বর্ণাঢ্য আয়োজনে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র সপ্তদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র সপ্তদশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎসব গত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ (সোমবার) আশুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে শেষ হয়েছে। দুদিনব্যাপী উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও ‘ফাউন্ডেশন ডে স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশীপ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ড. জোনাথান ওর্থম্যান।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ এম ইসলাম ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুবুল হক মজুমদার, ট্রেজারার হামিদুল হক খান, বাণিজ্য ও অর্থনীতি অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মাসুম ইকবাল, প্রকৌশল অনুষদের ডীন প্রফেসর এম সামছুল আলম, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন প্রফেসর এ এম এম হামিদুর রহমান, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক ও ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ডীন (স্থায়ী ক্যাম্পাস) প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল।
আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল বাস র্যালি, আলোচনা অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ, বনভোজন, পিঠা উৎসব, প্রদর্শনী, সেলিব্রেটি শো, খেলাধূলা, ফান ইভেন্টস, র্যাফেল ড্র । এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সদ্য প্রয়াত সংগীতজ্ঞ ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল এবং তরুণ প্রজন্মের প্রেরণা কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী আইউব বাচ্চুকে উৎসর্গ করে তিরিশ হাজার কণ্ঠে শতাধিক ভায়োলিনের সুরের মূর্ছনায় তাদের হালজয়ী গানগুলো পরিবেশনার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায়।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। আঠারো হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাসহ ৩৫০টি বাসের র্যালি মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে সকাল ৭টায় আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসে এসে মিলিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‘ফাউন্ডেশন ডে স্পিকার’ ড. জোনাথান ওর্থম্যান বলেন, বাংলাদেশ এখন তরুণদের দেশ। এই দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি এখন তরুণ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এসে এই তারুণ্যের শক্তি টের পাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমি জেনেছি, বাংলাদেশের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হচ্ছে এবং বিপুল সংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী। সন্দেহ নেই, এই তরুণরাই দেশটাকে বদলে দেবে।
বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের দেশ হিসেবে পরিচিত হবে উল্লেখ করে জনাথন ওর্টম্যানস বলেন, এতদিন বিশ্বের মানুষ জেনেছে যে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সিলিকন ভ্যালি শহর কিংবা ইসরায়েলের মতো দেশ বিশেষভাবে খ্যাত। তবে খুব শিগরিরই উদ্যোক্তাদের দেশে হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠবে।
তরুণ শিক্ষার্থী ও উদ্যোক্তা হতে আগ্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের কথা ভুলে যাও। ভবিষ্যৎ পুরোপুরি কেউই দেখতে পায় না। বর্তমান সময়টাকে কাজে লাগাও। ভেবে দেখ, টাইটানিক নির্মাণের পর বলা হয়েছিল এটি কোনোদিন ডুববে না, নির্বাচনের সময় বলা হয়েছিল ট্রাম্প কোনোদিন জিতবে না, বব ডিলান সম্পর্কে বলা হয়েছিল তিনি কোনোদিন নোবেল পুরস্কার পাবেন না। কিন্তু এই সবকিছুই মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাই ভবিষ্যৎকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বর্তমানকে গুরুত্ব দাও। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদেরকে সৃজনশীল, বৈশ্বিক, উন্মুক্ত চিন্তার অধিকারী, কৌতূহলী ও যোগাযোগে দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মোঃ সবুর খান বলেন, নিজের ক্যারিয়ারের উন্নয়নের জন্য নিজের দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। তরুণদেরকে তাই ছাত্রাবস্থাতেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে নিজের দক্ষতা তৈরি করতে হবে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে অসংখ্য কাজ করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে তিনি আর্ট অব লিভিং, এমপ্লয়াবিলিটি ৩৬০ ডিগ্রি, ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ ইত্যাদির কথা বলেন।
ড. মো. সবুর খান বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ল্যাপটপ বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। শিক্ষার্থীরা যাতে এই ল্যাপটপ ব্যবহার করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন করতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই তা প্রদান করা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, তোমরা যাতে চাকরি না খুঁজে চাকরি দিতে পারো সেই লক্ষ্যেই এসব ল্যাপটপ তোমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে। ল্যাপটপ কাজে লাগিয়ে তোমরা উদ্যোক্তা হও। এসময় তিনি ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগ, ড্যাফোডিল বিজনেস ইনকিউবেটর, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড, গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ ইউক আয়োজন, ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজ, গ্লোবাল মানি উইক আয়োজন, গেট ইন দ্যা রিং, হাল্ট প্রাইজ, টেডএক্স আয়োজনসহ ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন, যা তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী করছে বলে মন্তব্য করেন ড. মো. সবুর খান।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্র্সিটি আশুলিয়ায় ১৫০ একর জায়গার উপর সর্বাধুনিক সুবিধা সম্বলিত আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছেলে ও মেয়েদের পৃথক আবাসিক সুবিধাসহ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ২০১১ সাল থেকে। এখানে কোলাহলমুক্ত ছায়া সুনিবিড় শান্ত সবুজ পরিবেশে আধূনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত খেলার মাঠ, অডিটরিয়াম, ছেলে ও মেয়েদের পৃথক আবাসিক হল, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, টেনিস কোটসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন রয়েছে।