• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখতে করণীয়

প্রকাশ:  ০৮ মে ২০১৯, ২০:৫৫ | আপডেট : ০৮ মে ২০১৯, ২১:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

পৃথিবীতে প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান আছে যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৬%। বর্তমানে পৃথিবীতে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪১৫ মিলিয়ন। ২০৪০ সালে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৬৪২ মিলিয়ন-এ। এর মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মানুষরা রোজা রাখে সাধারণত। পৃথিবীর মোট প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের ৩৬% ডায়াবেটিসে ভুগছে। সে হিসেবে দাঁড়াচ্ছে, প্রতি রমজান মাসে ৯-১২ কোটি ডায়াবেটিক রোগী রোজাা রাখছে। একটি গুরুত্বর্পূণ গবেষণায় দেখা গেছে যে, টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের ৪৩% এবং টাইপ২ ডায়াবেটিক রোগীদের ৭৯% রমজান মাসে রোজা রাখে।

রোজার সময় একজন মানুষকে ভোররাত হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও মৌসুম ভেদে এ সময়কাল ১৪ ঘণ্টা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৩ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের দেশে সেহরি ও ইফতারের মধ্যবর্তী সময় সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা হতে পারে। এ দীর্ঘ সময় একজন ডায়াবেটিক রোগীর না খেয়ে থাকা উচিত হবে কী না তা নিয়ে অনেক বছর ধরে বহু বিতর্ক হয়েছে। অবশেষে পৃথিবীর মুসলমান ও অমুসলমান ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞগণ সর্বসম্মতভাবে মতামত দিয়েছেন যে, ডায়াবেটিক রোগীর পক্ষে রোজা রাখা ক্ষতিকর হবে। কুরআন শরীফেও রোগাক্রান্তদের রোজাা রাখা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে (সুরা আল বাকারা : আয়াত ১৮৩-১৮৫) আর অন্য যে কোন ধরনের অসুখের চেয়ে ডায়বেটিস নিয়মিত ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। ডায়াবেটিক রোগীর বিপর্যস্ত বিপাকীয় তন্ত্রের কারণে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শারীরিক নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। কোন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডায়বেটিক রোগীকে রোজা রাখার পরামর্শ দিবেন না। কিন্তু কোন ডায়বেটিক রোগী যদি ধর্মীয় প্রচ- আগ্রহের কারণে রোজা রাখতে চান তবে তাকে নিষেধ করাও কারও পক্ষে সম্ভব না। এখানে আমরা ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখার কারণে যে সব সমস্যা হতে পারে এবং তা থেকে যতটা সম্ভব সতর্ক থাকার পদ্ধতি আলোচনা করব।

রোজাা রাখার সময় ডায়াবেটিক রোগীর ঝুঁকিসমূহ

১. রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)

খাদ্য গ্রহণে অনেকক্ষণ যাবত বিরত থাকলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ কমতে থাকে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ডায়াবেটিক রোগীর রোজা রাখার সময় এতটাই কমে যেতে পারে যে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করতে হতে পারে। টাইপ ১ ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে এরুপ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবার সম্ভাবনা ৪.৭ গুণ এবং টাইপ২ ডায়াবেটিকের ক্ষেত্রে ৭.৫ গুণ বেশি।

২. রক্তে গ্লুুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)

রোজাা রাখার কারণে টাইপ ১ ও টাইপ ২ উভয় ধরনের ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবার কিছুটা ঝুঁকি থাকে। তবে টাইপ ১ ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে তা মারাত্মক হতে পারে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এ থেকে জীবননাশের ঘটনাও ঘটতে পারে।

৩. ডায়াবেটিক কিটো এ্যাসিডোসিস

টাইপ ১ ডায়াবেটিক রোগীরা বেশ কিছু ক্ষেত্রে রক্তের গ্লুকোজ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়া বা কিটোনবড়ি বেড়ে যাবার কারণে সঙ্কটাপন্ন অবস্থা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের রক্তের গ্লুকোজ রোজা শুরুর আগে সঠিক মাত্রায় ছিল না।

