• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সততা স্টোর

বিক্রেতাবিহীন দোকানে সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ:  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষে সাজানো রয়েছে বাহারি রকমের স্বাস্থ্যকর খাবার। কক্ষের একটি তাকে রাখা আছে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ। পাশেই একটি ক্যাশ বাক্স। যার উপরে লিখা, ‘তোমার যা প্রয়োজন তা নিয়ে যাও, মূল্য যা তা রেখে যাও।’ কক্ষের সামনে টানানো দৃষ্টিনন্দন একটি সাইনবোর্ড। যাতে লিখা গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সততা স্টোর।
‘বিক্রেতাবিহীন দোকানে সততার পরীক্ষা’ এই শ্লোগানে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন করা হয় গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সততা স্টোরের। উদ্বোধনের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় সততা স্টোরে। পূর্বে লেইজার প্রিয়ডে যারা বাইরে গিয়ে আচার, ঝালমুড়ি জাতীয় অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতো তারা সকলেই এখন সততা স্টোরের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন ক্লাস বসার পূর্বে, লেইজারে মধ্যাহ্ন বিরতিতে এবং ক্লাস শেষে ছুটির পর এই তিন সময়ে সততা স্টোরে সর্বোচ্চ বিক্রি হয় বলে জানা যায়। দোকানের ভিড় কমাতে লাইন ধরে পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনে নির্ধারিত টাকা ক্যাশ বাক্সে রেখে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ পর্যন্ত দোকানটিতে একদিনে সর্বোচ্চ ১৭শ’ টাকা বিক্রি হয়েছে বলে জানান স্কুলের সততা সংঘের সভাপতি ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাহেদ হাওলাদার। তিনি বলেন, আমরা সততা সংঘের যতগুলো কার্যক্রম গ্রহণ করেছি তার মধ্যে সততা স্টোর গঠন ও তা টিকিয়ে রাখা বর্তমান কমিটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের অনেক সহপাঠীই বলেছিলো সততা স্টোর চালু করার পর আমরা সফল হবো না। দোকানের অনেক পণ্যই থাকবে না। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত তা সফলভাবেই পেরেছি। শিক্ষার্থীদের সততার পরীক্ষা নিতে পেরেছি। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে। দিন শেষে পণ্য কেনা-বেচার হিসাবও মিলছে।
স্কুলের সততা সংঘের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল তালুকদার বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, চাইলেই সৎ থাকা যায়। বিক্রেতা না থাকলেও আমাদের ¯্রষ্টা ঠিকই আমাদের পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি সব দেখেন। শিক্ষার্থীরা তাই প্রতিনিয়তই তাদের সততার পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হচ্ছে। অল্প কয়েকজন এখনও নির্দেশনা না মানলেও আশাকরি অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তাও ঠিক হয়ে যাবে।
স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে সততা স্টোরের দায়িত্বে ছিলেন সিনিয়র শিক্ষক ইসমাইল প্রধানিয়া ও সহকারী শিক্ষক রাসেল হাসান। শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে সততা সংঘের যাবতীয় কাজগুলো নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সততা স্টোরেরও দেখাশোনা করছেন তারা। এ বিষয়ে সিনিয়র শিক্ষক ইসমাইল প্রধানিয়া বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের অনুমতিক্রমে আমরা শিক্ষার্থীদের ছাত্রজীবন থেকে সৎ ও আদর্শিকভাবে গড়ে তোলার জন্যই সততা সংঘের মাধ্যমে সততা স্টোর চালু করি। ইতমধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তার ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছি।
সততা স্টোরের সমন্বয়ক স্কুলের সহকারী শিক্ষক রাসেল হাসান বলেন, শুধু নামে নয়, কর্যকরভাবেই আমাদের সততা স্টোরটি চলছে। প্রতিদিন সকালে সততা স্টোরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সততা স্টোরের দরজা খুলে উন্মুক্ত রেখে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করে দাম রেখে যাচ্ছে। বিকেল ৪টায় সততা সংঘের সভাপতি বিক্রিত টাকা বুঝে নিয়ে পরদিনের জন্য আবার নতুন পণ্য ক্রয় করছে। আমরাও তাদের সহযোগিতা করছি। সত্যিকার অর্থেই এটি ভালো লাগার মত একটি কাজ।
সততা স্টোরে বিক্রিত পণ্যগুলোর দাম স্কুলের বাইরের দোকানের খুচরা বিক্রিত পণ্যের চাইতে কম বলে জানা যায়। ন্যূনতম লাভ রেখে পণ্যর দাম দেয়া আছে প্রতিটি পণ্যের উপরে। ইতমধ্যে সততা স্টোরের বিক্রিত টাকার লভ্যাংশ দিয়ে স্কুলের সকল শিক্ষকদের আপ্যায়নও করা হয়েছে বলে জানা যায়। আগামীতে লভ্যাংশের টাকা স্কুলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার কাজে ব্যয় করা হবে বলেও জানান সততা সংঘের সহ-সভাপতি তানভীর আলম তুষার।
গত ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সতাত স্টোরের উদ্বোধন করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালক ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি কাজী হাসেম, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাক হায়দার চৌধুরী, প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্বাস উদ্দীন, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক ইসমাইল প্রধানিয়া, সিনিয়র সহকারি শিক্ষক তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
চাঁদপুর গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সততা স্টোরটি হতে পারে জেলার অন্যান্য স্কুলের জন্যে দৃষ্টান্ত ও প্রেরণার। ছাত্রজীবন থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন সততার চর্চা গড়ে উঠলেই বিনির্মান হবে দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশপ্রেমিক প্রজন্ম।

 

সর্বাধিক পঠিত