• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মনোরম স্থাপত্য : বাংলাদেশের হাসপাতালে বিশ্ব সেরার স্বীকৃতি

প্রকাশ:  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৫৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট


ছোট ছোট ইটের তৈরি এবং ভেতর দিয়ে এঁকে-বেঁকে বয়ে যাওয়া গ্রামীণ বাংলাদেশের একটি হাসপাতাল পেয়েছে বিশ্ব সেরার স্বীকৃতি। রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ২০২১ সালের ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ওই হাসপাতালটি।
বিশ্ব সেরার স্বীকৃতি পাওয়া হাসপাতালটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবন’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল। জলবায়ু-সচেতন নকশায় তৈরি করা হাসপাতালের এই ভবনটি বিশ্ব সেরার স্বীকৃতি অর্জনের পথে জার্মানির বার্লিনের জেমস সায়মন গ্যালারি ও ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের ল্যাঞ্জব্রো সেতুকে হারিয়ে দিয়েছে।
৮০ শয্যাবিশিষ্ট ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের নকশা করেছেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। বার্লিন ও ডেনমার্কের বাকি দু’টি স্থাপনার নকশা করেছেন যথাক্রমে ডেভিড চিপারফিল্ড এবং উইলকিনসন আয়ার। স্থপতি কাশেফ মাহবুব ইতোমধ্যেই আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত এই হাসপাতালটি পানিকে প্রধান সূচনা দ্বার হিসেবে ব্যবহার করেছে। পুরো হাসপাতালের ভেতর দিয়েই এঁকে-বেঁকে বয়ে গেছে ছোট্ট খাল। বর্ষাকালে এই খালটি বৃষ্টির মূল্যবান পানি ধরে রাখে এবং গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সেই পানি পুরো আঙিনাকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
এছাড়া ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এই খালটি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগ এবং বহির্বিভাগকে পৃথক করে রেখেছে। অর্থাৎ কোনো রকমের দেয়াল ছাড়াই কেবল একটি খালের মাধ্যমে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগ এবং বহির্বিভাগকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হয়েছে।
গত রোববার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (রিবা) জানায়, অসাধারণ নকশা এবং সামাজিক উপকারিতা ও প্রভাব বিবেচনায় কাশেফ চৌধুরীর নকশা করা বাংলাদেশের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ভবনটিকে এই আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হচ্ছে।
আরবানা নামে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ভবনের নকশা করার পাশাপাশি নিজের এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই হাসপাতালটি নির্মাণ করেছেন কাশেফ মাহবুব। ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আরবানা’র পরিচালক এই স্থপতি বলছেন, ‘এখানে (হাসপাতালে) সব জায়গায় পানি রয়েছে। কিন্তু সবসময় এটি দরকারি ধরনের নয়।’

গার্ডিয়ান বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ক্রমবর্ধমানভাবে বেড়েই চলেছে। আর এ কারণে আশপাশের শস্যক্ষেতগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় সেগুলো চিংড়ির ঘেরে রূপান্তরিত হয়েছে। আর ভূপৃষ্ঠ পানীয় এতো লবণাক্ত হয়ে উঠেছে যে পান করাসহ বেশিরভাগ কাজেই সেটি ব্যবহার করা যায় না।
আর তাই বর্ষাকালে বিশুদ্ধ পানির সর্বশেষ ফোঁটাটিও সংরক্ষণের চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। আর এ বিষয়ের দিকে নজর দিয়েই কাশেফ মাহবুব চৌধুরী এমন একটি ভবনের নকশা করেন যেটি আসলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার মেশিনে পরিণত হবে। হাসপাতালের প্রতিটি ভবনের ছাদ থেকে এবং চারপাশের আঙিনার সঙ্গে নালার মাধ্যমে খালের সংযোগ করেছেন।
মূলত ছাদ ও আঙিনা থেকে বৃষ্টির পানি যেন সহজেই খালে আসতে পারে এবং সেখানেই সংরক্ষণ করতেই এই পরিকল্পনা করেন তিনি। আর সেই খাল থেকে বিশুদ্ধ পানি চলে যায় দু’টি স্টোরেজ ট্যাংকে। হাসপাতালের উভয় প্রান্তে পানি সংরক্ষণের জন্য দু’টি ট্যাংক রয়েছে।
অবশ্য ‘মাটির ওপরে’ বানানো এনজিও ফ্রেন্ডশিপের তৈরি এটিই প্রথম হাসপাতাল। এর আগে নৌকার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন কাশেফ চৌধুরী। স্থায়ীভাবে তৈরি প্রথম এই হাসপাতাল নির্মাণে খরচ হয়েছে ২০ লাখ ডলারেরও কম। এখন এই হাসপাতালটিই এমন একটি এলাকার হাজারও মানুষকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে যারা ২০০৭ সালে একটি প্রলয়ংকারী দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
স্থানীয়ভাবে তৈরি ইট দিয়ে নির্মাণ করা এই হাসপাতাল ক্যাম্পাসটি সবাইকে একটি গ্রামীণ পরিবেশের অনুভূতি দেয় বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ আলো-বাতাস চলাচলের উপযোগী রেখেই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালটিতে বিদ্যুতের সর্বনি¤œ ব্যবহারও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ নভেম্বর রিবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য ‘বিশ্বের সেরা নতুন ভবনের’ সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে সাতক্ষীরার এই ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সঙ্গে জার্মানির জেমস সায়মনগ্যালারি এবং ডেনমার্কের ল্যাঞ্জব্রো সেতুও ছিল।
বিশ্বের ১১টি দেশের মোট ১৬টি ব্যতিক্রমী নতুন স্থাপনার মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে তিনটি স্থাপনার সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করেছিল পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ড। আর সেখান থেকেই ২০২১ সালের সেরা ভবনের স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশের এই হাসপাতালটি। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

সর্বাধিক পঠিত