশিয়ার সঙ্গে তুলনীয়। শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাই শক্তিশালী নয় বরং এ রকম বেশকিছু শক্তিশালী দিক রয়েছে যা উন্নত দেশ দু’টির মতোই।