এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা-২০২০-এর ফল প্রকাশ
শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির লিখিত বক্তব্য
সুপ্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
২০২০ সালের এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৮ মার্চ শেষ হয়। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন এ বছরও সুষ্ঠু, নকলমুক্ত এবং প্রশ্নফাঁসের গুজবহীন পরিবেশে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত ১০ বছর পরীক্ষা শেষের ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হয় কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছর ৬০ দিনে ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এ বিশেষ পরিস্থিতিতে সারাদেশে সকল ধরনের পাবলিক পরিবহন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রধান পরীক্ষকদের নিরীক্ষিত ঙগজ বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বোর্ডসমূহে পেঁৗছে দিয়ে ফল প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ, জেলা প্রশাসন, প্রধান পরীক্ষক, পরীক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে ফলাফল প্রস্তুত করায় আজ ৩১ মে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারও ফল প্রকাশের দিন তাঁর অসম্ভব ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দিয়েছেন। আমরা সমগ্র শিক্ষা পরিবার তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
গত বছরের তুলনায় এ বছরেও ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যেমন-বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান প্রচার, শিক্ষার উপকরণ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং নকল বিরোধী ব্যাপক প্রচারণা।
পরীক্ষা সুচারুভাবে সম্পন্নের ক্ষেত্রে গৃহীত কিছু ব্যবস্থা আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরছি:
পরীক্ষা শুরুর ৩০ (ত্রিশ) মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কক্ষে তার জন্য নির্ধারিত আসন গ্রহণ করেছে।
ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট তারিখের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সকল সেট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার জন্যে নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর ২৫মি. পূর্বে ঝগঝ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রশ্নপত্রের সেট কোড জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
কেন্দ্র সচিব ব্যতিত অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি।
পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যতীত অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি।
বিশেষভাবে সক্ষম (Differently Able) পরীক্ষার্থীদের জন্য গৃহীত বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ:
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের এবং শ্রবণ-প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
গত বছরের ন্যায় এ বছরও উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন রোধে বোর্ডসমূহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধান পরীক্ষকগণকে উত্তরমালা প্রণয়নের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রণীত নমুনা উত্তরমালার আলোকে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের গুণগতমান যাচাইয়ের জন্য একটি প্রশ্নমালা সকল প্রধান পরীক্ষককে সরবরাহ করা হয়েছে।
এছাড়া, সারাবছর পরীক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনলাইনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এ তথ্যগুলো খুবই ইতিবাচক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টাসহ সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় এ অবস্থায় পেঁৗছানো সম্ভব হয়েছে। শিক্ষা পরিবারের সকলকে জানাচ্ছি অভিনন্দন।
আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গতবারের মত এবারও সম্পূর্ণ পেপারলেস ফল প্রকাশিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে ফল প্রকাশের দিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থেকে সরাসরি মোবাইল ফোনে ফল প্রাপ্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফল প্রকাশের দিনে কোন ধরণের সমাবেশ বা উৎসব না করার নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ডসমূহ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ক্রমশ উন্নতির ধারা অব্যাহত রয়েছে।
পরিশেষে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফল প্রকাশে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য আমি সকলকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ ছাড়া পরীক্ষায় কৃতকার্য সকল পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দকে অভিনন্দন। যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমি আশা করবো তারা নব উদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতিতে আগামীতে পরীক্ষা দিয়ে সফলকাম হবে।
আজকের এ সভায় উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। ডা. দীপু মনি এম.পি, শিক্ষামন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার