• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বর্ষবরণে অংশ নেবে ২৮ কোটি বাঙালি

প্রকাশ:  ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:০৭ | আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
চৈত্রসংক্রান্তি ও হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকেরা।
প্রিন্ট

পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারা ও চ্যানেল আই। চ্যানেল আইয়ের মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় ২৮ কোটি বাঙালি এর সঙ্গে যুক্ত হবে। ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছে চৈত্রসংক্রান্তি আর পরদিন সকাল ছয়টায় হাজার কণ্ঠে লোকগান গেয়ে বরণ করে নেওয়া হবে বাংলা নতুন বছর ১৪২৬ সালকে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আই ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আয়োজকেরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুরের ধারার চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও ইউনিলিভারের বিপণন বিভাগের পরিচালক নাফিস আনোয়ার। স্বাগত বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক (অনুষ্ঠান বিভাগ) শহিদুল আলম সাচ্চু।RFL Gas Stoveএ বছর অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু ‘লোকসুরে বাংলা গান’। বাংলার সব গীতিকবিই বিভিন্ন সময়ে বাংলা গানে লোকসুর ব্যবহার করেছেন। বাংলার লোকায়ত কবি, শিল্পী, বাউল, ফকিরেরা যেসব গান করেছেন, সেগুলোর মধ্যে উঠে এসেছে বাংলার মাটির গন্ধ।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘প্রদীপ জ্বালানোর আগে যেমন সলতে পাকাতে হয়, তেমনি একটি উৎসব করার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হয়। পয়লা বৈশাখে আমাদের বিশাল যে উৎসব, সেটাকে সার্থক করার জন্য বছরের শেষটা অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তিকেও আমরা উদ্‌যাপন করি। তখন থেকেই আমাদের বর্ষবরণের উৎসবের আবহ তৈরি হয়ে যায়। রাত ১২টায় যখন চৈত্রসংক্রান্তি শেষ হয়, পরদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকাল ছয়টায় আমরা যখন উৎসবে প্রবেশ করি, তখন সেটা হঠাৎ কোনো উৎসব থাকে না। সেটা হয়ে যায় আগের অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা।’রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আরও বলেন, ‘চৈত্রসংক্রান্তিতে শিশু থেকে তরুণ, সবাই আয়োজনের প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত হয়। এভাবেই তাদের মধ্যে সংস্কৃতিমনস্কতা তৈরি হয়। অন্যদিকে পয়লা বৈশাখে সারা দেশের শিল্পীদের সম্পৃক্ত করি। কারণ, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, উৎসব তখনই সার্থক হয়, যখন মানুষের আত্মার সঙ্গে আত্মার মিলন হয়, প্রাণের সঙ্গে প্রাণের মিলন হয়। আমরা আত্মার সঙ্গে আত্মার মিলনের উদ্দেশ্যে সারা দেশের শিল্পীদের এই মঞ্চে একত্র করি এবং চ্যানেল আইয়ের মাধ্যমে এটা সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই অনুষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত হন। এভাবেই তাদের সঙ্গে আমাদের প্রাণের একটা অদৃশ্য যোগ স্থাপিত হয় সুরের মাধ্যমে।’

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জানান, এ বছর অষ্টম বছরে পদার্পণ করছে এই অনুষ্ঠান। দশম বছর পূর্তিতে দেড় হাজার শিল্পীকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সারা দেশের মানুষের মধ্যে জাগিয়ে রাখতে চান তাঁরা। যাতে সবাই সারা বছর এ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। এর মাধ্যমে দেশে সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বোধের বিকাশ হবে। এ জন্য প্রত্যেক মানুষকে সংস্কৃতিসচেতন হতে হবে, সংস্কৃতিকে উপলব্ধি ও অনুভব করতে হবে, সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে হবে। এবার এই আয়োজনে ঢাকার অর্ধেক শিল্পী এবং বাকি অর্ধেক ঢাকার বাইরের শিল্পীকে যুক্ত করা হবে।নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘চৈতসংক্রান্তির সন্ধ্যায় আমরা চলমান বছরকে বেদনা নয়, আনন্দের সঙ্গে বিদায় জানাই। চলতি বছর যে অর্জনগুলো, সেগুলোকে আমরা উদ্‌যাপন করি। ব্যর্থতাগুলো বা যে মানুষগুলো আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, তাঁদের জন্য বেদনাটা থাকবে। তবে তাঁদের কর্মের যে উত্তরাধিকার আমরা নিয়েছি, সেটার জন্য আমরা গৌরবও বোধ করব। নতুন বছরে পদার্পণে আমরা বাঙালি ও বাংলাদেশকে ঘিরে স্বপ্ন দেখব। সেই স্বপ্নে যেন সবাই শামিল হয়, সে জন্য এই আয়োজন।’

এ উৎসবকে বৈশ্বিক বিবেচনা করে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ ও একুশে ফেব্রুয়ারি, এ দুটি দিন কোনো দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বে যে ২৮ কোটি বাঙালি আছেন, এই দুটি দিন সবাই উদ্‌যাপন করে। যদিও আমাদের স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস আছে। কিন্তু এগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ঘটনা। কিন্তু অন্য দুটি হচ্ছে দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে যাচ্ছে, জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় সারা পৃথিবীর বাঙালি একত্র হচ্ছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ বলেই বাঙালির কাছে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয়েছে।’নাফিস আনোয়ার বলেন, বাঙালির জীবনের ঐতিহ্য থেকে তৈরি করা একটি পণ্য নিয়ে তাঁরা এবার এ আয়োজনে শামিল হচ্ছেন। লিভার আয়ুশ হাজার বছরের পুরোনো রূপচর্চার উপকরণ, যা এই ভূখণ্ডে অনেক পুরোনো। এ পণ্য তৈরি জ্ঞানটুকু কেবল বাইরে থেকে নিয়ে দেশজ পণ্য ও শ্রমশক্তি দিয়ে তারা এটি তৈরি করেছেন।

ফরিদুর রেজা সাগর জানান, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই এত বড় অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়। চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সীদের এ অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত করেন। নতুন প্রজন্মকে বাংলা গানকে ভালোবাসার, সংস্কৃতিকে ভালোবাসার মহান শিক্ষা দিচ্ছে সুরের ধারা।চ্যানেল আইয়ের পাশাপাশি কলকাতার রূপসী বাংলা ও বাংলাদেশের একাত্তর টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। দেশে আগ্রহী অন্য টিভি চ্যানেলগুলোকে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানান ফরিদুর রেজা সাগর।হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণের এ আয়োজনে সস্ত্রীক যোগ দেবেন বাংলা ভাষায় পারদর্শী ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।প্রথম আলো

 

সর্বাধিক পঠিত