৪. পানি শূন্যতা ও থ্রম্বোএম্বোলিজম

দীর্ঘ সময় পানি বা পানীয় খাদ্য গ্রহণে বিরত থাকার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা (ডিম্বইডেশন) দেখা দিতে পারে। আর গরম ও বেশি আর্দ্র আবহাওয়ায় পানি শূন্যতা আরও প্রকট হতে পারে। যাদেরকে রোজা রেখে কঠোর শারীরিক শ্রম দিতে হয়। তাদেরও পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, রক্তে বেশি মাত্রায় গ্লুকোজ থাকলে শরীর থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ বের হয়ে যাবার হার অনেক বেড়ে যায়। এতে করে বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরে যেতে পারে। বিশেষত যাদের ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের এ সময় সহসা জ্ঞান হারানো, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি ঘটতে পারে। দেহের পানি শূন্যতার কারণে রক্ত জমাট থ্রম্বোসিস হতে চোখের রেটিনার কেন্দ্রীয় শিরা বন্ধ হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারাবার ঘটনা ঘটেছে সৌদি আরবে।

ব্যবস্থাপনা

ডায়াবেটিক রোগীর রোজাা রাখা একান্তভাবেই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা তার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং তার চিকিৎসকের জন্যও তা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীই রোজা রেখে কম বেশি ঝুঁকির আওতায় চলে আসেন।এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়সমূহ হলো প্রত্যেক রোজাদার ডায়াবেটিক রোগীর অবস্থা তার স্বাতন্ত্র্যসহ বিবেচনা করতে হবে।ঘন ঘন রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। প্রতিদিন বেশ ক’বার (কম পক্ষে তিন বার) রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখতে হবে। শেষ ভাগে অবশ্যই রক্তের গ্লুকোজ দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর টাইপ ১ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্য রাখতে হবে।প্রতিদিনের খাদ্যের পুষ্টিমান অন্যান্য সময়ের মতই রাখার চেষ্টা করতে হবে। স্বাভাবিক দৈহিক ওজন ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গবেষণায় দেখা যায় ২০%-২৫% ডায়াবেটিক রোগীর দৈহিক ওজন কমে বা বাড়ে। ইফতারে চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্য এবং তেলে ভাজা খাবার গ্রহণ করা হতে যতটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে। কেননা এসব হজম হতে সময় লাগবে। কিন্তু ডায়াবেটিক রোগীর ইফতারের পর পরই যত দ্রুত সম্ভব রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করা ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য জটিল শর্করা জাতীয় খাবার সেহরির সময় খেতে হবে। আর ইফতারীতে সহজ পাচ্য খাবার খেতে হবে। প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। সেহরির খাবার নির্ধারিত সময় শেষ হবার ঠিক পূর্বে খেতে হবে এবং তারপর প্রচুর পানি পান করা বাঞ্ছনীয়।শারীরিক শ্রম বা ব্যায়াম স্বাভাবিক শারীরিক কর্মকান্ড চালানো যেতে পারে এ সময়। তবে খুব বেশি কঠোর শ্রম বা ব্যায়াম না করাই ভাল। এতে করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। আর কঠোর শ্রম বিকাল বেলায় তো করা যাবেই না। আর তারাবিহ নামাজ পড়লে, তাকে শারীরিক শ্রম হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। কিছু কিছু ডায়াবেটিক রোগী (বিশেষত টাইপ১) যাদের রক্তের গ্লুকোজ ঠিকমতো রাখা যাচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঘটনা প্রায়শ মারাত্মক হয়।

