ফাইভ-জি সম্পর্কে যেসব তথ্য না জানলেই নয়
দেশে কিছু দিন আগেই চালু হয়েছে মোবাইলের ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধা। কিন্তু বিশ্বে এর মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট বা ফাইভ-জি নিয়ে।
অনেক দেশে সামনের বছর নাগাদ এ সেবাটি চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে বর্তমানের তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি গতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।
কিন্তু আমাদের জীবনে তা কতটা কি পরিবর্তন আনবে? আমাদের কি তখন নতুন মোবাইল ফোন কিনতে হবে? এটা কি প্রত্যন্ত মানুষদের সেবা প্রাপ্তি বাড়াবে?
ফাইভ-জি আসলে কী?
মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ফাইভ-জি, যেখানে অনেক দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট তথ্য ডাউন লোড এবং আপলোড করা যাবে। যার সেবার আওতা হবে ব্যাপক।
এটা আসলে রেডিও তরঙ্গের আরও বেশি ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং একই সময় একই স্থানে বেশি মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে।
মোবাইল তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের কর্মকর্তা ইয়ান ফগ বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্মার্টফোন দিয়ে যাই করি না কেন, ফাইভ জি হলে তা আরও দ্রুত গতিতে এবং ভালোভাবে করতে পারব। চিন্তা করুন অগমেন্টেড রিয়েলিটি, মোবাইল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, উন্নত মানের ভিডিও- যেসব ইন্টারনেট এখনকার শহুরে জীবনকে আরও স্মার্ট করে তুলছে। কিন্তু এমন অনেক নতুন সেবা আসবে, যা আমরা এখনো ভাবতে পারছি না।’
হয়তো ড্রোনের মাধ্যমে গবেষণা এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা হবে, অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করবে। আর সেসবের জন্যই ফাইভ জি প্রযুক্তি সহায়ক হবে।
অনেকে মনে করেন, চালকবিহীন গাড়ি, লাইভ ম্যাপ এবং ট্রাফিক তথ্য পড়ার জন্যও ফাইভ-জি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
মোবাইল গেমাররা আরও বেশি সুবিধা পাবেন। ভিডিও কল আরও পরিষ্কার হবে। সহজেই ও কোনোরকম বাধা ছাড়াই মোবাইলে ভিডিও দেখা যাবে। শরীরে লাগানো ফিটনেস ডিভাইসগুলো নিখুঁত সময়ে সংকেত দিতে পারবে, জরুরি চিকিৎসা বার্তাও পাঠাতে পারবে।
ফাইভ-জি কীভাবে কাজ করবে?
নতুন কিছু প্রযুক্তি হয়তো প্রয়োগ আসতে যাচ্ছে, কিন্তু ফাইভ-জি প্রটোকলের মান এখনো নির্ধারিত হয়নি। ৩.৫ গিগাহার্জের থেকে ২৬ গিগাহার্জের মতো হাইয়ার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের অনেক ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কারণে তাদের আওতা থাকে কম। ফলে সামনে কোনো বাধা পেয়ে সেগুলো সহজেই আটকে যায়।
ফোর-জির তুলনায় এটি কি অনেক আলাদা?
অবশ্যই, এটা একেবারে নতুন একটি রেডিও প্রযুক্তি। কিন্তু প্রথমেই হয়তো দ্রুত গতির বিষয়টি নজরে আসবে না। কারণ নেটওয়ার্ক অপারেটররা বর্তমান ফোরজি নেটওয়ার্ককে ফাইভ-জিতে বাড়িয়ে গ্রাহকদের আরও উন্নত সেবা দিতে চাইবেন।
দ্রুত গতির বিষয়টি নির্ভর করবে যে, কোন স্পেকট্রাম ব্যান্ডে ফাইভ-জি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং মোবাইল কোম্পানিগুলো মাস্ট এবং ট্রান্সমিটারের পেছনে কতটা বিনিয়োগ করছেন।
এটি কতটা দ্রুত গতির হতে পারে?
বর্তমানের ফোর-জি প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক গড়ে সর্বোচ্চ ৪৫ এমবিপিএস গতি সুবিধা দিতে পারে। যদিও আশা করা হচ্ছে যে, এই নেটওয়ার্কেই ১ গিগাবাইট পার সেকেন্ড গতি একসময় দেয়া যাবে।
চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম বলছে, ফাইভ জি এর ১০ থেকে ২০গুণ গতি দিতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি ভালো মানের চলচ্চিত্র হয়তো মাত্র এক মিনিটেই ডাউনলোড করা যাবে।
আমাদের কেন দরকার ফাইভ-জি?
সারা বিশ্বই এখন মোবাইলনির্ভর হয়ে উঠছে এবং প্রতিদিনই আমরা আরও বেশি তথ্য ব্যবহার করছি। বিশেষ করে ভিডিও এবং সংগীত ব্যবহার অনেক বাড়ছে।
বর্তমান নেটওয়ার্কে অনেক সময় এসব সেবা নিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়। হয়তো ডাউনলোডের সময় মাঝপথে ভেঙ্গে যায়। বিশেষ করে যখন কোন একটি এলাকায় একসঙ্গে অনেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন বেশি সমস্যা দেখা যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে ফাইভ-জি অনেক ভালো সেবা দিতে পারবে।
কখন এই সেবা আসতে পারে?
বেশিরভাগ দেশ ২০২০ সাল নাগাদ ফাইভ-জি সেবা চালু করতে চায়। তবে কাতারের ওরেডো কোম্পানি জানিয়েছে, তারা এর মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে সেবাটি চালু করেছে।
সামনের বছর ফাইভ-জি চালু করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১৯ সালে এ সেবা চালু করতে চায় চীনও।
এ জন্য কি আমার নতুন ফোন দরকার হবে?
সম্ভবত, তবে ২০০৯-১০ সালে যখন ফোর জি প্রযুক্তি চালু হয়, তার আগেই মোবাইল কোম্পানিগুলো এর উপযোগী ফোন নিয়ে বাজারে এসে গিয়েছিল।
ইয়ান ফগ বলছেন, এবার হয়তো কোম্পানিগুলো সেই কাজ করবে না। সামনের বছর নাগাদ হয়তো তারা ফাইভ-জির উপযোগী করেই ফোন বাজারে আনবে, তবে এসব ফোন ফোর-জিতেও কাজ করতে পারবে।
এটা কি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট যুগের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেবে?
এককথায় বলা চলে, না। আবাসিক এবং অফিসগুলো আরো অনেক বছর ধরে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড লাইনের ওপর নির্ভর করবে। কারণ এখনো অনেকই মনে করেন, তারের মাধ্যমে স্থিতিশীল ইন্টারনেট পাওয়া যায়।
প্রান্তিক এলাকায় কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে ফাইভ-জি?
অনেক দেশের প্রান্তিক এলাকায় সিগন্যাল সমস্যা এবং খারাপ গতির ইন্টারনেট একটি সমস্যা, এমনকি যুক্তরাজ্যেও। তবে ফাইভ-জিতে হয়তো এই সমস্যার এখনি কোন সমাধান আনতে পারবে না, কারণ এটিও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ডে কাজ করে। এটা একসঙ্গে অনেক মানুষকে সেবা দিতে পারে, কিন্তু এর আওতা ততটা বড় নয়। ফলে আপাতত ফাইভ জি শহরে এলাকার মানুষজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
সত্যি কথা বলতে, অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় সরকারি সহায়তা চাড়া নেটওয়ার্ক অপারেটররা হয়তো যেতেই চাইবে না।
খবর বিবিসি বাংলা