• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

দেশে উদ্ভাবিত প্রথম হাইব্রিড গাড়ি

প্রকাশ:  ২১ মে ২০১৯, ০০:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে একটি গবেষণা প্রকল্প পেয়েছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক। এটা ২০১৪ সালের কথা। প্রকল্প পরিচালনায় সহযোগী হিসেবে নেন সহকর্মী ফজলুর রশীদকে। দুজন মিলে প্রচেষ্টা চলে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার বিষয়ে ইঞ্জিন ও ব্যাটারি ডেভেলপমেন্টে। তিন বছর পর বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান, ওবায়দুল হাসান, তানভির রহমান, তরিকুল ইসলাম ও ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল হক ফরিদকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হয় নতুন যাত্রা। লক্ষ্য এবার একটি হাইব্রিড ইলেকট্রিক ভেহিকল (ইভি) উদ্ভাবনের। মাত্র দুই বছরের প্রচেষ্টায় একই সঙ্গে তিনটি সুবিধাসম্পন্ন দেশের প্রথম সেই হাইব্রিড ইভি গাড়ি উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছে গবেষক দলটি।

শুরুর কথা- প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু ২০১৭ সালের আগস্ট। হাইব্রিড গাড়ি তৈরির লক্ষ্যে খোঁজা শুরু হয় একটি পরিত্যক্ত গাড়ি। ধোলাইখালে গিয়ে বাজেটের মধ্যে গাড়ি না পাওয়ায় ফিরে আসতে হয় তাদের। পরে স্থানীয় গ্যারেজে সন্ধ্যান পান গবেষকরা।শিক্ষার্থী ওবায়দুুল হাসান বলছিলেন, গাড়িটির বডি (চেসিস) ছাড়া কোনো কিছুই ছিল না। তবে সে গাড়ি এখন ব্যবহার উপযোগী। অন্যসব গাড়ির মতোই।

একই সঙ্গে তিন সুবিধা- ওবায়দুলের সঙ্গে যোগ করে শিক্ষার্থী তানভির রহমান বলেন, উদ্ভাবিত হাইব্রিড গাড়িতে একই সঙ্গে তিনটি এনার্জি সিস্টেম আছে। ইলেকট্রিক্যাল প্লাগ ইন, ইঞ্জিনসেবা (জ্বালানি) ও সোলার চার্জিং সিস্টেম। অর্থাৎ একের ভেতরে তিন। যে কারণে জ্বালানি শেষ হলেও চালানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে সোলার সিস্টেম থাকায় জ্যামে আটকে থাকলেও ব্যাটারি চার্জ হবে। তাছাড়া গাড়ি চলমান থাকলেও একটা বিকল্প জেনারেটর ব্যাটারিকে চার্জ করবে, তাই শক্তি বা জ্বালানির অপচয় হওয়ার সুযোগ নেই। প্লাগ চার্জিং সিস্টেম থাকায় মন চাইলে বিদ্যুতের সাহায্য নিয়ে মোবাইলের মতোই চার্জ দেয়া যাবে।অর্থাৎ ইলেকট্রিক ভেহিকল হিসেবেও যেমন ব্যবহার করতে পারব, আবার হাইব্রিড হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। যখন যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে।

স্থানীয় যন্ত্রপাতির ব্যবহারদেশীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারেই গাড়িটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানান গবেষক দলের অন্যতম শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের বাইরে থেকে কোনো যন্ত্রপাতি আনতে গেলে সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই দেশীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারের চেষ্টা করি। আমরা রাজশাহীর যন্ত্রপাতির ব্যবহারেই গাড়িটি বানিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। আর মাত্র আড়াই লাখ টাকায় যেকোনো পরিত্যক্ত গাড়ি ব্যবহার উপযোগী করতে পারব।

গতি কি আগের মতোই থাকবে?- একটি পরিত্যক্ত গাড়ি, ব্যাটারির সাহায্যে পরিচালনাসহ তিনটি সুবিধা পেলে গাড়ির গতি কি আগের মতোই থাকবে, এমন প্রশ্ন রাখতেই শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সোলার প্যানেল থেকে তিন ভাগের এক ভাগ ব্যাটারি চার্জ হবে। এছাড়া চার্জ হবে ইঞ্জিনের সাহায্যেও। ইঞ্জিনচালিত অবস্থায় সাধারণ গাড়ির মতোই থাকবে। ব্যাটারিচালিত অবস্থায় ঘণ্টায় ৪০ কিমি চালানো সম্ভব। তবে ব্যাটারির বিশেষ সুবিধা হলো, জ্বালানি ছাড়াও ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো যাবে গাড়িটি।

শিক্ষার্থী ইসমাইল হক ফরিদ বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি ব্যবহার করে যে গাড়িগুলো চলে, সেগুলো প্রচুর পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে। আমাদের গাড়িটি ব্যবহার করলে কিছু ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব।এদিকে পোর্টেবল ডিভাইসের মতো এ প্রযুক্তিটি এখন যেকোনো গাড়ির সঙ্গে ব্যবহার করে হাইব্রিড গাড়িতে রূপান্তর করা সম্ভব জানিয়ে গবেষক ফজলুর রশীদ বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে সফলতাটা অনেক। সামনে একটা বড় প্রডাকশন নেয়ার ইচ্ছা আছে।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এখন জ্বালানি ব্যবহার কীভাবে কমানো যায়, সেদিকে নজর দিচ্ছে। তাই কনভেনশাল গাড়িগুলো ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে। ইউরোপে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। কারণ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের যত জ্বালানি আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাবে। তাই আমরা চেষ্টা করেছি এমন কিছুর, যা জ্বালানি ব্যবহার কমাবে। আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। কারণ এ গাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো জ্বালানি কম খরচ হবে, একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি করবে না। তাছাড়া কিছু ব্যাকআপ সোর্স রাখা হয়েছে।গবেষণাকাজে ব্যাটারি দিয়ে সহযোগিতা করায় গ্যাসটন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তারা এবং বলেন, যদি কোনো অটোমোবাইলস কোম্পানি এ কাজে সহযোগিতা করে, তাহলে বাংলাদেশের অটোমোবাইলস জগতে বেশ পরিবর্তন আনতে পারবে গাড়িটি।

সর্বাধিক পঠিত