হলিউড মোড়লের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ
বোমা ফাটানোর মতোই খবর! হলিউড মোড়ল হার্ভে ওয়েইনস্টাইন হলিউডের একজন করে অভিনেত্রী ও মডেলকে যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তারকারাই নন, সহকারী আর অফিসের কর্মচারিরাও নাকি তার কুনজর থেকে রেহাই পাননি! গত ৫ অক্টোবর নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ফাঁস হয়েছে এই বিস্ফোরক তথ্য।
গত তিন দশকে অন্তত আট জন নারীকে হার্ভের ক্ষমতার সামনে আপস করতে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সবই কোনও না কোনও হোটেল কক্ষে। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী অ্যাশলি জুড জানান, কাজের খাতিরে দুই দশক আগে বেভারলি হিলস হোটেল কক্ষে হার্ভের সঙ্গে দেখা করতে হয়েছিল তাকে। তখন বাথরোব এগিয়ে দিয়ে ম্যাসাজ করে দিতে চান হার্ভে। অথবা স্নান দেখতে বলেন তিনি। বিনিময়ে ক্যারিয়ার দাঁড় করিয়ে দেওয়ার টোপ ফেলেন। একইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল বলে জানান মডেল রোজ ম্যাকগোয়ান। ১৯৯৭ সালে ২৩ বছর বয়সে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়েন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হার্ভে বলেন, ‘অ্যাশলি জুড এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জানি। তার লেখা বই পড়েছি। তার জীবনের গল্প মর্মান্তিক। তাকে শ্রদ্ধা করি। সত্যি বলতে আমি সব নারীকেই সম্মান জানাই। তাদের সঙ্গে বরাবরই ভালো ব্যবহারের চেষ্টা করেছি।’
হার্ভের ব্যক্তিগত আইনজীবী লিসা ব্লুম জানান, এসব অভিযোগ স্পষ্টতই মিথ্যা। হার্ভের অ্যাটর্নি চার্লস জে. হার্ডারের দাবি, নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদন তার মক্কেলের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ ও মানহানিকর। পত্রিকাটির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের মুখপাত্র ড্যানিয়েলে রোডাস অবশ্য জানিয়েছেন, প্রতিবেদনটির সত্যতা নিয়ে এই পত্রিকা আত্মবিশ্বাসী। তার দাবি, প্রকাশের আগেই খবরটা জানতেন হার্ভে। কিন্তু নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি এড়িয়ে গেছেন।
যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার কারণে চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়েইনস্টাইন কোম্পানির দায়িত্ব থেকে ছুটি নিয়েছেন হার্ভে। একইসঙ্গে শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দীর্ঘ এক বিবৃতিতে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
মিরাম্যাক্স ও দ্য ওয়েইনস্টাইন কোম্পানির এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা গত ৫ অক্টোবর এক বিবৃতিতে জানান, যা ঘটেছে সেজন্য তিনি অনুতপ্ত। ৬৫ বছর বয়সী এই নির্মাতার বক্তব্য— ‘মানুষের সঙ্গে বরাবরই বিনয়ী থাকার চেষ্টা করি। অতীতে আমার ব্যবহারের কারণে কেউ ব্যথা পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। জানি আমাকে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এখন সময় নিজের সম্পর্কে জানার।’
অস্কারজয়ী প্রযোজক হার্ভে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিকে সামাল দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি নেওয়ার পাশাপাশি থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হচ্ছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সভায় তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, শিগগিরই কাজে ফিরতে চান। তার অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটি চালাবেন হার্ভের ভাই কো-চেয়ারম্যান বব ওয়েইনস্টাইন ও চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) ডেভিড গ্লাসার।
এদিকে নারীদের সঙ্গে গায়ে পড়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর প্রতিবেদনটিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে দ্য ওয়েইনস্টাইন কোম্পানি। তারা মনে করেন, যেসব নারী তাদের ছবিতে কাজ করেন তারা হয়রানি ও বৈষম্যমূলক আচরণের কোনও অভিজ্ঞতার সামনে পড়বেন তা কখনও কাম্য নয়। প্রত্যেককেই সম্মান দেওয়া কর্তব্য বলেও মন্তব্য তাদের। প্রতিষ্ঠানে এমন নীতি থাকা জরুরি।
জানা গেছে, যৌন নিপীড়নের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য দ্য ওয়েইনস্টাইন কোম্পানির বোর্ড নিযুক্ত করেছে নিউ ইয়র্কের একটি আন্তর্জাতিক আইন সংস্থার কর্মকর্তা জন কিয়ারন্যানকে।
এদিকে হলিউডের শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠায় হতবাক হয়েছেন অনেকে। হার্ভের ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য ফাঁসে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হলিউড তারকারা। নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের লেখককে ধন্যবাদ দেন মার্কিন অভিনেত্রী লিনা ডুনহ্যাম। ৬ অক্টোবর টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘যে নারীরা হার্ভে ওয়েইনস্টাইনের হয়রানি নিয়ে মুখ খুলেছেন তারা আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার দাবিদার। এটা মজার ব্যাপার নয়, সাহসের বিষয়।’
একই দিন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ব্রি লারসন টুইটারে লিখেছেন, ‘সবসময়ই আমি শারীরিক লাঞ্ছনা ও হয়রানির শিকার সাহসী নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এটা আপনার দোষ নয়। আপনাকে আমি বিশ্বাস করি।’ যদিও তিনি হার্ভের নাম উল্লেখ করেননি টুইটে।
হার্ভে ওয়েইনস্টাইনএবারই প্রথম নয়, ২০১৫ সালে ট্রাইবেকা চলচ্চিত্র উৎসবে ওয়েইনস্টাইন জড়িয়ে ধরেছিলেন বলে অভিযোগ তোলেন ইতালিয়ান একজন মডেল।
হার্ভে ওয়েইনস্টাইন হলিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষগুলোর একজন। ১৯৭৯ সালে ভাই ববকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন স্বাধীন চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মিরাম্যাক্স। ২০০৫ সালে তারা এটি বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেন দ্য ওয়েইনস্টাইন কোম্পানি। তার প্রযোজিত অস্কারজয়ী ছবির তালিকায় আছে ‘শেক্সপিয়র ইন লাভ’, ‘শিকাগো’, “দ্য কিং’স স্পিচ”, ‘দ্য আর্টিস্ট’ প্রভৃতি। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের মূল দাতাদের একজন ছিলেন তিনি।
ব্যক্তিজীবনে হার্ভে পাঁচ সন্তানের বাবা। এর মধ্যে দু’জনের মা জিওর্জিওনা রোজ চ্যাপম্যান। ২০০৭ সালে এই ফ্যাশন ডিজাইনারকে বিয়ে করেন তিনি।