• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

আমানতের ৪৪ শতাংশই কোটিপতিদের দখলে

প্রকাশ:  ০১ জুলাই ২০১৯, ০১:২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দেশে গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে। এতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতাও বেড়েছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুণগত মান না বাড়ায় সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণির কাছেই বেশি সম্পদ ও অর্থ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে এক কোটি টাকা বা এর বেশি আমানত রয়েছে এমন হিসাবের সংখ্যা ৭৫ হাজার ৫৬৩টি। ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের প্রায় ৪৪ শতাংশই এখন কোটিপতিদের দখলে। বাকি ৪৬ শতাংশ লাখপতি ও ১০ শতাংশ অন্যদের দখলে রয়েছে। এক বছর আগে ২০১৭ সালে ৭১ হাজার ৬০০ জন কোটিপতি ও ৪২ শতাংশ আমানত তাদের দখলে ছিল। অর্থাৎ গত এক বছরে নতুন করে কোটিপতি হয়েছে তিন হাজার ৯৬৩ জন এবং তাদের দখলে আরো ২ শতাংশ আমানত চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকিং খাতে সব শ্রেণির আমানতকারীর অ্যাকাউন্ট নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে কোটিপতির প্রকৃত সংখ্যা কত সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়। তবে বাস্তবে কোটিপতির সংখ্যা আরো বেশি বলে জানা গেছে। কারণ এখানে কেবল যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আমানত হিসাবে কোটি টাকার বেশি জমা আছে সেই সংখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অনেকেই আছে, যাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া যারা কালো টাকার মালিক তারাও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় টাকা রাখে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে। সম্পদের সুষম বণ্টন না হওয়াই এর কারণ। দেখা যাচ্ছে, একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের কাছেই আয় ও সম্পদ বেশি কেন্দ্রীভূত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সুফল এ শ্রেণির মানুষই বেশি ভোগ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদও আয়বৈষম্য নিয়ে একই মত দেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির অসিলায় যে অতিরিক্ত টাকা এসেছে তা কমবেশি ৫ শতাংশ লোকের হাতে গেছে। বাকি ৯৫ শতাংশ লোকের হাতে কিছুই যায়নি। আয়বৈষম্য পরিমাপের মানদণ্ড গিনি কো-ইফিসিয়েন্টে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান কী সেটি তুলে ধরে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন গিনি কো-ইফিসিয়েন্ট ছিল দশমিক ৩২ শতাংশ। গত ১০ বছর পর এসে তা দশমিক ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদদের পরিভাষায় বলতে গেলে এটা ভয়ংকর। পৃথিবীর কোথাও বা আশপাশের কোনো দেশে এটা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটিপতিদের দখলে থাকা আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৭৮ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা; যা ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের প্রায় ৪৪.২৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর শেষে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৪৮ জনে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ২৩৭ জন ব্যক্তি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে ৫০ কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা ব্যক্তি ছিল ৯১১ জন। অন্যদিকে গত এক বছরে ৪০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫০ কোটি টাকার কম পরিমাণ অর্থ জমা রাখা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫৮। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজার ১২৯ জন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এক কোটি টাকার বেশি কিন্তু পাঁচ কোটি টাকার কম আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৫৬ হাজার ৯৯ জন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ২৫৮ জনে। এ ছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির টাকার মধ্যে আট হাজার ৬০৪ জন, ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটির টাকার মধ্যে দই হাজার ৮৭৯ জন, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে এক হাজার ৩৯৪ জন, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকার মধ্যে ৯০৬ জন, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকার মধ্যে ৩৩২ জন ও ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ২২০ জন আমানতকারীর হিসাব রয়েছে।

সর্বাধিক পঠিত