চাঁদপুরে অনলাইন ক্লাসের অগ্রদূত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
করোনা মহামারীর আক্রমণের ফলে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া এক বিশাল চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। করোনা আক্রমণের প্রেক্ষিতে গত ১৭ মার্চ থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনলাইন শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। চাঁদপুর জেলায় এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের অগ্রদূত হচ্ছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, চাঁদপুর।
সরকারি সিদ্ধান্তে স্কুল বন্ধ হওয়ার মাত্র একদিন পর থেকেই (১৯ মার্চ) বিদ্যালয়টিতে সুসংগঠিতভাবে নিয়মিত অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এতো দ্রুত সুসংগঠিতভাবে নিয়মিত ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু করে বিদ্যালয়টি তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। এ কাজ কীভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোঃ নূর খান এই প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষাদান আমাদের প্রফেশন নয়, মিশন। আর এই মিশন সাকসেসফুল করতে আমরা অনঢ়, অটল, অবিচল আছি এবং সবসময় থাকব। তাই স্কুল বন্ধ হলেও, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা স্বল্পতম সময়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করার জন্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেছিলাম। যদিও কাজটা খুব সহজ ছিল না। অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। এজন্যে তাদের ব্যাপক প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকই আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে সুপ্রশিক্ষিত। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও অপরিসীম আন্তরিকতায় আমাদের শিক্ষার্থীরা এখন স্বাচ্ছন্দে অনলাইন ক্লাস করছে।"
অনলাইন ক্লাস করতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হয়। আর তার জন্যে শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমরা এ বিষয়টি মাথায় রেখেই কার্যক্রম শুরু করেছি। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট খরচের কথা চিন্তা করে আমরা বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাসিক টিউশন ফিতে দশ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। এর ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। ইন্টারনেট খরচের বাড়তি চাপ তাদের ওপর পড়ছে না।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে অনলাইন ক্লাস নেয়া হচ্ছে দু'টি বিভাগে। প্রথম বিভাগে রয়েছে প্লে গ্রুপ থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আর দ্বিতীয় বিভাগে রয়েছে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। প্লে গ্রুপ থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস নেয়া হচ্ছে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ম্যাসেঞ্জার ভিডিও কলে পাঠ বুঝিয়ে দিচ্ছেন আর শিক্ষার্থীরা পড়া জমা দিচ্ছে শ্রেণিভিত্তিক নির্দিষ্ট ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস হচ্ছে গুগুল ক্লাসরুম আর গুগুল মিট প্রযুক্তির মাধ্যমে। ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা বাস্তবিক শ্রেণিকক্ষের মতই ক্লাস করছে। লাইভ ক্লাসরুম প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই সহপাঠীদের সাথে ক্লাস করছে, শিক্ষকদের সাথে কথা বলছে, কুশল বিনিময় হচ্ছে। এক কথায় এই চূড়ান্ত দুঃসময়েও শিক্ষার্থীরা এক প্রাণবন্ত সময় উপহার পাচ্ছে। ক্লাস পরিচালনায় রয়েছে সুনির্দিষ্ট রুটিন। সুচারুভাবে শিক্ষাকার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শনের জন্যে রয়েছে ড্যাফোডিল ফ্যামিলির কেন্দ্রীয় সফ্টওয়্যার (SaaS Platform)। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের প্রতিদিনের কার্যবিবরণী সফ্টওয়্যারে নিয়মিত আপডেট করছেন।
শিক্ষার্থীদের উন্নতি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে অনলাইনে পরীক্ষাও গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করছে এবং যথেষ্ট ভাল ফলাফলও করছে।
এ দুঃসময়ে শিক্ষার্থীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে এবং তাদের অগ্রগতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অধ্যক্ষ প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত অনলাইন মিটিং করছেন। তাদের সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছেন, প্রয়োজনীয় উপদেশ এবং দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথেও অধ্যক্ষের নিয়মিত অনলাইন মিটিং হচ্ছে। প্রতিটি মিটিংয়েই বিদ্যালয়ের কার্যক্রম অভিভাবকদের ব্যাপক প্রশংসা লাভ করছে। প্রতিষ্ঠানটি এই অবস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী।