অভিভাবকের অকাল প্রয়াণে আর্থিক সঙ্কটের কারণে শিক্ষাজীবন ব্যাহত হবে না ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের
অভিভাবকের অকাল প্রয়াণে শুধুমাত্র আর্থিক সঙ্কটের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে, এ কথা ভুলেও ভাবেনি বোরহান। তবু সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনাই ঘটতে যাচ্ছিল তার জীবনে। মাত্র ক’দিন আগে এক দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু হলে এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্দশা নেমে আসে বেরহানের জীবনে। কী করবে সে এখন? বাবাই যে ছিল তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি!
আমাদের চারপাশে এমন বোরহানের সংখ্যা কম নয়। কেউ হঠাৎ করেই হারিয়েছে বাবা, কেউবা মা, কেউবা বড় ভাই কিংবা বোন, যারা ছিলেন পরিবারের অভিভাবক। অভিভাবক হারিয়ে তারা এখন অথই সমুদ্রে। কে বহন করবে তাদের পড়ালেখার খরচ?
এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এক অভূতপূর্ব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া এ উদ্যোগের নাম ‘অভিভাবক ইন্স্যুরেন্স’ প্রকল্প। এ প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী। এ প্রকল্পের অধীনে বিশ^বিদ্যালয়ের সমস্ত অভিভাবককে উক্ত পলিসির আওতায় আনা হয়েছে । ফলস্বরূপ কোনো অভিভাবক স্বাভাবিকভাবে বা দুর্ঘটনায় মারা গেলেও অভিভাবক হারানো ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী পান আর্থিক সহায়তা, যার মাধ্যমে চলমান থাকে তার অসমাপ্ত শিক্ষাজীবন।
প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সহযোগিতায় ২০ মে সোমবার এ রকম তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ইন্স্যুরেন্সের দাবি পরিশোধ করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। অভিভাবক ইন্স্যুরেন্সের দাবিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী খাদিজা খালিদ খুশবু, ইলমা আক্তার স্বর্ণা ও ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন। বিশ^বিদ্যালয়ের ৭১ মিলনায়তনে ‘অভিভাবক বীমা : চেক হস্তান্তর’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোঃ জালালুল আজিম এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান। বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুব উল হক মজুমদার, ট্রেজারার হামিদুল হক খান, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ জালালুল আজিম বলেন, প্রতিটি মানুষের জীবনে ‘যদি’ বলে একটি শব্দ আছে। এর মানে হচ্ছে অনিশ্চয়তা। কখন, কোন্ সময়ে মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে তা কেউ বলতে পারে না। আর এই অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় সহযোগিতা করে ইন্স্যুরেন্স। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স শিক্ষার্থী বীমা পলিসি আগে থেকেই ছিল, সম্প্রতি অভিভাবক বীমা পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম কোনো বিশ^বিদ্যালয় এই বীমা চালু করেছে। এজন্যে তিনি ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
মোঃ জালালুল আজিম আরো বলেন, আমাদের সমাজে ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে। এসব ভুল ধারণা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। ইন্স্যুরেন্স যে খুব গুরুত্বপূর্ণ এটা মানুষকে বোঝাতে হবে। এজন্যে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ড. মোঃ সবুর খান বলেন, ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয় কখনোই চায় না তার কোনো শিক্ষার্থী অভিভাবকহারা হোক। তবু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিটি মানুষকেই একদিন না একদিন মৃত্যুবরণ করতে হয়। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করার উপায় নেই। তাই এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই অভিভাবকহারা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। অভিভাবক না থাকার কারণে কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন ব্যাহত না হয় সেজন্যে এই অভিভাবক বীমা পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. মোঃ সবুর খান বলেন, মানুষের জীবনে চড়াই উৎরাই থাকবেই। এজন্য ভেঙে পড়লে চলবে না। আমরা সকল সংকটময় সময়ে একে অপরের পাশে থেকে সমষ্টিগতভাবে বেড়ে উঠতে চাই।
উল্লেখ্য, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধকৃত অভিভাবক বীমার অর্থ ওই শিক্ষার্থীর টিউশন ফির সঙ্গে যুক্ত হয়। ফলে তার শিক্ষাজীবন অব্যাহত থাকে।