• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

‘লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচতে দরকার সচেতনতা ‘

প্রকাশ:  ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৩:২৩ | আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৮, ১৩:২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ঢাকা, ১৩ জুলাই, চাঁদপুর পোষ্ট : অধ্যাপক মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল) লিভার ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ। ইন্টারভেনশনাল এন্ডোস্কোপিতে তার রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। তিনি এ পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি এন্ডোস্কোপি, পাঁচ হাজারের বেশি কোলোনোস্কপি ও এক হাজারের ওপর ইঅারসিপি করেছেন। লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। হেপাটাইটিস বি চিকিৎসায় নতুন ওষুধ ন্যাসভেক নিয়ে গবেষণা ডা. স্বপ্নীলের অন্যতম কৃতিত্ব। লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক পদ্ধতি ট্রান্স অার্টারিয়াল কেমো এম্বোলাইজেশনের পুরোধা। 

লিভার সিরোসিস নিয়ে তিনি কথা বলেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একটি জনপ্রিয় অনলাইনের প্রতিবেদক।

সাংবাদিক: অামাদের চারপাশে লিভার সিরোসিসে অাক্রান্ত রোগীর প্রকোপ বাড়ছে। লিভার সিরোসিস কী?

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): কারণে লিভারের কোষগুলো যদি মারা যায় সেখানে ফাইব্রোসিস ও নডিউল তৈরি হয় এবং লিভারের স্বাভাবিক আণুবীক্ষনিক গঠন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহৃত হয়। লিভারের ভিতরে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। রক্তের বিভিন্ন রাসায়নিক দূষিত পদার্থ যা লিভার পরিস্কার করে থাকে তা শরীরে জমা হয়ে তখন বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। কারণ যাই হোক না কেন এইভাবে সিরোসিস পর্যায়ে উপণীত হয়। পুরো লিভার জুড়ে যদি ফাইব্রোসিস এবং নডিউল তৈরি হয় তখন এটাকে লিভার সিরোসিস বলা হয়।

সাংবাদিক: লিভার সিরোসিসের কারণগুলো কী কী?

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): বিভিন্ন কারণে লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। আমাদের দেশে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ফ্যাটি ভাইরাস, এ্যালকোহল অন্যতম কারণ। এছাড়া আরও কারণ রয়েছে। বংশগত জটিলতার জন্য লিভারে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও কপার জমে যাওয়ার জন্যেও সিরোসিস হতে পারে। পিত্তনালী র্দীঘ সময় ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া। লিভারের ধমনী বন্ধ হয়ে যাওয়া। শরীরে ইম্যুন সিস্টেমের জন্য এবং কোন কোন ওষুধ, যেমন- মিথোট্রিক্সেট (Methotrexate) দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে সিরোসিস হতে পারে। ৫-১০% ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিসের কোন কারণই খুজে পাওয়া যায় না, এগুলোকে ক্রিপ্টোজেনিক সিরোসিস বলা হয়।

সাংবাদিক: লিভার সিরোসিস রোগের লক্ষণগুলো কী কী?

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর প্রথম দিকে লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। একটা পর্যায়ের পর তার কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন: ক্লান্তি বা অবসাদ, বমি বমি ভাব ও বমি ক্ষুধামন্দা, পেটফাপা, ধীরে ধীরে পেটটি বড় হতে থাকে এবং পায়ে পানি জমে ফুলে যায়। ধীরে ধীরে শরীর দূর্বল হতে থাকে এবং ওজন কমে যায়, চর্ম এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। বমির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে বা শুধু রক্তবমি হতে পারে। মুখের স্বাদ পরিবর্তন বা স্বাদহীন, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। পাইলস থেকে রক্ত যেতে পারে, কখনো ডায়রিয়া কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত স্বল্পতা, নারীর মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা এমোনেরিয়া, পুুরুষ এবং নারীর যৌন দুর্বলতা আসতে পারে।

সাংবাদিক: লিভার সিরোসিসের প্রতিকার কীভাবে করা যায়?

