এক মাসেই শেষ হবে এইচএসসি
দেশে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় এ পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের সময়সীমা কমিয়ে আনা হবে। শিক্ষার্থীদের সেশনজটে না ফেলতে বোর্ড চেয়ারম্যানদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করতে রুটিন প্রকাশ করে দেশের সকল শিক্ষাবোর্ডগুলো। ১ এপ্রিল থেকে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে ৪ মে পর্যন্ত চলার কথা ছিল। পরদিন ৫ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে ১৮ মের মধ্যে সেসব উত্তরপত্র, স্বাক্ষরলিপি ও অন্যান্য কাগজপত্র রোল নম্বরের ক্রমানুসারে সাজিয়ে স্ব স্ব শিক্ষাবোর্ডে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী ১ মাস ১৮ দিনে এ পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে সকল প্রস্তুতি পিছিয়ে যায়।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন দেশের সকল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভা করেন। সেখানে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু করার বিষয়ে আলোচনা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ কারণে পরীক্ষা আয়োজনের সময়সীমা ১ মাস ১৮ দিনের বদলে ১ মাসের মধ্যে তা শেষ করতে বোর্ড চেয়ারম্যানদের নতুনভাবে রুটিন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। তবে প্রতিটি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তিন ঘণ্টা সময় বহাল থাকবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনের সময়সীমা কমিয়ে আনা হবে। দেড় মাসের বদলে এটি এক মাসের মধ্যে শেষ করা হতে পারে। এ বিষয়ে সচিব স্যারকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে যে পরীক্ষাগুলোর মাঝে দুই থেকে তিনদিন বিরতি ছিল, তা কমিয়ে একদিন করে বিরতি দেয়া হতে পারে। যেহেতু পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে, তাই একদিন করে বিরতি দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হলে পরীক্ষার্থীদের ওপর চাপ পড়বে না। ঈদের ছুটি শেষ হলে এ পরীক্ষা শুরু করা হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ ও সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে আমরা দ্রুত পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রস্তুতের কাজ শুরু করব। কাজ শেষ করার পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন দেয়া হলে তা চূড়ান্ত করে সকল শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ এপ্রিল ছুটির সময় পর্যন্ত অপেক্ষার পর পরিস্থিতি বুঝে ঈদের পর পরীক্ষা শুরুর দিন ঠিক করে রুটিন প্রস্তুত করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় সাব-কমিটি। তবে নতুন করে ছুটি বাড়লেও সম্ভাব্য সময় নির্ণয় করে নতুন রুটিন তৈরি করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করা হবে। পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির জন্য পরীক্ষা শুরুর ১৫ দিন আগে রুটিন প্রকাশ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা আয়োজন সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্টসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘসময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঐচ্ছিক শিক্ষাছুটি সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি না থাকলে পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থীদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া বোর্ডের ওয়েবসাইটেও ফল দেখা যাবে।