• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে স্থানীয়দের বিরোধ তুঙ্গে!

প্রকাশ:  ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের কমিটি করা শেষ। সেই কমিটি সভাপতি নির্বাচন করেছে চূড়ান্তভাবে। সে সভাপতি এবং কমিটিকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে। আর এ অনুমোদিত কমিটির প্রথম মিটিং শুরুর পূর্ব মুহূর্তে স্থানীয় একটি পক্ষের বাধার কারণে সভা না করেই ফিরে গেছেন কমিটির সভাপতি। যে কমিটি হয়ে গেছে, তা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃৃতিও হয়ে গেছে, তারপরও কমিটি মেনে না নিয়ে পুনরায় কমিটি হতে হবে এমন দাবি নিয়ে এলাকায় একটি গ্রুপ সোচ্চার। তাই এখন বৈধভাবে গঠিত কমিটি নিয়ে স্থানীয়ভাবে দুটি গ্রুপের বিরোধ তুঙ্গে। এ ঘটনা ফরিদগঞ্জের মনতলা হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। গতকাল শুক্রবার সকালে এ কমিটির পক্ষ-বিপক্ষ দু’টি গ্রুপ প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায়।
    বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর-২০১৮ তারিখে মনতলা হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নির্বাচনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতি হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে উপজেলার ৫নং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার নির্বাচিত হন। সে সভায় পরিচালনা পর্ষদের ১০জন সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ৯ জনের সম্মতিক্রমে মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদারকে সভাপতি নির্বাচিত করে রেজুলেশন করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্যে ৫ নভেম্বর-২০১৮ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লায় প্রেরণ করা হয়। বিদ্যালয় হতে প্রেরিত সেই চিঠির আলোকে বোর্ড গত ১৮ ডিসেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটি অনুমোদন দেয় এবং ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিঃ তারিখে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা বোর্ড। যার স্মারক নং কমিটি/৯৮/চাঁদ/৬৭০। বোর্ড কর্তৃক কমিটি অনুমোদন পাওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে কমিটির প্রথম সভা করতে বিলম্ব হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে বিদ্যালয়ে কমিটির প্রথম সভার আয়োজন করা হয়।
    স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির বেশ কয়েক সদস্য বিদ্যালয়ের দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বিদ্যালয় মাঠ অতিক্রমকালে স্থানীয় একটি গ্রুপ উত্তেজিত হয়ে উঠলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপরেই সভাপতি মিটিংয়ে উপস্থিত না হয়ে নিজেদের লোকজনকে সামলে নিয়ে বিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করেন।
    নতুন কমিটির পক্ষের লোকজনের সূত্রে জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলো পূর্বের কমিটির মেয়াদ। সে কমিটির মেয়াদকালেই বিধিমালা অনুযায়ী নতুন কমিটি করা হয় এবং নতুন কমিটিতে ১৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড অনুমোদন দেয়। বিধিমালা অনুযায়ী বোর্ড অনুমোদনের ১ মাসের মধ্যেই প্রথম সভা করতে হয়। আজ (শুক্রবার) প্রথম সভায় কমিটির সভাপতি বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসলে ক’জন যুবক উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
    নতুন কমিটিকে মানতে নারাজ এমন ক’জন জানান, আজ বিদ্যালয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যালয়ের যদি কমিটি থাকতো, তাহলে বই উৎসবে কোথায় ছিলেন তারা। সারাদেশে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। যা আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সাফল্য। সুতরাং এমন কমিটির লোকজন আমরা চাই না।
    বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য শওকত আলী জানান, শুক্রবার সকালে বিদ্যালয়ের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় আমরা উপস্থিত হই এবং রেজুলেশনে স্বাক্ষর করি। এরপর বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সভাপতি প্রবেশ করলে একটি পক্ষের বেশ ক’জন যুবক তাঁর সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। তারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার নাম উল্লেখ করে নবনির্বাচিত কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির দাবি জানায়। এরপরেই ধাক্কাধাক্কি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
    স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন পাটওয়ারী জানান, আমার তিন ছেলেসহ বেশ ক’জনকে তারা মারধর করে। আমার ছেলে রাশেদ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
    মারামারির ঘটনা অস্বীকার করে জানিবুল হক জুয়েল নামে এক যুবক জানান, এলাকা ও বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের সাথে পরামর্শ করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি (পরিচালনা পর্ষদ) গঠনের আহ্বান জানিয়েছি আমরা। এতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ এলাকাবাসীর মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হবে।
    বিদ্যালয়ের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ম্যানেজিং কমিটি করা হয়েছে। প্রথম সভা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আজ (শুক্রবার) সকালে আমি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে বেশ ক’জন যুবক আমার সাথে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। তারা রাশেদসহ ক’জনকে মারধর করে।
    বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা- ২০০৯ অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ (শুক্রবার) নবগঠিত কমিটির প্রথম সভা ছিলো। সভায় কমিটির অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত হলেও সভাপতি উপস্থিত হতে পারেননি। একপর্যায়ে সভাপতি ফোনে আমাকে জানান, তিনি বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসলে তাকে বেশ ক’জন যুবক বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয়। এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে শান্তির লক্ষ্যে তিনি বিদ্যালয়ে প্রবেশ না করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। যার ফলে তিনি সভায় উপস্থিত হতে পারেননি।
    এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলী রেজা আশ্রাফী মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি। আগামী ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত নবগঠিত কমিটির প্রথম সভা করার সময় রয়েছে। আমরা বিধিমালা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
    ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হোসেন জানান, আমি দায়িত্বরত অবস্থায় ওই এলাকায় (মনতলা) ছিলাম। মারামারির খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে যাই। কিন্তু এমন কোনো পরিস্থিতি বা আলামত আমি দেখিনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। তারও কোনো অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, যদি কারো অভিযোগ থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

সর্বাধিক পঠিত