১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির
শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে জাতীয় কবির উদ্ধৃতি দিয়ে চাঁসক অধ্যক্ষের উদ্দীপনামূলক বক্তৃতা
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্যে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে। ২০২০ সাল হচ্ছে মুজিববর্ষ। এ মুজিববর্ষের বাজেট যাতে জনকল্যাণমুখী, বাস্তবমুখী এবং আয়-বৈষম্য, ধন-বৈষম্য, সম্পদ-বৈষম্য, সামাজিক-বৈষম্য ও ক্রমবর্ধমান অসমতা হ্রাসকরণ বাজেট হয় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সরকার সমীপে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে। আর এটি সারাদেশের বিভাগীয় শহরসহ বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারের লক্ষ্যে চাঁদপুরসহ দেশের ২৬টি জেলা শহরে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চাঁদপুরে এ সংবাদ সম্মেলন গতকাল ২৫ মে শনিবার সকাল ১১টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ। বিকল্প এ বাজেটের নানাদিক সার সংক্ষেপসহ তুলে ধরেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সৈয়দা নাজমা পারভীন পাপড়ি এবং নেছার আহমেদ।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বিকল্প বাজেটের আকার হচ্ছে (পরিচালন ও উন্নয়ন মিলে) ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকা। যা গত অর্থ বছরের (২০১৮-১৯) অর্থমন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবকৃত বাজেটের তুলনায় ২.৬৭ গুণ বেশি। গত অর্থবছরে সরকারের মোট বাজেট ছিলো ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫শ’ ৭৩ কোটি টাকা। এ বাজেট উত্থাপন আলোচনায় বলা হয়, আমরা অনুমান করি যে, আমাদের প্রস্তাবিত বৃহদাকার বাজেট নিয়ে বেশ কথাবার্তা, সংশয়-সন্দেহ হতে পারে। তবে যুক্তি থাকলে আমাদের প্রস্তাব বর্জন করার কোনো কারণ নেই। কারণ নেই এ কারণে যে, আমরা বেশ দ্রুত গতিতেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল হয়ে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চলেছি।
বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়-প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটের আকার যে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকা, যা অর্থমন্ত্রী আসন্ন অর্থবছরেরর জন্যে যে খসড়া বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন (সম্ভবত ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা) তার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। অর্থাৎ আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট হলো দ্রুত সম্প্রসারণশীল বৃহদায়ন বাজেট। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট যুক্তিসঙ্গত এবং তা দেশের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি বিচারেও যৌক্তিক।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় আসবে ১০ লাখ ২ হাজার ৫শ’ ১০ কোটি টাকা, অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ৮১ শতাংশ যোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়। আর বাজেটের বাকী ১৯ শতাংশ অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নে (২লাখ ৩৭ হাজার ৫শ’ ৮০ কোটি টাকা) যোগান দেবে সম্মিলিতভাবে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্ব (মোট ১ লাখ কোটি টাকা; যেখান থেকে আসবে ঘাটতি অর্থায়নের ৪২%), বন্ড বাজার (মোট ৬৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা; অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের ২৭%), সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণগ্রহণ (মোট ৫০ হাজার কোটি টাকা;¬¬¬ ঘাটতি অর্থায়নের ২১%) এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ (মোট ২৩ হাজার কোটি টাকা; ঘাটতি অর্থায়নের ১০%)।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট এ নিয়ে পরপর ৫মবারের মতো প্রস্তাব করা হয়। বিগত চার বছরের বাজেট প্রস্তাবনা থেকে সরকার বেশ কিছু প্রস্তাবনা আমলে নিয়েছে এবং তাঁদের এ কর্মযজ্ঞ বিফলে যায়নি বলে তাঁরা জানান।
এদিকে গতকাল ছিলো ১১ জ্যৈষ্ঠ ২৫ মে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মজয়ন্তী। তাই এই বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা আলোচনার এক পর্যায়ে এই বিদ্রোহী কবির প্রসঙ্গ চলে আসে। অনুষ্ঠানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তিনি শোষণ, বঞ্চনা ও ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে হুঙ্কার দিয়ে গেছেন সে বিষয়গুলো আলোচনায় চলে আসে। আর সে শোষণ-বঞ্চনা এখনো যে সমাজে রয়ে গেছে তাও আলোচনায় আসে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন তাঁর বক্তব্যে কবি নজরুলের সেই শোষণ-বঞ্চনা ও ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রতি চমর ধিক্কার এবং হুঙ্কার ‘যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস/যেনো লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!’ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নজরুলের সেই তেজোদীপ্ত উক্তি আজো আমাদের শিহরিত করে। শোষণ-বঞ্চনার সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে নজরুলের ‘আমার কৈফিয়ত’ নামে কবিতার এই পংক্তি আজো আমাদের আন্দোলিত করে, আমরা উজ্জীবিত হই। আর বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রথিতযশা একজন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতের নেতৃত্বধীন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বর্তমান সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে যে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা এ বছরসহ পাঁছ বছর উত্থাপন করছে তা খুবই ভালো এবং সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। কারণ, এ কথা আমরা সকলেই জানি, দেশের অর্থনীতির চাকা সকল থাকলেই সবকিছু সচল থাকবে।
অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক কাজী জালাল উদ্দিন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, চাঁদপুর সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক উমেষ চন্দ্র লোধ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন, শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, সদস্য পার্থনাথ চক্রবর্তী ও মতলবের আলোর প্রধান সম্পাদক কেএম মাসুদ।