হোমিও ওষুধে সুফল মিলছে করোনার চিকিৎসায়!
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের স্বীকৃত কোনো ওষুধের সন্ধান এখনও মিলেনি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পেতে টিকা ও কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। এর মধ্যে প্রাচীন হোমিও পদ্ধতি করোনার চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা রাখছে বলে আলোচিত হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে সম্মুখ সমরে থাকা পুলিশ বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মূল চিকিৎসা চলছে এলোপ্যাথিক পদ্ধতিতে। তবে এর বাইরে পুলিশের অনেক সদস্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন হোমিও চিকিৎসায়। ইতিমধ্যে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অনানুষ্ঠানিকভাবে জড়িত হয়েছেন কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। হাসপাতালের আউটডোরে তিনি একটি ডিসপেনসারিও দিয়েছেন। তার চিকিৎসায় করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের অনেকেই সুফল পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
হোমিও চিকিৎসক রাশিদুল হক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে গত ১৬ মে থেকে পুলিশ হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তিনি করোনার কোনো চিকিৎসা করছেন না, তবে প্রতিরোধমূলক ওষুধ দিচ্ছেন যা কার্যকর হচ্ছে বলে দাবি করছেন তিনি।
রাশিদুল হক বলেন, ‘আমি এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যকে প্রতিরোধমূলক ওষুধ দিয়েছি। তাদের কেউ এখনো করোনা পজিটিভ হননি। আর ৫০ জন কোভিড-১৯ রোগীকে ওষুধ দিয়েছি যা সেবন করে এসব রোগী তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে সুস্থ হয়েছেন।’
রাশিদুল বলছেন, তিনি যে ওষুধ দিচ্ছেন তা প্রতিরোধমূলক এবং এটি নিয়ম মতো সেবন করলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও সক্রিয় হয়ে উঠে এবং মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
ইতিমধ্যেই পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও স্বরাষ্ট্রসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়েও তিনি চাহিদা পেয়ে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সরবরাহের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, করোনার কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশে এর চিকিৎসা হচ্ছে এবং অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।
রাশিদুল বলেন, ‘হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগীরা প্রচলিত এলোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি নিতে পারছেন এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যারা আগ্রহী হন তাদেরকেই আমি ওষুধ দিচ্ছি এবং অনেকেই জানিয়েছেন তারা উপকার পেয়েছেন।’
হোমিও চিকিৎসক বলেন, ‘করোনার যেসব লক্ষণ অর্থাৎ জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি- এসবের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই বেশ জনপ্রিয়। এখন করোনায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও এসব উপসর্গের যেটি বেশি সেটিকে ধরে আমরা ওষুধ দিচ্ছি। তাতে অনেকে উপকার পাচ্ছে। আর যারা আক্রান্ত হননি তাদের জন্য প্রতিরোধমূলক পথ্য দেয়া হচ্ছে।’ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় খরচ খুবই কম হওয়ায় রোগীরা সহজেই তা নিতে পারছেন বলে জানান তিনি।
তবে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম শান্ত বলছেন, পুলিশ হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল ও গাইডলাইন অনুসরণ করছেন।
তিনি বলেন, ‘হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার সাহেব নন কোভিড জোনে বসছেন। তবে কোভিড-১৯ রোগীদের কাছে তার যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই করোনায় আক্রান্তরা তার ওষুধে কেউ সেরে উঠেছেন এটা বলা যাবে না। আর কেউ যদি নিজ উদ্যোগে তার ওষুধ নিয়েও থাকেন তাহলে তাতে তিনি কী ফল পেয়েছেন তাও আমরা জানি না।’
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন বক্তব্য এলেও পুলিশ হাসপাতালেরই কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিভিন্নভাবে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে।