• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

থ্রিডি প্রিন্টারে 'ছাপানো' বন্দুক কি হয়ে উঠতে পারে এক নতুন বিপদ?

প্রকাশ:  ০৭ আগস্ট ২০১৮, ২২:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

লোকে ইন্টারনেটে ঢুকে একটা বন্দুক 'ডাউনলোড' করবে, 'প্রিন্ট' করে সেটা 'বানিয়ে নেবে' আর তার পর সোজা সেটা ব্যবহার করতে শুরু করবে - আর সেই আগ্নেয়াস্ত্রের কেউ কোন হদিস পাবে না - এটা কি হতে পারে, না হতে দেয়া উচিত?

এ নিয়ে আমেরিকার আদালতগুলোয় চলছে এক তিক্ত আইনী লড়াই এর বিরোধীরা বলছেন, এর ফলে আমেরিকা - যেখানে প্রতিবছর গুলিতে মারা যায় ৩৫ হাজার লোক - দেশটা অস্ত্রে অস্ত্রে সয়লাব হয়ে যাবে।

কিন্তু সমর্থকরা বলছেন, অস্ত্র পাবার অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হবে আমেরিকানদের সাংবিধানিক অধিকারের লংঘন।

ঘরে বানানো আগ্নেয়াস্ত্র?

যে প্রযুক্তি এটাকে সম্ভব করেছে তা হলো থ্রি-ডি প্রিন্টিং।

এটা এমন প্রযুক্তি যাতে কম্পিউটারের সাথে থ্রিডি প্রিন্টার জুড়ে দিয়ে নানা রকম জটিল আকৃতির বস্তু ঘরে বসেই তৈরি করা যায়। সেই ডিজাইন খুব সহজেই অনলাইনে শেয়ার করা যাবে।

ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে জিনিসটি তৈরি হবে একটির ওপর আরেকটি অতি পাতলা প্লাস্টিকের স্তর বসিয়ে। এভাবেই বানানো সম্ভব একটি বন্দুকও ।

একটি সাধারণ থ্রিডি প্রিন্টারের দাম এখন কয়েকশ ডলার মাত্র।

সমালোচকরা তাই বলছেন, এটা এক বিরাট সমস্যার সৃষ্টি করতে যাচ্ছে - যাতে লোকের হাতে চলে আসবে এমন আগ্নেয়াস্ত্র যার কথা কেউ জানতে পারবে না।

এ অস্ত্রের গায়ে কোন কারখানার সিরিয়াল নম্বর থাকবে না, যে এই বন্দুকের মালিক হবে সে কে, কেমন লোক, বিপজ্জনক কেউ কিনা - তার কোন 'ব্যাকগ্রাউন্ড চেক'ও করা সম্ভব হবে না।

প্লাস্টিকের বন্দুক কি আসলেই কাজ করে?

বাস্তবে আসল বন্দুক আর প্লাস্টিকের বন্দুকে অনেক পার্থক্য।

যেমন লিবারেটর নামে প্লাস্টিকের পিস্তলে সব কিছুই প্লাস্টিকে তৈরি শুধু ফায়ারিং পিন - অর্থাৎ যে জিনিসটা গুলির পেছনে আঘাত করে বুলেট নিক্ষেপ করে - সেটাই শুধু ধাতব পদার্থের তৈরি।

এটা মোটেও সাধারণ হ্যান্ডগানের মত নয়, এতে একবারে একটাই বুলেট ধরে, নতুন গুলি ভরাও খুব কঠিন।

কিন্তু উদ্বেগটা হলো: নতুন এবং আরো জটিল ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হচ্ছে - সেখানে শুধুমাত্র একটিই অংশ রয়েছে যা প্লাস্টিকের তৈরি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের ট্রিগারসহ নিচের দিকের অংশটাকে বলে লোয়ার রিসিভার - শুধু সেটাই আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অংশ।

বন্দুকের বাঁট, ব্যারেল, বা ম্যাগাজিন - এগুলো আইনে নিয়ন্ত্রিত অংশ নয়।

এ আর ১৫ বন্দুকের সাথে ধরা নীল রঙের অংশটাই হচ্ছে লোয়ার রিসিভার।
তাই উদ্বেগটা হচ্ছে, কেউ যদি লোয়ার রিসিভারটা থ্রিডি প্রিন্টারে বানিয়ে নেয়, এবং তার সাথে অন্যান্য ধাতব অংশগুলো - যা সহজেই পাওয়া যায়, এবং যা পুরোপুরি আইনসঙ্গত - তা জুড়ে নেয়, তাহলেই সে একটি পূর্ণাঙ্গ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পেয়ে গেল।

কিন্তু এটা সে কোথায় পেলো, কিভাবে পেলো, কার হাতে গেল, - তার কোন হদিসই কেউ বের করতে পারবে না।

কারণ এই লোয়ার রিসিভার ঘরে তৈরি - তার কোন সিরিয়াল নম্বর নেই।

অবশ্য অস্ত্র হিসেবেও এর অনেক অসুবিধা থাকতে পারে। এটা ঠিকমত কাজ করবে কিনা, ভেঙে যাবে কিনা বা বিস্ফোরিত হবে কিনা - তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

কিন্তু যারা থ্রিডি বন্দুক-এর ডিজাইন বিতরণের অধিকারের সমর্থক - তারা বলেন, এর জন্য যে প্রিন্টার লাগবে তার দাম ১৫ হাজার ডলার, তার পর আপনি যে বন্দুক বানাবেন সেটা নির্ভরযোগ্য হবে না।

এসব কারণেই এই প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এ নিয়ে এখন আমেরিকায় শুরু হয়েছে নানামুখী আইনী বিতর্ক।

কোডি উইলসনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে - যা এখনও নিষ্পত্তি হয় নি। এ নিয়ে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। আর এর মধ্যেই থ্রিডি প্রিন্টেড বন্দুকের বিস্তার শুরু হয়ে গেছে।

ইন্টারনেট থেকে এই বন্দুকের ডিজাইন লক্ষ লক্ষবার ডাউনলোড করা হয়েছে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে হোস্ট করা ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে এগুলো।

কোডি উইলসনের কোম্পানি এখন লিবারেটরের পাশাপশি গোস্ট গানার নামে আরেকটা বন্দুকের ডিজাইন ছেড়েছে।

যখন বন্দুকের বিস্তার নিয়ে এত বিতর্ক - তার মধ্যে এই থ্রিডি প্রিন্টেড বন্দুক পুরো বিতর্কটিকে আরো জটিল করে তুলবে সন্দেহ নেই। সূত্র: বিবিসি বাংলা। 

সর্বাধিক পঠিত