বধ্যভূমিগুলোর ১০ মাস খোঁজ রাখা হয় না
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সর্বশেষ মাসটি ছিল ডিসেম্বর। তখন সারা বাংলায় বিজয়ের সুবাস ছড়াচ্ছিল। আর সে সময়েই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর-রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যদের হাতে অপহৃত হন অনেক বুদ্ধিজীবী। পরে তাদের নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। জাতি হিসেবে বাঙালিকে পঙ্গু করে দেয়ার লক্ষেই জাতির সূর্য সন্তানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত হয়েছে রায়ের বাজার এবং মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধটি। কিন্তু সঠিক তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিনিয়তই কেঁদে চলেছে এ স্মৃতিসৌধগুলো। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের আগে স্মৃতিসৌধগুলো টানা ২ মাস ধরে পরিচর্যা করা হলেও বছরের দশ মাস এর অবস্থা থাকে করুণ।
স্থানীয় বখাটেরা মাদক সেবনের আস্তানা বানায় এ স্মৃতিসৌধগুলোতে। স্মৃতিসৌধের বেদির সামনে- পেছনের রাস্তার ইট খুলে অনেকে বানায় ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প। এছাড়াও কিছু প্রেমিক প্রকৃতির মানুষ এখানে এসে চালায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড। তাই শহীদদের শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষায় এমন অবহেলাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
সরেজমিনে বধ্যভূমিগুলো ঘুরে জানা যায়, মিরপুর ও রায়েরবাজারের বধ্যভূমি দুটি সম্প্রতি পরিচর্যা করা হয়েছে। বেদির রাস্তায় লাগানো হয়েছে নতুন ইট। রঙ দেয়া হয়েছে বধ্যভূমির গাছগুলোতে। বধ্যভূমির ভেতর লেকগুলোর পানি পরিষ্কার করা হয়েছে এবং পানি দিয়ে ধৌত করা হয়েছে পুরোবধ্যভূমির জায়গা। রোববার মিরপুর বধ্যভূমির দায়িত্বরত আনসার সদস্য মিজান যুগান্তরকে বলেন, মহিলা কর্মীদের ৪০০ ও পুরুষ কর্মীদের ৬০০ টাকা করে দিয়ে দেড় মাস যাবৎ চলছে পরিচর্যার কাজ। আর রায়েরবাজার বধ্যভূমির সরকারি সিকিউরিটি গার্ড জমির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বধ্যভূমিটি প্রেসার মেশিন দিয়ে সম্প্রতি পরিষ্কার করা হয়েছে। তবে মেশিনের সঙ্গেও ২০-৩০ জন লোক দেড় মাস যাবত এখানে পরিচর্যার কাজ করছে।
এ রকম চিত্রগুলো এখনকার হলেও বছরের দশ মাসই অরক্ষিত থাকে বধ্যভূমিগুলো। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ১২টি লাইটের মধ্যে জ্বলে মাত্র ৩টি লাইট। বাকি সবগুলোই নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। ফলে সন্ধ্যা হলেই স্থানীয় বখাটেরা গাঁজা সেবনের জন্য চলে আসে এখানে। গণপূর্ত অধিদফতর থেকে দেয়া ৬ জন সিকিউরিটি গার্ড থাকলেও ভয়ে এরা কাউকে কিছু বলে না। অথচ এখানে নেই কোনো সহস্র নিরাপত্তারক্ষী। মিরপুর বধ্যভূমির অবস্থা আরও করুণ। বধ্যভূমি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা যুগান্তরকে বলেন, এখানে আনসার সদস্যরা দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও এই বধ্যভূমিটিতে স্থানীয় কিছু বখাটে বিকাল হলেই মেয়ে নিয়ে ঢুকে পড়ে এবং অবস্থান করে গভীর রাত পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর এখানে দেদার চলে গাঁজা সেবন। এখানকার লেকটিতে তেমন একটা পানি নেই। তবে পানি থাকলে স্থানীয় ছেলেরা ককসিট ভেঙে এই লেকে সাঁতার কাটে। অনেকে বিকাল হলেই সাইকেল ও গাড়ি চালানো শিখে এখানে। এলাকাবাসী আরও জানায়, প্রতিদিন বিকাল হলেই মানুষের মেলা বসে এখানে। এ সুযোগে কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা ভেতরে ফেরিওয়ালা ঢুকিয়ে একেক জনের কাছ থেকে ৩০ হতে ৫০ টাকা করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয় মিরপুর বুদ্ধিজিবী স্মৃতিসৌধের প্রধান আনসার সদস্য পিসি সিরাজ যুগান্তরকে বলেন, ফেরিওয়ালারা ভেতরে প্রবেশ করে তা সত্য কথা। তবে আনসাররা তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা নেয় না।
সূত্রঃ যুগান্তর