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): যেহেতু এটি মারাত্মক রোগ এবং এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল তাই প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ আর সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতাই পারে আমাদেরকে এরকম ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচাতে।

সাংবাদিক: লিভার সিরোসিসস থেকে বাঁচার জন্য করনীয় কী?

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): হেপাটাইটিস বি এর প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন নিতে হবে যা এখন খুবই সুলভ, এটি আপনাকে পূর্বেই নিতে হবে । হেপাটাইটিস `বি` ভাইরাসে আক্রান্ত মা গর্ভবতী হলে সন্তানের জন্মদানের সঙ্গে সঙ্গে দু`রকম টীকা দেয়া বাঞ্ছনীয় ৷লিভার সিরোসিসের যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মাদকদ্রব্য এড়িয়ে চলতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ ও ফার্স্ট ফুডের কারণে অতিরিক্ত মেদ জমে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে ৷ কোন রকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে ঝাড় ফুঁক, কবিরাজ, ওষুধ বিক্রেতার চিকিৎসা পরিহার করতে হবে।

সাংবাদিক: লিভার সিরোসিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিৎ?

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): লিভার সিরোসিস-এ আক্রান্ত রোগীদের কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিৎ। সিরোসিস দুই ধরণের হয়- কমপেনসেটেড এবং ডিকমপেনসেটেড সিরোসিস। একজন সম ওজনের স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে সিরোসিস-এ আক্রান্ত রোগীর বেশি ক্যালরি গ্রহণের প্রয়োজন হয়। প্রতি কেজি ওজনের জন্য ২৫ থেকে ৩৫ কিলোক্যালরী শক্তি যুক্ত খাবার এবং প্রতি কেজিতে ১ থেকে ১.২ গ্রাম প্রোটিন খাবারের মেন্যুতে থাকতে হবে। প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর হালকা খেয়ে নেয়া উত্তম। হালকা খাবারের মধ্যে টোস্ট, বিস্কিট, কেক, সেরিয়েল, দুধের তৈরি খাবার রাখা যেতে পারে। এছাড়া মল নরম রাখার জন্য বেশি আঁশ যুক্ত খাবার যেমন শাক সবজি খাওয়া দরকার। ডিকপেনসেটেড সিরোসিসের রোগীদের রক্তে অ্যালবুমিনের পরিমাণ কমে যায় এবং পেটে পানি চলে আসে। এই রোগীদের মল শক্ত হলে রক্তে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে রোগীর চেতনা হ্রাস হয়। এ কারণে ডিকমপেনসেটেড সিরোসিসের রোগীদের হিসেব করে পানি পান করতে হয়, খাবারে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খেতে হয়। আগে মনে করা হতো প্রোটিন কম খাওয়া উচিৎ, কিন্তু এখন লিভার বিজ্ঞানীরা বেশি প্রোটিন খাওয়ার ব্যপারে উত্সাহিত করেন। তবে, দৈনিক মোট প্রোটিনের পরিমাণ এক-দুইবারে না খেয়ে অল্প অল্প করে চার-পাঁচ বারে খেতে বলা হয়।

সাংবাদিক: ফাস্টফুড, অ্যালকোহল লিভার সিরোসিসের জন্য কেমন ঝুঁকিপূর্ণ?

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): অ্যালকোহলের কারণে সৃষ্ট লিভার রোগের মূল চিকিত্সা হলো অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা। অন্যদিকে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ-এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপদেশ হল খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট- এর পরিমাণ কমিয়ে আনা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, ফাস্টফুড সংস্কৃৃতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট শরীরচর্চা করা।

সাংবাদিক: অাপনাকে ধন্যবাদ অামাদের অনেকক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য।

মামুন অাল মাহতাব (স্বপ্নীল): অাপনার জন্য শুভকামনা।

সংগৃহিত

সর্বাধিক পঠিত