তরমুজের মিষ্টি বেড়েছে, কমেছে দাম
রসাল ফল তরমুজ কে না পছন্দ করে। কেউ কেউ মজা করে ‘গরমের আরাম’ বলেও অভিহত করেন এই মৌসুমী ফলটিকে। বাজারে গেলেই চোখে পড়ছে গ্রীষ্মের এই রসাল ফল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজধানীর বাজারে আসছে তরমুজ।
করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ ঘর থেকে তুলনামূলক কম বের হওয়ায় এবার তরমুজের চাহিদা তুলনামূলক কম। এরপরও দিন যত যাচ্ছে বাজারে তরমুজের সরবরাহ তত বাড়ছে। ক্রেতারাও সুযোগ বুঝে কম দামে কিনছেন।
প্রথমদিকে বাজারে আসা তরমুজের চেয়ে এখন বাজারে যে তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তার স্বাদও বেশি। আবার দামও কম। সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে তরমুজের দাম কমে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীতে যে তরমুজ পাওয়া যায় তার বড় অংশই আসে পটুয়াখালী থেকে। এ তরমুজ খুব বেশি দিন পাওয়া যায় না। দেখতে দেখতেই তরমুজের মৌসুম শেষ হয়ে যায়।
তারা জানান, তরমুজ বেশি দিন মাঠে রাখা যায় না। তাই অনেক চাষি পরিপক্ক (বতি) হওয়ার আগেই বাজারজাত শুরু করেন। যে কারণে প্রথমদিকে আসা তরমুজ তেমন মিষ্ট হয় না। তবে এখন বাজারে যে তরমুজ আসছে তার প্রায় সবই পরিপক্ক, সে কারণে মিষ্টি বেড়েছে।
বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ৬-৮ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২২০-২৫০ টাকা। এর থেকে বড় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার মধ্যে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে চারশ টাকা।
হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী কালাম বলেন, গত সপ্তাহে যে তরমুজ আড়াইশ টাকায় বিক্রি করেছি এখন তা ১০০ টাকা বিক্রি করছি। এরপরও ক্রেতা কম। আসলে ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে চলে গেছে। আবার যারা আছে তারও ভয়ে বাহিরে কম বের হচ্ছে। সে কারণে বিক্রি কম।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের ভয় আমাদেরও আছে। কিন্তু জীবন চালাতে হলে তো বাহিরে বের হতেই হবে। আমি আয় না করলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের সাহায্য করার মতো কেউ নেই। তাই আল্লাহ ওপর সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বাহিরে বের হয়েছি।
রামপুরায় ভ্যানে করে তরমুজ বিক্রি করা ঝন্টু বলেন, এখনকার তরমুজ মিষ্টি। দামও তুলনামূলক কম। তবে এখন যে হারে তরমুজ আসার কথা, সেই হারে আসছে না। যে তরমুজ আসছে তাও বিক্রি করতে সময় লেগে যাচ্ছে। গত বছর এই সময়ে একদিনে যে তরমুজ বিক্রি করেছি, এখন পাঁচ দিনে তার সমান বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, তরমুজ এমন এক ধরনের ফল পেকে গেলে আর মাঠে রাখা যায় না। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তরমুজ তুলে ফেলতে হয়। আমাদের ধারণা কিছুদিনের মধ্যে তরমুজের সরবরাহ অনেক বাড়বে। চাষিরা বাধ্য হয়ে কম দামে তরমুজ বিক্রি করে দেবেন। তখন হয় তো দাম আরও কমবে।
ভ্যান থেকে তরমুজ কেনা আলম নামের একজন বলেন, গত সপ্তাহে রামপুরা বাজার থেকেই ২৮০ টাকা দিয়ে একটি তরমুজ কিনেছিলাম। তেমন মিষ্টি ছিল না। আজ এখান থেকে কেটে তরমুজ নিয়েছি। ভালোই মিষ্টি। দামও কম। ১২০ টাকা নিয়েছে। রামপুরা বাজার থেকে কেনা তরমুজের থেকে এটি বড় ছাড়া ছোট হবে না।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, তরমুজে খুব সামান্য ক্যালরি আছে। তাই তরমুজ খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে ফলের মধ্যে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। মৌসুমী এই ফলটির রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হলো ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি খেলে দেহের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসজনিত অসুস্থতা কমে। এ ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসারর ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে না। তরমুজের আরও একটি গুণ হলো এটি চোখ ভালো রাখতে কাজ করে। তরমুজে ক্যারোটিনয়েড থাকায় এ ফলটি চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। একইসঙ্গে চোখের নানা সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে তরমুজ।
চিকিৎসকেরা বলেন, ক্যারোটিনয়েড রাতকানা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তরমুজে প্রচুর পানি এবং কম ক্যালরি থাকায় পেট ভরে তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে না।
এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা উচ্চ পরিমাণে সিট্রুলিন মানব দেহের ধমনির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।