• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

যে রং ঘুম কেড়ে নেয়

প্রকাশ:  ২৫ জুন ২০১৮, ২১:৩৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শিরোনাম পড়ে হয়তো অবাক হবেন এই ভেবে যে রঙের সঙ্গে ঘুমের কী সম্পর্ক? তবে গবেষণায় দেখা গেছে, চোখের ঘুম-ঘুম ভাব কেড়ে নিয়ে মস্তিষ্ক সজাগ করে তুলতে পারে একটি বিশেষ রং।

 

রংটির নাম সায়ান। সহজ করে বলতে গেলে, সবুজ আর নীল মেশালে যে রং হয় সে রকম।

 

 

জীববিজ্ঞানীদের মতে, এই রঙের মধ্যে এমন একটি গোপন উপাদান আছে, যেটা এক ঝটকায় মানুষের ঘুম তাড়িয়ে মস্তিষ্ককে সজাগ করে তুলতে পারে।

 

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন যে, চোখের সামনে এই সায়ান রং বেশি মাত্রায় থাকলে মানুষের ঘুম কমে যায়। অন্যদিকে এই রং সরিয়ে রাখলে ঘুমিয়ে পড়া সহজ হয়।

 

চোখের সামনে এই রঙের পরিবর্তন যদি তেমন একটা দৃশ্যমানও না হয় তাও এর প্রভাব অনুভব করা যায় বলে জানায় তারা।

 

গবেষকরা জানান, তারা কম্পিউটার এবং মোবাইলের স্ক্রিনের জন্য এমন কোন জিনিষ তৈরি করতে চান যেটা দিয়ে সায়ানের রঙের মাত্রা কমানো বাড়ানো যাবে।

 

ঘুম গবেষকরা এরই মধ্যে ঘুমের সঙ্গে রঙের একটি সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন ডিভাইস থেকে যে নীল রঙের আলো বিচ্ছুরণ হয় সেটা ঘুমের বিলম্ব করে বলে চিহ্নিত করেছে। এ কারণেই স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের সেটিংসে নাইট মুড নামে একটি অপশন থাকে।

 

যেটা এই ব্লু লাইটের পরিমাণ কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। এতে রাতের বেলা ঘুমের ব্যাঘাত কম হয়।

 

এ নিয়ে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানীরা সুইজারল্যান্ডের বাসেন শহরে গবেষণা পরিচালনা করে।

 

এই গবেষণা নিয়ে ‘স্লিপ’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করেন তারা। সেখানে সায়ান রঙের কয়েকটি বিশেষ প্রভাবের কথা উঠে আসে।

 

যখন মানুষ চোখের সামনে কম বা বেশি পরিমাণ সায়ান রং দেখতে পায় তখন গবেষকরা তাদের লালার নমুনা থেকে স্লিপ হরমোনের মাত্রার তারতম্য পরিমাপ করতে পারে।

 

অধ্যাপক রব লুকাস জানান, কারো জন্য এটা জরুরি নয় যে সে নিজে রং-এর পার্থক্য দেখতে পারছেন কিনা।

 

খালি চোখে এই পার্থক্য দৃশ্যমান না হলেও শরীর এই পরিবর্তনের কারণে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে কিনা সেটা বেশি জরুরি।

 

 

তিনি বলেন, সায়ান রঙের সঙ্গে মিলিয়ে যদি অন্য কোন রং তৈরি করা হয় তাহলে সেটাও মানুষের ঘুমে প্রভাব ফেলতে পারে।

 

সবুজের এমন বিভিন্ন শেডে সায়ান রঙ মেশানো থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সায়ানের কাছাকাছি অন্য কোনো রং মিশিয়ে কাঙ্ক্ষিত রং তৈরি করা যেতে পারে।

 

স্ক্রিনের রঙ
যদি মানুষকে জাগিয়ে রাখার লক্ষ্য থাকে, যেমন যেসব কাজে রাতের বেলা প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে কম্পিউটারের স্ক্রিনে সায়ান রং বা এর সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা অন্য কোন রং রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

 

তবে যদি লক্ষ্য থাকে ঘুম বাধাগ্রস্ত হওয়ার সমস্যা কমানো তাহলে কম্পিউটারে স্ক্রিনে এমন রং রাখতে হবে যেখানে সায়ানের কোনো মিশ্রণ নেই।

 

গবেষকরা এই ধারণাটি প্রমাণ করতে মানুষকে বিভিন্ন সিনেমা দেখান।
যেখানে কিছু সিনেমার পর্দায় সায়ান রং ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোনটিতে হয়নি।

 

এতে দর্শকদের লালায় মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা এবং এতে ঘুমের তারতম্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়।

 

অধ্যাপক রব লুকাস এবং ডক্টর এনেটে অ্যালেন নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষক দলটি জানায়, এই আবিষ্কারের বিষয়ে কম্পিউটার, টেলিভিশন বা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন থাকতে পারে।

 

অধ্যাপক লুকাস বলেন, ‘এ গবেষণার ফলাফল এক অর্থে দারুণ। কারণ এ থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, সায়ান রং পরিবর্তন না করে শুধু এই রং থেকে বিচ্ছুরিত আলোর সংবেদনশীলতা বা লাইট এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা কতোটা ঘুম-ঘুম বোধ করবো সেটাকে প্রভাবিত করতে পারি।’

 

যেসব পরিবারের কিশোর-কিশোরীরা রাতের বেলা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, এই গবেষণা তাদের সাহায্য করতে পারে বলে জানান অধ্যাপক লুকাস।
খবর বিবিসি বাংলা

সর্বাধিক পঠিত