ফরিদগঞ্জে লোভ দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব সেচ প্রকল্পের ভেতরে ইরি-বোরো ধান উৎপাদনে জমির পরিমাণ কমছে
টাকার লোভ দেখিয়ে ফরিদগঞ্জে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার মহোৎসব চলছে। ফলে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে মারাত্মক আকারে ক্ষতি করা হচ্ছে বলে স্থানীয় কৃষি অফিস নিশ্চিত করেছে। এতে করে প্রতি বছরই সেচ প্রকল্পের ভেতরে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফসলি জমি থেকে কেটে নেয়া মাটি দেদার বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে করে প্রতি বছরই চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের অধীন ফরিদগঞ্জের ফসলি জমিতে কাক্সিক্ষত ফসল ইরি-বোরো ধান উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার এ মহোৎসব থামাবে কে-এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
সোমবার সরেজমিনে উপজেলার বালিথুবা পূর্ব, সুবিদপুর পশ্চিম, সুবিদপুর পূর্ব, গুপ্টি পূর্ব ও পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, খননযন্ত্রের সাহায্যে এসব মাটি কেটে অবৈধ ট্রাক্টর ও ট্রাকের সাহায্যে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার হিড়িক পড়েছে ওইসব এলাকায়। এ সময় বালিথুবা এলাকার জমির মালিক মফিজ ও তার ছেলে বলেন, আমাদের জমির মাটির উচ্চতা বেশি থাকায় এ মাটি বিক্রি করেছি একটি ইটভাটায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গল্লাক এলাকার জনৈক কৃষক জানান, এখানে একাধিক ইটভাটার ধোঁয়ায় জমিতে ফসল নষ্ট হয়। যার ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই ইটভাটায় মাটি বিক্রি করছি।
জানা গেছে, ইটভাটার কতিপয় মালিক প্রান্তিক কৃষকদের নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিতে বাধ্য করে। কৃষককে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করার নামে এ মাটি কেটে নেয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। তবে নগদ টাকা পেতে অনেক কৃষক স্বেচ্ছায় মাটি বিক্রি করছেন বলেও জানা গেছে। এভাবে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কাটায় জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাওয়ায় কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি হিসেবে ২৬টি ইটভাটা রয়েছে। ফসলি জমির মাটি বেচাকেনার কাজে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী গড়ে উঠেছেন। তারা বছরের বিভিন্ন সময় (অফ-সিজন) কম দামে একর বা বিঘা চুক্তিতে কৃষকের জমির মাটি কিনে রাখেন। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটার জন্যে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে তা বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করেন। কোনো কোনো কৃষক টাকার লোভে পড়ে সরাসরি ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গুপ্টি গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি কয়েক বছর যাবৎ মাটির ব্যবসা করছেন। তিনি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ফসলি জমির মাটি কিনে রেখেছেন। এক-দেড় ফুট গভীরতায় মাটি কেটে ভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতি বিঘা জমির মাটির জন্যে ৩০-৪০ হাজার টাকা হারে চুক্তিনামা আগেই করে রেখেছেন বলে ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।
পলাশ ইটভাটার মালিক মফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এক ফসলি জমির মাটি কাটার কারণে জমির ক্ষতি হয় না। সরকার আমাদের ব্যবসার স্বার্থে মাটি কাটার বিকল্প ব্যবস্থা না করলে আমরা কী করবো। তিনি আরো বলেন, দেশের সবখানেই ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটা বিক্রি করার বিষয়টি সরকারও ভালোভাবেই জানে। অপরিকল্পিত বাড়ি তৈরিতে ফসলি জমির ক্ষতি হয়-সে বিষয়েও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ওই ইটভাটার মালিক।
গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গণি বাবুল পাটওয়ারী বলেন, ফসলি জমি থেকে কেটে আনা মাটি আনা-নেয়ার ফলে গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হচ্ছে। তবে তার ইটভাটার জন্যে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান।
এ নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ ফসলি জমির মাটি কাটা বেআইনী আখ্যা দিয়ে বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটির ছয় থেকে আট ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে ফসলি জমির মারাত্মক আকারে ক্ষতি হচ্ছে। এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলী হরি বলেন, উক্ত বিষয়ে আমি জেনেছি এবং একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।