প্রতিটি ডায়বেটিক রোজাাদারকে এ কথাটি খুব স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, যখনই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কোন লক্ষণ শরীরে দেখা দেয় তার পর যতটা সম্ভব দ্রুততর সময়ের মধ্যে গ্লুকোজ/চিনি/মিষ্টি কোন খাদ্য/সরবত ইত্যাদি যে কোন একটি খেয়ে নিতে হবে। যাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে, তারা তো খুব সহজেই এর প্রাথমিক উপসর্গ চিনতে পারবে। আর যাদের তেমন অভিজ্ঞতা হয়নি, তাদের বুক ধড়ফরানি, মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগা, ঘাম হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, মাথা ঘোরা ইত্যাদির এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিবে। তখন হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তের গ্লুকোজ এ সময় সাধারণত ৩.৩ মিলিমোল/লিটার) হয়েছে ধরে নিতে হবে। আবার দিন শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যদি রক্তের গ্লুুকোজ ৩.৯ মিলিমোল/ লিটার বা তার চেয়ে কমে যায় তাহলেও কিছু খেয়ে নেয়া জরুরী। আর যারা ইনসুলিন, সালফুনাইন ইউরিয়া মেগ্লিটিনইড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করছেন তাদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটার সম্ভাবনা বেশি। আবার রক্তের গ্লুুকোজ ১৬৭ মিলিমোল/লিটার এর বেশি হলেও রোজা রাখা সম্ভব হবে না।

প্রাক রমজান মূল্যায়ন

যেসব ডায়াবেটিক রোগী সব ঝুঁকির কথা জেনেও রোজা রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তাদেরকে রোজা শুরুর কমপক্ষে ১ মাস আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে। এর মধ্যে আছে খালি পেটেও খাবার ২ ঘণ্টা পর (মোট ৬ বার) রক্তের গ্লুকোজ, খালি পেটে রক্তের লিপিড, লিভার কিডনি ও হৃদপিন্ডের কার্যকারিতার পরীক্ষা, এবং এইচবিএ১সি ইত্যাদি পরীক্ষা করে নিতে হবে।সকলকেই তার নিজের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসগণ এক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করবেন।

রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা

ডায়াবেটিক রোগী রোজা রাখার সময় সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে খাদ্য ব্যবস্থাপনায়। পরবর্তী অংশটুকুতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

সেহ্রির খাবার সেহ্রির শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে খাওয়া।

ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা।

ডায়াবেটিক রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেন তারা পানি শূন্যতায় না ভোগেন। খেজুর খেলে একটা খেজুর খেতে পারেন। ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও টক দই তালিকাভুক্ত করতে পারেন। ডাবের পানি পান করতে পারেন। যদি কোন পানীয় পান করেন তবে চিনিমুক্ত পানি বেছে নিতে পারেন। যদি মিষ্টি পানীয় পছন্দ করেন, তবে সুইটনার যেমন- ক্যানডেরাল বা সুইটেক্স ব্যবহার করতে পারেন। ভাজা পোড়া খাবার যেমন- পিয়াজু, বেগুনী, পুরি, পরোটা কাবাব অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।

খাদ্যের ক্যালরি ঠিক রেখে খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরন ঠিক করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাওয়া প্রয়োজন।রমজানের পূর্বে যে পরিমাণ ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতেন রমজানে ক্যালরির পরিমাণ ঠিক রেখে খাবার সময় এবং ধরন বদলাতে হবে। প্রয়োজন হলে নিউট্রিশনিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাবার তালিকা ঠিক করে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ওষুধের সঙ্গে খাবারের যেন সামঞ্জস্য থাকে। ইফতারের সময় অতি ভোজন এবং শেষ রাতে অল্প আহার পরিহার করতে হবে।

