স্বামীর নির্যাতন নিয়ে মুখ খুললেন মিলা
মারধর ও যৌতুকের অভিযোগে সংগীতশিল্পী মিলার দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার তার স্বামী পারভেজ সানজারিকে গ্রেফতার করেছে উত্তরার পশ্চিম থানা পুলিশ। সংগীতাঙ্গনে এখন এ খবর আলোচিত। স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও মামলা নিয়ে মুখ খুলেছেন মিলা। শুক্রবার দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট ও ভেরিফায়েড পেজে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
স্ট্যাটাসের শুরুতেই মিলা জানিয়ে দেন— ‘হ্যাঁ, আমার ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে।’ এরপর তিনি লিখেছেন, ‘১০ বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১৩ দিন পর জানতে পারি, একাধিক নারীর সঙ্গে তার (পারভেজ সানজারি) সম্পর্ক আছে। প্রেমের সময় থেকেই সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে। বিয়ের পরও একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমাকে প্রতারিত করেছে। এত বছরের সম্পর্কের পরও যে মানুষ এমন করতে পারে তার সঙ্গে একছাদের নিচে থাকা যায় না। কোনও নববধূই এমন বর প্রত্যাশা করে না। মানুষ হিসেবে শুধু আমি নই, এটা কেউই মেনে নিতে পারবে না। কোনও স্বামীই তার স্ত্রীর অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক কিংবা কোনও স্ত্রী অন্য নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক সহ্য করতে পারে না।’
পারভেজ সানজারি কাজ করেন দেশের একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সে। এই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন বিমানবালার সঙ্গে স্বামীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা ফাঁস করেছেন মিলা। তিনি স্ট্যাটাসে আরও বলেন, ‘১০ বছরের সম্পর্কের পর জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতেই তার বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ পেলাম। তারপরও সংসার ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে বিয়ের কথা অস্বীকারের সঙ্গে আমার সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করতে থাকে। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আমার সঙ্গে কী কী ঘটছে তা জানাই সানজারির অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। আমার স্বামীকে তিনি বোঝাতে সক্ষম হবেন বলে মনে হয়েছিল। আমাদের সামাজিক অবস্থান আছে। লজ্জাজনক কাজ করে সেই মর্যাদা ক্ষুণ্ন না করার পরামর্শ দিতে বলেছিলাম তাকে। এমডি আমাকে কথা দিয়েছিলেন, সানজারির সঙ্গে কথা বলবেন। একইসঙ্গে কোন বিমানবালাদের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক আছে তাদের নাম জানতে চেয়েছেন তিনি। তার কথা শুনে ধৈর্য ধরেছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’
চলতি বছরের ১২ মে পারভেজ সানজারিকে বিয়ে করেন মিলা। এরপর শুধু মানসিক নির্যাতনই নয়, শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি। তার কথায়, ‘সততা না থাকলে জীবনের মানে হয় না। শিল্পী বা তারকা নয়, সংসারে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি ন্যূনতম সম্মান ও শালীনতা থাকা দরকার। শেষমেষ নিজের মধ্যে উপলব্ধি হলো, যথেষ্ট হয়েছে। আর সহ্য করা যায় না। বিশেষ করে অনেক তরুণী আমাকে রোলমডেল হিসেবে দেখে, তাই এভাবে আর থাকা উচিত নয়। এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে নিজের ভাগ্য নিজের হাতে নেওয়া প্রয়োজন ছিল আমার।’
এরপর পরিবারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান মিলা। তারা তাকে নিয়ে উত্তরা থানায় নিয়ে যান। সেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী মামলা করেন জনপ্রিয় এই গায়িকা। এরপর সানজারিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য পরিবার, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মিলা। স্ট্যাটাসের সবশেষে তিনি বলেন, ‘সমাজে নিজের অবস্থান যাই থাকুক না কেন, কোনও নারী কিংবা পুরুষের এভাবে সব নির্যাতন নিরবে মেনে নেওয়া উচিত নয়।’
এখন থেকে গানে নিয়মিত হওয়ার আভাস দিয়ে মিলা বলেন, ‘আমার কাজ ও গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমার এই ভালোবাসার সবচেয়ে বড় অর্জন ভক্ত ও শ্রোতারা। এত বছর পরেও তারা আমাকে ভুলে যাননি।’