বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয়
আসছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয় বাড়ছে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ বৃদ্ধি করা হতে পারে। ফলে আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসবে ৮৭ লাখ মানুষ। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সাড়ে ৭৩ লাখ মানুষ বিভিন্ন ভাতা পাচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুবিধাবঞ্চিত, হতদরিদ্র, বিধবা, অসচ্ছল মানুষ, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় সব ধরনের উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে আগামী বাজেটে। কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণও বাড়বে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট এটি। আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশে বর্তমানে জাতীয় বাজেটের অধীনে একশ পঞ্চাশটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে। সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বৃহত্ কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, দুস্থ নারী, চা বাগানের শ্রমিক, বিধবা ও তালাক প্রাপ্ত নারী, হিজড়াসহ পিছিয়ে পড়া মানুষদের ভাতা দিচ্ছে সরকার। আগামী বাজেটে বয়স্ক ভাতার উপকারভোগী ৪ লাখ, বিধবা ভাতার উপকারভোগী ৩ লাখ, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা সাড়ে ৫ লাখ, জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১০ হাজার চা-শ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা আরও ১৫ হাজারভোগী যুক্ত করা হবে। এজন্য বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন বাজেটে বয়স্ক ভাতা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪৪ লাখ এবং বরাদ্দ ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে এ ভাতা দেওয়া হয়। আগামী বাজেটে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতা বাড়িয়ে ১৫ লাখ ৪৫ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। এছাড়া, বর্তমানে ৯০ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী পরিবারের ছেলেমেয়ে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে সর্বনিম্ন মাসিক ৭০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। আসছে বাজেটে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত এই ভাতার পরিমাণ কিছুটা বাড়নো হতে পারে।
ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসে আক্রান্ত গরিব রোগীদের এককালীন নগদ সহায়তা দেয় সরকার। বাজেটে গরিব রোগীদের জন্য নগদ সহায়তা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ১৫ হাজার রোগী আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। আসন্ন বাজেটে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। এছাড়া বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং তাদের ছেলেমেয়েরা মাসিক ভাতাসহ নানা সুবিধা পাচ্ছে। বর্তমানে ৬৪ হাজার এই সুবিধা ভোগ করছে। নতুন বাজেটে এই সংখ্যা ৮১ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ৭ লাখ দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে এ সুবিধা দেওয়া হবে ৭ লাখ ৭০ হাজার জনকে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়াও, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তার আওতায় ২ লাখ ৭৫ হাজার মাকে সুবিধা দেওয়া হবে। বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন আড়াই লাখ ল্যাকটেটিং মাদার। এর বাইরে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সুবিধা দিতে নতুন করে আরও ১০ হাজার চা শ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। বর্তমান এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাচ্ছেন ৪০ হাজার শ্রমিক, যা আগামী অর্থবছরে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হতে পারে।