বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয় সম্ভব হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মহাকাশ জয় সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেগম নাসিমা ফেরদৌসীর এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিটিআরসি’র কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৬ বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে চলতি বছর ১২ মে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট যোগাযোগের সূচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে মহাশূন্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। স্বপ্নের স্যাটেলাইট নির্মাণ ও এর সফল উৎক্ষেপণে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাকাশে আজ বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ গৌরব বর্তমান সরকারের, এ গৌরব দেশের ১৬ কোটি মানুষের।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আওয়ামী লীগ সরকারের গতিশীল উন্নয়নের ধারাবাহিকতার একটি অংশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাটি সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো। যারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি একটি জাতীয় স্বপ্ন। তাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সফল উৎক্ষেপণের জন্য দেশের আপামর জনগণ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও চার্চসহ সকল উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণকারী সংস্থা স্পেস এক্স মহাকাশ বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় (ফ্যালকন-৯ এবং ব্লক-৫) সারাবিশ্বের প্রায় সকল দেশ ও মিডিয়া এ উৎক্ষেপণের সম্প্রচার করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করলো এক ‘এলিট ক্লাবে’। নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর এই ক্লাবে বাংলাদেশ ৫৭তম সদস্য। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত, থাইল্যান্ড, কানাডা, ফ্রান্স, শ্রীলংকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর সম্প্রতি ভারত সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থল ও জলসীমা জয়ের পর মহাকাশ জয় ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি দীর্ঘ যাত্রা। ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ সকল প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়। পরে গত ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সুবিধা পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্যাটেলাইট টেকনোলজি ও সেবার প্রসারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ, ভিস্যাট প্রভৃতি সেবা প্রদান সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার নিশ্চিত ও নির্বিঘœ করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে তার মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি দেশের বাইরের জন্য ব্যবহার করা হবে।
২০টি ট্রান্সপন্ডার লীজের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বার্ষিক ১৪ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে নিজেদের অবস্থানকে সমুন্নত রাখতে এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে প্রেরণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।