রোজার সময় খাবারের তালিকা

ইফতারবুট ভুনা ১/২ কাপ (২৫ গ্রাম কাঁচা বুট) পিঁয়াজু ২টা বড় মাপের (২৫ গ্রাম ডাল) বেগুনী ২টা মাঝারি (১০ গ্রাম বেশন)মুড়ি ২.৫ কাপ (৩০ গ্রাম) মিষ্টি ফল যে কোন একটি (শশা, ক্ষীরা, আমড়া, কাজি পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি, (চিনি ছাড়া) ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে।)সন্ধ্যা রাত আটার রুটি ৯০ গ্রাম (৩টা ছোট পাতলা) বা ভাত ২.৫ কাপ মাছ বা মাংস২-১ টুকরা ডাল১.৫কাপ মাঝারি ঘন বা দুধ ১ কাপ (সর ছাড়া) সবজি ইচ্ছামতোসেহরিভাত২.৫কাপ (৩০০ গ্রাম) মাছ বা মাংস২-১ টুকরাডাল১.৫ কাপ মাঝারি ঘন বা দুধ ১ কাপ (সর ছাড়া) সবজি ইচ্ছামতো

রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর ওষুধ

া যারা দিনে ১ বার ডায়াবেটিসের ওষুধ (যে সমস্ত ওষুধ ইনসিুলিন এর পরিমাণ বাড়ায়) খান, তারা ইফতারের শুরুতে (রোজা ভাঙ্গার সময়) একটু কম করে খেতে পারেন।

যারা দিনে একাধিকবার ডায়াবেটিসের ওষুধ খান তারা সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সেহ্রির আধা ঘণ্টা আগে খেতে পারেন। যে সকল রোগী ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের রমজানের পূর্বেই ইনসুলিনের ধরন ও মাত্রা ঠিক করে নেয়া উচিত। সাধারণত রমজানের দীর্ঘ মেয়াদী ইনসুলিন ইফতারের সময় বেশি এবং প্রয়োজনে শেষ রাতে অল্প মাত্রায় দেয়া উচিত। দীর্ঘ মেয়াদী এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ ইনসুলি যা দিনে এক বার নিতে হয় যেমন ইনসুলিন Lantus অথবা ইনসুলিন ঞৎবংরনধ কিংবা দিনে একবার থেকে দুবার যেমন, ইনসুলিন খবাবসরৎ । এগুলোতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কম।

রোজায় ডায়াবেটিসের ওষুধ ব্যবহারে পরিবর্তন মুখে খওয়ার ওষুধ বা ট্যাবলেট রোজার পূর্বেরোজা চলাকালীন

১. দিনে ১ বার খেতে হয় এমন; যেমন-গ্লাইমিপেরাইড, গ্লক্লাজাইড এমআর। দিনে ২ বার খেতে হয় এমন; যেমন-গ্লিবেনক্লেমইড, গ্লিক্লাজাইড। ইফতারের শুরুতে (রোজার ভাঙার সময়) ওষুধটি একটু কম করে খেতে পারেন। সকালের মাত্রাটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের মাত্রাটি অর্ধেক পরিমাণে সেহরির ২০-৩০ মিনিট পূর্বে খেতে পারেন। ২. মেটফরমিন ৫০০ মি: গ্রা: দিনে ৩বার গ্রহণ করেন। ইফতারের পর মেটফরমিন ১০০০ মি: গ্রা: এবং সেহরির পর ভরা পেটে ৫০০ মি. গ্রা. খেতে পারেন ৩. ইনক্রিটিনিন যা দিনে ১বার সেবন করেন। ওষুধটি একই মাত্রায় রাতের যে কোন সময়ে খেতে পারেন। ৪. গ্লিটাজন বা গ্লিনাইড যেমন- রিপাগ্লিনাইড, নেটিগ্লিনাইড অথবা গ্লিপটিন। ইফতারের শুরুতে, সন্ধ্যা রাতের খাবারের পূর্বে অথবা সেহরির পূর্বে সেবন করা যেতে পারে।

ইনসুলিন এর সমন্বয়

রোজার পূর্বেরোজ চলাকালীন১. প্রি-মিক্স ইনসুলিন: দিনে দু’বার নেয়ার ইসুলিন। যেমন-সকালে নাস্তার ২০/৩০ মিনিট পূর্বে ৩০ ইউনিট এবং রাতের খাবারের ২০/৩০ মিনিট পূর্বে ২০ ইউনিটইফতারের পূর্বে সকালের ডোজ অর্থাৎ ৩০ ইউনিট এবং সেহরির ২০/৩০ মিনিট পূর্বে রাতের খাবারের ডোজের অর্ধেক অর্থাৎ ১০ ইউনিট নিতে হবে। ইফতার করে নামাজে যাবেন। ২. ব্যাসাল (Basal) ইনসুলিন অর্থাৎ ইনসুলিন গ্লারজিন (Lantus) বা ইনসুলিন ডেগলুডেক, যা দিনে ১বার তিনে হয় অথবা ইনসুলিন ডেটেমিন যা দিনে ১বা ২বার নিতে হয়। একই সময় ২০% থেকেব ৩০% কমিয়ে প্রথম তারাবিহর রাত থেকেই নিতে হবে। Lantus খাবারের আগে ও নেয়া যায় পরেও নেয়া যায়। তবে ২৪ ঘণ্টা পর পর নিতে হবে।৩. স্পি­ট-মিক্স ইনসুলিন অর্থাৎ প্রয়োজন অনুযায়ী বেলাস ও ব্যাসাল মিলিয়ে নেয়া ইনসুলিন।

যেমন-সকালের খাবারের ২০/৩০ মিনিট পূর্বে বোলাস ১০ ইউনিট+ব্যাসাল ১০ইউনিট এবং রাতে খাবারের পূর্বে বোলাস ১০ ইউনিট+ব্যাসাল ১০ ইউনিট।অথবা সকালে খাবারের পূর্বে ১০ ইউনিট বোলাস, দুপুরের খাবারের পূর্বে ১০ ইউনিট বোলাস এবং রাতের খাবারের পূর্বে বোলাস ১০ ইউনিট+ব্যাসাল ১০ ইউনিট। ইফতারের পূর্বে বোলাস ১০ ইউনিট + ব্যাসাল ১০ ইউনিট এবং সেহরির পূর্বে অর্ধেক ডোজ অর্থাৎ বোলাস ৫ ইউনিট+ব্যাসাল ৫ ইউনিট তিনে পারেন।ইফতারের পূর্বে বোলাস ২০ ইউনিট এবং সেহরির পূর্বে অর্ধেক ডোজ অর্থাৎ বোলাস ৫ ইউনিট+ব্যাসাল ৫ ইউনিট নিতে পারেন।

রোজায় ডায়বেটিক রোগীর ব্যায়াম

ডায়াবেটিক রোগীদের ব্যায়াম খুবই জরুরী কিন্তু দিনের বেলায় রোগীদের অধিক ব্যায়াম করা উচিত নয় এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। রাতের বেলায় বিশেষ করে তারাবির নামাজের পর ব্যায়াম করাই ভাল। মনে রাখতে হবে তারাবির দীর্ঘ নামাজে কিছুটা ব্যায়াম হয়ে যায়।রোজা রেখে রক্তের গ্লুকোজ মাপার হিসাব তারিখ সকাল ৭.০০ টা বিকাল ৪.০০ থেকে ৪.৩০ টাইফতারের ঠিক আগেইফতারের ২ ঘণ্টা পরখারাপ লাগলে

বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন

ডায়াবেটিক রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। তবে ৩ মাস আগে থেকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুতি নিতে হবে।রোজার সময় নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে।সেহরির খাবার সেহরির শেষ সময়ের কিছু আগে খাওয়া উচিত। ইফতারের সময় বেশি চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না।রোজার সময় দিনের বেলা অতিরিক্ত ব্যায়াম করা উচিত নয়। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।রোজার সময় রাতের বেলা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি (সম্ভব হলে ডাবের জল), কম মিষ্টি রসালো ফল এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

লেখক : ডাঃ শাহজাদা সেলিম

সহকারী অধ্যাপক- এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ

 

সর্বাধিক পঠিত